নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আগামী সোমবার থেকে সারাদেশে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই ঘোষণায় ঢাকা ছাড়তে মানুষের ঢল নেমেছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে। উভয় রুটের ফেরিঘাটগুলোতে হাজার হাজার মানুষকে ফেরি পার হতে দেখা গেছে।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে আজ ১৩টি ফেরি দিয়ে যানবাহন ও সাধারণ মানুষ পারাপার করা হচ্ছে। প্রতিটি ফেরিতে ছিল মানুষের ভিড়। রাস্তায় আগে থেকেই দূরপাল্লার বাস ও স্থানীয় বাসসার্ভিস বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে সাধারণ মানুষ। নানা দুর্ভোগ নিয়ে ছোট ছোট যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়ায় গন্তব্যে ফিরছেন তারা। এ সময় কারো মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি।
শনিবার সকাল থেকেই ফেরিঘাট এলাকায় ছোট ছোট যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ লক্ষ্য করা গেছে। তবে ফেরির সংখ্যা এই লকডাউনে বেশি চলাচল করায় যাত্রীদেরও কিছুটা দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। তবে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যাত্রীরা রাস্তায় যানবাহন বদল করতে করতে অতিরিক্ত কয়েকগুণ অর্থ খরচ করে ঘাট এলাকায় এসেছেন। এতে তাদের ভোগান্তির মাত্রা ছাড়িয়েছে কয়েকগুণ।
সৈয়দ রাসেল নামে শরীয়তপুরগামী এক যাত্রী জানান, খুব কষ্ট করে মিরপুর থেকে শিমুলিয়া ঘাট পর্যন্ত এসেছেন। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের পাহারা। বড় গাড়ি চলে না। তবে ছোট গাড়িগুলো ঠিকই চলছে। ৫০ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা নিচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসির এজিএম ফিরোজ শেখ বলেন, সরকারি কঠোর লকডউনের ঘোষণায় কিছু কিছু মানুষ বাড়ির উদ্দেশে যাচ্ছে। এ কারণে ফেরিগুলোতে ভিড় রয়েছে। তবে কোনো যানবাহন পারাপারে বিধিনিষেধ না থাকায় ফেরি পার করতে তাদের কোনো বাধা নেই।
অন্যদিকে, শনিবার সকাল থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ-রুটে দক্ষিণবঙ্গগামী যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে লোকজন ছুটছে দক্ষিণবঙ্গের উদ্দেশে।
সড়কে যানবাহনের সঙ্কট থাকায় ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন ছোট যানবাহন ও মোটরসাইকেলে তারা যাচ্ছে শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে। নৌপথেও নৌ-যান সঙ্কট দেখা গেছে। লৌহজং ও শ্রীনগরের কয়েকটি স্পট থেকে যাত্রীরা মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা নদী পার হচ্ছে এসব ট্রলারে করে।
এছাড়া বাস বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিটি গাড়িকেই পুলিশের তল্লাশি চৌকি পার হতে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো গাড়িকেই ঢাকায় ঢুকতে বা বের হতে দেয়া হচ্ছে না। করোনা সংক্রমণ রোধে সারাদেশে শাটডাউনের ঘোষণা আসতে পারে- এমন খবরে শিমুলিয়া ফেরিঘটে দক্ষিণবঙ্গগামী মানুষের ঢল নেমেছে।
মুন্সিগঞ্জে টানা ৯ দিনের লকডাউনে পঞ্চম দিনে খানিকটা কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। ঢাকার সাথে জেলাকে বিছিন্ন করতে জেলাজুড়ে ২০টি পয়েন্টে চেকপোষ্ট বসিয়েছে পুলিশ।
এছাড়া অভ্যান্তরীণ রুটে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতেও মাঠে রয়েছে পুলিশ। অনেক স্থানে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় আসা-যাওয়ার কারণটাও বলতে হচ্ছে যাত্রীদের।
বিধিনিষেধ না মানায় ই-প্রসিকিউশনের মাধ্যমে পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলে জরিমানা করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাট সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ বলেন, শিমুলিয়া ঘাটে এখন ১৬টি ফেরি সচল রয়েছে। লকডাউনের নিয়ম অনুযায়ী ফেরিতে শুধু রোগী বহনকারী গাড়ি এবং জরুরি পণ্য পরিবহণের গাড়ি ছাড়া সবকিছু পারাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঘাটে ভিড় জমাচ্ছেন যাত্রীরা।