মুসলিমরা যাদের গোলাম হলো

বিবিধ

মন্তব্য প্রতিবেদন : মুসলিমরা তাদের স্বর্ণযুগের শেষ প্রান্তে এসে যখন দীনের ফতোয়ার জ্ঞানকেই একমাত্র অপরিহার্য জ্ঞান বলে সাব্যস্ত করে জ্ঞানের অন্যান্য শাখাগুলোকে বর্জন করার নীতি নিল, তখন ইউরোপ ধীরে ধীরে জেগে উঠতে শুরু করল।
.
তারা এই উম্মাহর কাছ থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞান যেটুকু শিক্ষা করেছিল তার চর্চা করে বহু উর্দ্ধে উঠে গেল, অনেক প্রগতি করল এবং খ্রীস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগেই দেখা গেল যে ইউরোপীয়ান জাতিগুলি জ্ঞানে-বিজ্ঞানে পৃথিবীতে উচ্চমত স্থান অধিকার করে নিয়েছে এবং যে জাতিকে স্বয়ং আল্লাহ একদা ‘সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি’ (কোর’আন- সুরা আলে ইমরান ১১০) বলে অভিহিত করেছিলেন সেটা জ্ঞানহীন, শক্তিহীন, মুর্খ, নির¶র একটি জনসংখ্যা- যার লেখাপড়া জানা শ্রেণিটি কোর’আন-হাদিসের খুঁটিনাটি ব্যাপারে নিয়ে ঝগড়াঝাটি, মারামারি করছে কিন্তু পৃথিবীর অন্য সব রকম জ্ঞান সম্বন্ধে জ্ঞানহীন, অন্ধ।
.
একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, ইউরোপ এই উম্মাহর কাছ থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা করে নিজেরা যে উন্নতি করল সে উন্নতিটা হল ভারসাম্যহীন, শুধু একটি দিক, দেহের দিক, জড়ের দিক। কারণ ধর্মের সর্বরকম প্রভাব থেকে তারা জাতীয় জীবনকে আলাদা করে ফেলেছিল, এবং ব্যক্তিগত-মানবীয় মূল্যবোধও অত্যন্ত হ্রাস পেয়েছিল।
.
তাই পরবর্তীতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনুসন্ধান ও গবেষণা করে আণবিক বোমা তৈরি করল এবং সেই বোমা মেরে নাগাসাকি ও হিরোশিমার কয়েক ল¶ মেয়ে, পুরুষ, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা ও শিশু হত্যা করতে শান্তির রাজা (Prince of Peace) যিশু খ্রিষ্টের অনুসারীদের বিবেকের কোন দংশন অনুভব হয় নি। আল্লাহর দেয়া জীবন-ব্যবস্থার ভারসাম্য যদি বিসর্জন না দেয়া হত, সেই জীবনব্যবস্থা জাতীয় জীবন থেকে কেটে আলাদা না করা হত তবে আণবিক বোমা তৈরি করা হলেও তারা ঐ ব্যবহার বন্ধ করে দিত।
.
উদাহরণ স্বরূপ- শেষ ইসলামে শুধু সশস্ত্র সত্য বিরোধীদের ছাড়া আর কাউকে হত্যা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। শুধু যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, নিরস্ত্র নর-নারী, শিশু হত্যা নিষিদ্ধ তাই নয়, সত্য বিরোধীদের পশু, এমনকি যে গাছগুলি ফল দেয় তা পর্যন্তÍ কাটা নিষিদ্ধ। ঐ নির্দেশ যিনি এই জীবনব্যবস্থা সম্বন্ধে কিছুও জানেন তাকে বলতে হবে না। প্রতিটি সামরিক অভিযানের আগে মহানবী (দ.) থেকে শুরু করে প্রতিটি নেতা তাদের সেনাপতিদের ঐ কথাগুলো মনে করিয়ে দিতেন।
.
এই উম্মাহর হাতে আণবিক অস্ত্র থাকলেও তা শুধুমাত্র যুদ্ধরত শত্রু ছাড়া আর কারো উপর প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারতো না। এই হচ্ছে জীবনের দুই দিকের নিয়ন্ত্রণ, ভারসাম্য। যে সম্বন্ধে আল্লাহ বলছেন- আমি তোমাদের একটি ভারসাম্যপূর্ণ (কোর’আন- সুরা আল বাকারা ১৪৩) জাতি বানালাম।
.
তা হলে এখন আমরা একটা পরিষ্কার ধারণা পাচ্ছি যে কী ধরনের, কী রকম জাতিগুলি সামরিকভাবে উম্মাহকে পরাজিত করে তাকে কয়েকশ’ বছরের জন্য ঘৃণিত গোলামীতে শৃঙ্খলাবদ্ধ করল। ইউরোপের এই বিভিন্ন জাতিগুলির আইন-কানুন, রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক দণ্ডবিধি ইত্যাদি সব কিছুই ছিল তাদের নিজেদের তৈরি- তাদের মস্তিষ্কপ্রসূত।
.
সুতরাং এক রাষ্ট্রের আইন-কানুনের সাথে অন্য রাষ্ট্রের আইন-কানুন সম্পূর্ণ মিল ছিল না, আজও নেই। আর ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি সবাইর ছিল একটিমাত্র- রাষ্ট্রের স্বার্থ। এবং আজও তাই আছে। ধর্মকে তারা ব্যক্তিজীবনে একঘরে করে দিলেও প্রাচ্যের দেশগুলি জয় করার পর সেখানে খ্রিস্টধর্ম প্রচার কাজে তারা চার্চ, পাদ্রী ও মিশনারীদের উৎসাহ ও সর্বতোভাবে সাহায্য করেছে। ‘ধর্মনিরপেক্ষরা’ (Secular) এ ব্যাপারে ধর্মকে পুরোভাবে রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল প্রাচ্যের এই দেশগুলিতে যথেষ্টসংখ্যক মানুষ খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হলে তাদের প্রভাব আরও ফলপ্রসূ হবে, মুষ্টি আরও দৃঢ় হবে, অধিকার আরও স্থায়ী হবে।
.
জাতীয় জীবনে মানুষের তৈরি জীবনব্যবস্থায় বিশ্বাসী অর্থাৎ শেরকে নিমজ্জিত ইউরোপীয়ান রাষ্ট্রগুলির গোলামে পরিণত হবার পর এই উম্মাহর মধ্যে তারা তাদের ব্যবস্থা প্রবর্তন করল। তারা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রত্যাখ্যান করে মানুষের সার্বভৌমত্বের যে শিক্ষা দিল তা এই হতভাগ্য জাতি গ্রহণ করে তাদের মতোই কার্যত মোশরেক ও কাফের হয়ে গেল। তা সত্ত্বেও তারা মুখে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে এবং ব্যক্তি জীবনে খুব নামায, রোযা, ইত্যাদি করে নিজেদের খুব ভাল মুসলিম মনে করতে থাকলো। বর্তমানে এটাই হলো মুসলিম দাবিদার জনগোষ্ঠীর প্রকৃত অবস্থা।


বিজ্ঞাপন