এইচ এম মেহেদী হাসান
বাবা ছোট্র একটি শব্দ। কিন্তু এর ব্যাপকতা বিশাল। অপরিমাপ যোগ্য। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শব্দ। সবচাইতে মধুর ও ভালোবাসার চির অটুট বন্ধন। সন্তানের সাথে মাতা-পিতার সম্পর্কের কোন স্বার্থ লুকায়িত থাকে না। থাকে শুধুই রক্তের বন্ধন, মায়ার বন্ধন। সন্তানের কষ্টে কাঁদে বাবা-মা’র অন্তর, হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হয় তাঁদের। দুরে কোথায়ও সন্তান বিপদে পড়লে কাক-পক্ষি টের পাওয়ার আগে টের পায় মা-বাবা। এই বাক্যাংশ চিরন্তন সত্য। যুগে যুগে কালে কালে তা প্রতিনিয়ত প্রমাণ হয়েছে। আদিম যুগ, মধ্য যুগ কিংবা আধুনিক বর্তমান যুগ। সব যুগেই এরকম লক্ষকোটি ঘটনা ঘটেছে, যার সত্যতা পাওয়া গেছে শতভাগ।
সুতরাং বাবা-মা’র কাছে তাঁর সন্তান সাতরাজার ধনের চাইতেও বেশি।
সমাজ বিবর্তন কিংবা পুঁজিবাদের ফলে আমরা অনেক সময়ই রাস্তাঘাটে অনেক বাবা-মা’কে দেখি সন্তানসহ খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। কিন্তু সেখানেও দেখা যায় বাবা-মা বৃষ্টিতে ভিজছে ও রোদে পুড়ে নিজেদের আঙ্গার করে ফেলছে তবুও তাঁর সন্তানকে একটু আচর লাগতে দেয় না অর্থাৎ কোন লোভ লালসা কিংবা কোন আর্থিক-বাহ্যিক ও স্বার্থ ছাড়াই ভালোবাসেন তাঁর রক্তের সত্ত্বাকে।
বাবা-মা যাঁদের আছেন হয়তো তারা অনেক সময় পুরোপুরি বুঝে ওঠতে পারেননা কিংবা বেখেয়ালে যথার্থ মর্যাদা দিতে সক্ষম হননা। তবে তার সংখ্যা নগণ্য। আবার যাঁদের বাবা কিংবা মা নেই। তারা বুঝতে পাড়েন বাবা-মা হারানোর ব্যথা কতখানি। তার অভাব কতখানি। পৃথিবীর সব অভাবের কাছে এটা খুবই নগণ্য। বাবা বলে না ডাকতে পারার কষ্ট, পৃথিবীর সব কষ্টকে হার মানায়, আবার যাঁর মা নেই সেই বুঝে মা বলে না ডাকতে পারার কষ্ট কতখানি। পৃথিবীর সব শব্দ মা’ নামক শব্দের কাছে কিছুই না। সুতরাং যাঁদের বাবা-মা বেঁচে নেই, তাদের দুনিয়াতে কিছুই নেই। তাদের মতো হতভাগ্য আর কেউ নেই।
কোভিড-১৯ মহামারীর এই করোনাকালে অনেক হতভাগ্য সন্তান তাঁর বাবা কিংবা মা, আবার উভয়কে অনেকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে এতিম হয়েছেন।
বাবা-মা ছাড়া সন্তানের কাছে কোন উৎসব কিন্ত উৎসব নয়। ঈদ-পার্বণ পুজা সবই তাঁর কাছে বেদনায়ক বৈকি অন্য কিছু নয়। অসুস্থতা, দুর্ঘটনায় কিংবা স্বাভাবিক মৃত্যুও হয়েছে অনেকের বাবা-মা। আকাশের তারা হয়ে যাওয়া সেই বাবা-মা’র নাঁড়িছেড়া সন্তানেরা বুঝেন ঈদ মানে আনন্দ নয়, বেদনাময় একটি দিন।
আমি আমার বাবাকে ছাড়া ইতিমধ্যে-ই দু’টি ঈদ কাটিয়েছি। কি ভীষণ যন্ত্রণাময় তা কিন্তু বুঝানো সম্ভাব নয়। বাবা’র সাথে সন্তানের কত স্মৃতি, কত কথা, কত আলাপ, কত স্বপ্ন সবই এখন অনুপস্থিত। এখনও তেমন বুঝে উঠতে পাড়ছিনা, কিভাবে বাবা চলে গেলেন না ফেরার দেশে! কোন হিসাব মিলাতে পাড়ছিনা।
হয়তো কোনদিন হিসাব মিলাতেও পাড়বোনা ।
দেখতে দেখতে দু’টি বছর পাড় হলো বাবা নেই। মনে হয় লক্ষকোটি বছর বাবা’কে ডাকি না।
বাবাকে দেখি না! তাঁর আদর পাইনা, এই কষ্ট, যন্ত্রণা প্রতিনিয়ত আমাকে খুঁড়েখুঁড়ে খাচ্ছে,
হয়তো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খাবে!
