খুনের রহস্য উদঘাটন: নেপথ্যে স্ত্রী-সন্তান

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিনিধি : নিজ স্ত্রী ও সন্তান কর্তৃক এমন ন্যাক্কারজনক খুনের ঘটনা ঘটেছে নীলফামারী থানাধীন পৌরসভাস্থ নীলকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় মৃত ব্যক্তি হোসেন আলী (৫৫) এর নিজ বাড়িতে। ঘটনাটি গত ০৯/০৭/২০২১ইং তারিখ সকাল ১০ ঘটিকার সময় মৃত ব্যক্তির নিজ বাড়ী হইতে নীলফামারী থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করেন। ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই খুনের রহস্য উদঘাটন পূর্বক খুনি শনাক্ত ও গ্রেফতার করেছে নীলফামারী থানা পুলিশ।


বিজ্ঞাপন

গত ০৯/০৭/২০২১ ইং তারিখ সকাল অনুমান ০৮.৩০ মিনিটের দিকে ৯৯৯ এর মাধ্যমে ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। পরবর্তীতে মৃত ব্যক্তি হোসেন আলীর ছোট ভাই মোঃ আলাউদ্দিন অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি খুনের মামলা দায়ের করেন।
এদিকে খুনের রহস্য উদঘাটনের জন্য ও হত্যাকাণ্ডের জট খোলার জন্য গোপনে ও প্রকাশ্যে মাঠে নামেন পুলিশ। খুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে প্রাথমিকভাবে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী মোসাম্মৎ সুফিয়া বেগম (৪৫) বড় ছেলে মোঃ মতিয়ার রহমান (২৮) ছোট ছেলে মোঃ রশিদুল ইসলাম (২৬) ও ছোট ছেলের স্ত্রী মোসাম্মৎ স্বপ্না বেগম (২১)থানায় নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী সুফিয়া বেগম উক্ত খুনের দায় স্বীকার করেন এবং বলেন যে তিনি এবং তার বড় ছেলে মতিয়ার রহমান মিলে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এমন খুনের কারণ জানতে চাইলে সুফিয়া বেগম খুনের প্রকৃত ঘটনা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানান যে,সাম্প্রতিক সময়ে সুফিয়া বেগম ও তার স্বামী মৃত হোসেন আলী তাদের জমিসহ টিনসেড পাকা বাড়ি প্রতিবেশী শাহিন আলমের নিকট বিক্রি করে। এতে শাহিন আলম জমিসহ বাড়ি বাবদ দুই তিন কিস্তিতে মোট সাড়ে ৯লক্ষ টাকা পরিশোধ করলেও জমির রেজিস্ট্রি দেননি বাড়িসহ জমির মালিক মৃত হোসেন আলী। ক্রেতাকে বাড়ি যাতে দিতে না হয় ও টাকাটা একাই আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই বড় ছেলের সহায়তায় এমন খুনের ঘটনা ঘটান।ঘটনার দিন রাত্রি অনুমান ২ টা ৩০মিনিটের দিকে পরিকল্পিতভাবে স্বামীর সহিত ঝগড়া শুরু করে সুফিয়া বেগম। ঝগড়ার এক পর্যায়ে মৃত ব্যক্তি ও একটু রেগে যান এই ফাকেই সুফিয়া বেগম হোসেন আলী কে সজোরে ধাক্কা দিলে হোসেন আলী পড়ে যায়। তখন সুফিয়া বেগম তার বড় ছেলে মতিয়ার রহমান কে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে আসে। সুফিয়া বেগম মতিউর রহমানকে বলে তোর বাপের হাত চেপে ধর মতিয়ার রহমান তার মায়ের কথামতো হোসেন আলীর দুই হাত চেপে ধরে এবং যাতে চিৎকার করতে না পারে তার জন্য প্লাস্টিক দিয়ে মুখ ও মাথা চেপে ধরে। এই ফাঁকে সুফিয়া বেগম হাতের কাছে থাকা ছুরি দিয়ে মৃত হোসেন আলীর বাম হাতের কনুইয়ের বরাবর উপর্যুপরি কয়েকটি কোপ দেয়। এতে হোসেন আলীর শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। কিছুক্ষণ এভাবে চিপে ধরে থাকলে হোসেন আলী নিস্তেজ হয়ে যায় একপর্যায়ে মারা যায়। পরে মতিয়ার রহমান তার বাবার হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করলে দেখে তার বাবা মারা গেছে। পরবর্তীতে তার মা সহ বুদ্ধি করে ছোট ভাইকে ডাকে ও আরো অনেক মানুষকে ডাকাডাকি করে।কয়েকজন চলে আসলে তখন মতিয়ার রহমান তার মোবাইল ফোন থেকে ট্রিপল নাইন এ কল করে। পরবর্তীতে পুলিশ আসলে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।মূল ঘটনা ও খুনের রহস্য উদঘাটনের জন্য মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ও দুই ছেলে ও ছেলে বউকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসলে পরবর্তীতে স্ত্রীও বড় ছেলে এই খুনের দায় স্বীকার করেন। রবিবার বিকেলে স্ত্রীও বড় ছেলেকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি জন্য আদালতে পাঠানো হলে তারা বিচারকের কাছে খুনের দায় স্বীকার করেন বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এবং ছোট ছেলেও ছোট ছেলের পুত্রবধূ এই ঘটনার সাথে জড়িত না থাকায় তাদেরকে অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশ দেন বিজ্ঞ আদালত।