৭০ দিনে বজ্রাঘাতে ১৭৭ জনের মৃত্যু

জাতীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছর মার্চের ৩১ তারিখ থেকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ৭০ দিনে বজ্রাঘাতে ১৭৭ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে একই কারণে আহত হয়েছেন আরো ৪৭ জন। এর মধ্যে ১২২ জনেরই মৃত্যু হয়েছে কৃষি কাজ করতে গিয়ে, যা মোট মৃত্যুর ৬৯ শতাংশ। তবে চলতি বছর এর আগের দুই মাস অর্থাৎ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বজ্রাঘাতে মৃত্যুর কোন ঘটনার তথ্য জানা যায়নি।


বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১১ জুন) সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম নামের একটি সংগঠনের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সংগঠনটি বলছে, বজ্রাঘাতে হতাহতের এই পরিসংখ্যান করা হয়েছে জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টালের নিউজ ও টেলিভিশনের স্ক্রল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে।


বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৭৭ জনের মধ্যে ১২২ জনই মারা গেছেন কৃষি কাজ করতে গিয়ে। যা মোট মৃত্যুর ৬৯ শতাংশ, এক তৃতীয়াংশেরও বেশি। এছাড়া বজ্রপাত ও কাল বৈশাখী ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মারা গেছেন ১৫ জন, ঘরেই অবস্থানকালে মারা গেছেন ১০ জন, নৌকায় মাছ ধরার সময় ছয় জন, মাঠে গরু আনতে গিয়ে পাঁচ জন, মাঠে খেলা করার সময় তিন জন ও বাড়ির আঙিনায়-উঠানে খেলা করার সময় ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ভ্যান, রিকশা চালানোর সময় দুই জন এবং গাড়ির ভেতরে অবস্থানকালে বজ্রপাতে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্য সাত জনের অবস্থান নিশ্চিত হতে পারেনি সংগঠনটি।

এই চার মাসে বজ্রাঘাতে মৃতদের লিঙ্গভিত্তিক (শিশুসহ) বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এদের মধ্যে পুরুষ মারা গেছে ১৪৯ এবং নারী ২৮ জন। নারী ও পুরুষের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১৩ জন; যাদের ছয়জন ছেলে ও মেয়ে তিন জন।

সংগঠনটি বলছে, চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস, এমনকি মার্চ মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত দেশের কোথাও বজ্রাঘাতে মৃত্যুর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ৩১ মার্চ বজ্রাঘাতে মৃত্যুর ঘটনা শোনা যায়। এর পর থেকে চলতি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মারা যায় ১৭৭ জন। যার মধ্যে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহেই মারা গেছেন ৬৫ জন।

মৃত্যুর পাশাপাশি এ বছর বজ্রাঘাতে আহত হয়েছেন ৪৭ জন। এর মধ্যে ৪০ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী রয়েছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবছর বজ্রপাতের হট স্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা। এই জেলায় চলতি বছরের মে এবং জুন মাসেই মারা গেছে ১৮ জন। এছাড়া, চলতি বছরের ৪ মাসে জামালপুরে ১৪ জন, নেত্রকোণায় ১৩ জন, চাপাইনবাবগঞ্জে ১৬ ও চট্টগ্রামে ১০ জন মারা গেছে।

বজ্রাঘাতে মৃত্যু কমাতে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেছে সংগঠনটি। দাবিগুলো হচ্ছে-
১. বজ্রপাতের ১৫ মিনিট আগেই আবহাওয়া অধিদপ্তর জানতে পারে কোন কোন এলাকায় বজ্রপাত হবে। এই তথ্যকে মোবাইল ফোনে এসএমএসের এলার্টের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ঠ এলাকার মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. ঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যুর চেয়েও মৃত্যুর বজ্রাঘাতে হার অনেক বেশি। এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘোষণা করা হলেও এই দুর্যোগ মোকাবিলায় জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ কম। মানুষের জীবন রক্ষার্থে এই খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
৩. মাঠ, হাওর, বাওর কিংবা ফাঁকা কৃষি কাজের এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। যার উপরে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করতে হবে। যেন বজ্রপাতের সময় কৃষক সেখানে অবস্থান বা আশ্রয় নিতে পারেন।
৪. বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে থান্ডার প্রোটেকশন সিস্টেমের সকল পণ্যে শুল্ক মওকুফ করতে হবে।
৫. সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপনের নির্দেশ দিতে হবে।
৬. বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা বা থান্ডার প্রটেকশন সিস্টেম যুক্ত না থাকলে নতুন কোনও ভবনের নকশা অনুমোদন করা যাবে না।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার, বজ্রাঘাত বিশেষজ্ঞ ড. মুনির আহমেদ, আইডিইবি রিসার্চ ও টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের রিসার্চ ফেলো প্রকৌশলী মো. মনির হোসেন, এসএসটিএএফ সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা, গবেষণা সেলের নির্বাহী প্রধান আব্দুল আলীম, ভাইস প্রেসিডেন্ট এমদাদ হোসাইন মিয়া, নির্বাহী পরিচালক রানা ভূইয়া ও নূরে আলম জিকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।