বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক : বরগুনা শহরের সড়কে প্রকাশ্যে শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা মামলার অগ্রগতি জানার পর বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সতর্ক হতে বলেছে হাইকোর্ট। অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে আইনি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলেছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চে রিফাত হত্যা মামলার অগ্রগতি তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাসার। আদালতে তিনি জানান, এ মামলার কোনো আসামি দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে পারেনি। এরইমধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত ১২ জন এবং সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মামালার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড নিহত এবং অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলেও আদতালকে জানান তিনি। গত ২৬ মার্চ বরগুনা শহরে প্রকাশ্যে সড়কে স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবক রিফাতকে। ওই ঘটনার ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। রিফাতের স্ত্রীর বর্ণনায় নাম আসা প্রধান তিন হামলাকারীকে কয়েক দিনেও গ্রেফতার করতে না পারার সমালোচনা চলছিল। এরমধ্যেই সোমবার সকালে পুলিশ প্রধান আসামি নয়নের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার খবর দেয়। বিচারক কামরুল কাদের বলেন, আমরা (বিচার বিভাগ) কখনই নির্বাহী বিভাগের যেসব দায়িত্ব পালন করার কথা সেসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। এটা তাদের দায়িত্ব, তাদের রুটিন ওয়ার্ক। যদি সেখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটে তখনই শুধুমাত্র বিচার বিভাগ নির্দেশনা বা হস্তক্ষেপ করে থাকে। তবে আমার এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং পছন্দ করি না। হয়তো প্রয়োজনের খাতিরে অনেক সময় জীবন বাঁচানোর তাগিদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী তা বাহিনী করে থাকে। তবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। আইন যে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে সেটা যেন নিশ্চিত হয়। বিচারক আরও বলেন, একদিনে এই নয়ন বন্ডরা তৈরি হয় না। কেউ না কেউ তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। কেউ না কেউ লালন-পালন করে ক্রিমিনাল বানায়। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাসার সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। ওঁরা একটি প্রতিবেদন মহামান্য হাই কোর্টে দাখিল করেছেন। আমরা মহামান্য আদালতের কাছে সে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছি। এ বিষয়ে সার্বিক অগ্রগতি অবহিত করেছি। এ মামলায় ১২ জন এজাহারনামীয় আসামি আছেন। তার মধ্যে পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছেন। নয়ন বন্ড নামে একজন আসামি ঘটনাস্থলে গুলিতে মারা যান। এ পর্যায়ে আদালত নয়ন বন্ড কিভাবে মারা গেল তা জানতে চায় বলে জানান তিনি। আমরা জানিয়েছি পুলিশের কাছে গোপন সংবাদ ছিল অত্র মামলা আসামিরা সেখানে অবস্থান করছেন। পুলিশ সেখানে গিয়েছে এবং পুলিশের উপরে প্রথমে অতর্কিতভাবে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। তখন পুলিশ নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য পাল্টা গুলি চালালে সেখানে একজন মারা যান। ইতোমধ্যে এলাকাবাসী সেখানে ছুটে আসে। এলাকাবাসীই প্রথম নয়ন বন্ডকে শনাক্ত করে। তারপর তারা জানতে পারেন নিহত ব্যক্তিই নয়ন বন্ড ছিল। সেখানে তার গ্রুপ ০০৭ এর অন্যান্য সদস্যরা ছিল। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা এবং একটি অস্ত্র আইনের মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়গুলি তদন্তাধীন। তদন্তের স্বার্থে মহামান্য হাই কোর্ট সন্তুষ্ট হয়ে কোনো ধরনের রুল জারি করেননি। কিন্তু পরবর্তীতে যদি প্রয়োজন হয় ওঁরা তা জানতে চাইবেন। তদন্ত পরবর্তী যাই আসবে তা মহামান্য আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান এই আইন কর্মকর্তা। গত গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বরগুনায় রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন। সেদিন আদালত রিফাত হত্যা মামলার আসামিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে সতর্কতা জারি করতে বলে। মূল আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় সেদিন আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিল, এমন ঘটনায় পুলিশের আরও তৎপর হওয়া উচিত ছিল। সেদিন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এফ আর এম নাজমুল আহাসান বলেন, দেশের পরিস্থিতি কোথায় গেছে! অনেকে দাঁড়িয়ে দেখলেন। কেউ প্রতিবাদ করলেন না। সমাজ কোথায় যাচ্ছে? আমারা সবাই মর্মাহত। এরপর আদালত মামলার অগ্রগতি শুনতে ৪ জুন দিন ঠিক করে দিয়েছিল।