বাদুড়ঝোলা হয়েও বাড়ি ফেরার চেষ্টা

এইমাত্র জাতীয় জীবন-যাপন

বিশেষ প্রতিবেদক : পারলে বাদুড়ঝোলা হয়েও ফেরি পারাপারের চেষ্টা বাড়ি ফেরাদের। দু-চারটি অ্যাম্বুলেন্স আর অন্য যান ছাড়া পুরোটাই ভর্তি মানুষে। রেলিং, সিঁড়ি, নামাজের স্থান কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। চারটি ঘাট থেকেই ফেরি রওনা হচ্ছে গায়ে গায়ে ঘেঁষে থাকা মানুষের ভিড় নিয়ে। অনেকের মুখেই নেই মাস্ক। কঠোর লকডাউনের আগে এভাবেই বেসামাল হয়ে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন মানুষ। কাজ না থাকাসহ নানা অজুহাত যাত্রীদের।
স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে শিমুলিয়ায় জনস্রোত বন্ধ না হওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বলছে, ঘাটে যারা চলেই আসছে তাদের দ্রুত পার করে দেয়ারই একমাত্র চেষ্টা এখন বলেন মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. সিরাজুল কবির।
প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরত্বের শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি চলছে ১৫টি। লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় শেষ হবে চলমান লকডাউনের মেয়াদ। এরপর সকাল থেকে শুরু হবে কঠোর লকডাউন।
এ সময়ে সারাদেশে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। সব শপিংমল বন্ধ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
এ ছাড়া সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে সরকারি-বেসরকারি অফিস। সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের আনা-নেওয়া করতে হবে।
অন্যদিকে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবারের দোকান খোলা থাকলেও সেখানে বসে খাওয়া যাবে না। খাবার অনলাইনে অর্ডার করা যাবে। এ ছাড়া জরুরি সেবাসমূহ খোলা থাকবে।
বাড়তি ভাড়া, ভোগান্তি পথে পথে : টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসেছেন শওকত আলী নামের এক যাত্রী। কয়েক দফায় ভেঙে ভেঙে মহাখালী পর্যন্ত আসতে তার ৮০০ টাকা খরচ হয়েছে। ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে তিনি ডাক্তার দেখাবেন। সেখানে পৌছাতে আরও ২০০ টাকা খরচ হচ্ছে। সাধারণত এই পথ আসতে তার ৩০০ টাকাও খরচ হত না। এমন ভেঙে ভেঙেই মানুষ পথে চলছে। ঢাকার অভ্যন্তরে যাত্রীরা গন্তব্যে ছুটছেন রিকশা, সিএনজি কিংবা মোটরবাইকে। আর প্রায় সব ক্ষেত্রেই দ্বিগুণ ভাড়া চাওয়া হচ্ছে। সবমিলিয়ে পথ এখন ভোগান্তি, আর্তনাদ আর হাহাকারের।
মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালীতে একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনো একটি সিএনজি বা মাইক্রো এলেই যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি ভাড়ায় যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
মহাখালীতে কথা হয় টাঙ্গাইল থেকে আসা শওকত আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে নিজের চিকিৎসা করাতে ঢাকায় এসেছেন। টাঙ্গাইল থেকে কয়েক দফায় ভেঙে ভেঙে মহাখালী এসেছেন তিনি। মহাখালী পর্যন্ত আসতে তার ৮০০ টাকা খরচ হয়েছে। আর মহাখালী থেকে ধানমন্ডিতে বাইকে যাচ্ছেন ২০০ টাকায়। তিনি আরও বলেন, আজকেই ডাক্তার দেখাতে হবে। তাই কষ্ট করে ঢাকায় এলাম। অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
আড়তপাড়ার বাসিন্দা লিটন মহাখালী থেকে আসাদগেট যাবেন। সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন ২০মিনিট। সিএনজি’তে ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। নিরুপায় হয়ে তিনি দাঁড়িয়ে বিকল্প কিছুর চিন্তা করছিলেন।
মহাখালী থেকে রিকশায় করে গুলিস্তান যাচ্ছিলেন মাহবুব নামের এক যাত্রী। তিনি বলেন, ২০০ টাকা দিয়েও রিকশাওয়ালা রাজি হচ্ছে না। অনেক রিকশা রাস্তায়। কিন্তু তারা যেতে রাজি না। শেষ পর্যন্ত ২২০ টাকায় রাজি করিয়েছি।
মহাখালী থেকে রিকশা করে মিরপুর যাচ্ছেন হাসিব। তিনি বলেন, ভাড়া ২০০ টাকা চাচ্ছে। আরেকজন হলে ১০০ টাকা করে যেতে পারতাম। কিছুটা সাশ্রয় হত তাহলে।
গাজীপুর থেকে এসেছেন হিমেল ঘোষ। খামারবাড়ি একটি কাজে যাচ্ছেন। মহাখালীতে কথা হলে এই যাত্রী জানান, তিনি রিকশায় এসেছেন বেশিরভাগ পথ। সকাল সাড়ে ৭ টায় রওনা দিয়েছি। সাড়ে বারোটায় মহাখালী এসেছে পৌঁছাই। এখানে গাড়ির অপেক্ষা করছি।
তিনি আরও জানান, শিববাড়ি থেকে ৫০ টাকা দিয়ে সিএনজি’তে টঙ্গী স্টেশন রোড, সেখান থেকে রিকশা করে আব্দুল্লাহপুর ৩০ টাকায়, সেখান থেকে পুনরায় রিকশায় করে এয়ারপোর্টে ৮০ টাকায়, এয়ারপোর্ট থেকে খিলক্ষেত ৮০ টাকা, খিলক্ষেত থেকে মহাখালীতে শেয়ার প্রাইভেটে ১০০ টাকায় এসেছে। খামারবাড়ি যেতে ১৫০ টাকা চাচ্ছে, অথচ ভাড়া ৫০ টাকা। রিকশাওয়ালা, সিএনজি চালক— এদের তো ঈদ লেগে গেছে! অর্থাৎ গাজীপুর থেকে মহাখালী আসতেই তার ৩৪০ টাকা খরচ হয়েছে। যেখানে বাসে ভাড়া কোনভাবেই ১০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
এদিকে, মোটরবাইকে যাত্রী তোলা নিষেধ থাকলেও চালক ছাড়াও বেশ কিছু মোটরবাইকে যাত্রী দেখা গেছে। চুক্তিতে মোটরসাইকেল চালক পলাশ বলেন, মহাখালী থেকে বিভিন্ন দিকে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছি। জাহাঙ্গীর গেইটের কাছে পুলিশ ধরে। তাই সেখানে যাত্রীকে নামিয়ে কিছুটা হাঁটার পর সামনে থেকে তুলে নিই। মামলার ভয়ে অন্য সময়ের চেয়ে আমরা বেশি ভাড়া নিচ্ছি।
এছাড়া অনেক যাত্রীক পিকআপে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে তাদের ভাড়া কমই লাগছে। আবার অনেকে নিরুপায় হয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে সোমবার থেকে তিন দিনের বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। আর আগামী বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন চালু হবে। ফলে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ। তবে তিন দিনের বিধিনিষেধকালে অনেক অফিস খোলা রয়েছে। এতে করে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।


বিজ্ঞাপন