কত মানুষ দেখি! কিন্তু বাবা’র মতো কাউকে দেখি না। কত কন্ঠ শুনি বাবার মতো কন্ঠ শুনি না..! কত মানুষ হাটতে দেখি বাবার মতো কাউকে হাটতে দেখি না….! বাবা ছিলেন একজন পরিশুদ্ধ মানুষ। তিনি সবসময় নিজের কাপড়চোপড় নিজে ধৌত করতেন। অন্যের ধৌতকরণ পছন্দ করতেন না। তবে তিনি নবীজির আদর্শকে ফলো করতেন। নবীজির কায়িক পরিশ্রম সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত জানতেন এবং পালন করতেন।
প্রতিবছর জুনের রোববার বিশ্বব্যাপী বাবা দিবস উদযাপিত হয়। পশ্চিমা বিশ্বে এ ধারণা প্রচলিত হলেও আমাদের দেশেও দিনটি উদযাপিত করা হয়। ১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেরারমন্টে প্রথম ৫ জুলাই দিবসটি পালন করা হয়।
আমার কাছে মনে হয় কোন দিবস কেন্দ্রিক ভালোবাসার মধ্যে বাবা’কে আটকিয়ে রাখা সম্ভাব নয়। রাখাও সমীচীন নয়।
বাবা’র ভালোবাসা অপরিসীম। তারপরেও ঘটনাক্রমে দিবসের মধ্য দিয়ে যাঁরা বাবা’কে সম্মান করেন, ভালোবাসেন সেটা দোষের কিছু নয়। আবার যাঁরা বাবা দিবসে বাবাকে ভালোবাসেন, সম্মান করেন, স্মরণ করেন, শুধুমাত্র তাই নয়, তাঁরাও কিন্তু অন্যসময়ও বাবাকে ভালোবাসেন। সুতরাং যে যেভাবেই দেখি না কেনো…. বাবা মানেই বাবা, এর সঙ্গে কোন কিছুর তুলনা হয় না।
আমাদের কারও কাছে বাবা মানে ঈদ, বাবা মানে পৃথিবী। কত কিছুর সঙ্গেই না আমরা এর তুলনা করে থাকি। সত্যিকারার্থে বাবা-মা মানেইতো আমাতের অস্তিত্ব ।
আবার আমাদের কারও কাছে বাবা শব্দটি বটবৃক্ষ। কারও কাছে মাথার ওপর বিশাল একটা ছাঁদের ন্যায় কিংবা তপ্ত রোদে একটুকরো মেঘ।
সত্যিকারার্থে বাবা’র সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না। এগুলো নিছক কিছু শব্দমাত্র। বাবার তুলনা বাবা নিজেই। এ এক সংজ্ঞাহীন শব্দ। বাবা এক অনুপ্রেরণার গল্প, বাবা এক সাহসের গল্প। বাবার বিশালতা মাপার কোনো যন্ত্র কোনো দিন আবিষ্কৃত হবে না, তা খুব সহজেই অনুমান করা যায়।
সমুদ্রের বিশালতা দেখে আমরা বিমূর্ত হই কিন্তু বাবা মানুষটার বিশালতা যেন এক রহস্য। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কিংবা অভিযোগ কোনো কিছুই তাঁকে দায়িত্ব থেকে পিছপা হতে দেয় না। নীরব জোগানদাতা।
প্রথম স্কুলে যাওয়া, নৌকা চালানো, কলা গাছের ভেলা তৈরি, সাইকেলের প্যাডেল চালানো থেকে সাঁতার শেখা সবকিছুতেই বাবা নামের বন্ধুর ভালোবাসা তখন বুঝতে না পারলেও স্মৃতিগুলো জ্বল জ্বল করে চোখের সামনেই।
রক্তে-মাংসে গড়া মানুষটি দিন দিন সাধারণ থেকে হয়ে ওঠেন অসাধারণ, অনুকরণীয় আদর্শ।
স্থান কিংবা ভাষাভেদে বাবা ডাকটি বদলালেও, বদলায় না রক্তের টান। চিরশ্বাশত এক সম্পর্ক।
কাটে না সময় যখন আর কিছুতে, বন্ধুর টেলিফোনে মন বসে না, জানালার গ্রিলটাতে ঠেকাই মাথা, মনে হয় বাবার মতো কেউ বলে না, আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়….!
হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও শ্রাবন্তী মজুমদারের গাওয়া এই গান বলে দেয়, বাবা এক অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতীক।
বাবা-মা হচ্ছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। পৃথিবীতে একমাত্র মা-বাবাই এমন মহান মানুষ যে, নিজের চেয়ে নিজের সন্তানকে এগিয়ে যেতে দেখতে চায়। যতই দু:খ আসুক না কেন, কোন দু:খের ছায়া পর্যন্ত সন্তানের ওপর পড়তে দেয় না। যদিও বাবার রাগ আমাদের কাছে রাগ বলে মনে হয় কিন্তু বাস্তবে তা হলো বাবা’র অসীম ভালোবাসা।
বাবা ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। অনুশাসনের দ্বিতীয় নামটি কেবল বাবা। বাচ্চাদের আনন্দের জন্যে নিজে বাচ্চা হয়ে যায় বাবা। আপনি – আমি পাল্টাতে পারি কিন্তু বাবার ভালোবাসা কখনই পাল্টায় না। প্রত্যেকে স্বার্থপরতার সাথে সম্পর্ক রাখে তবে বাবা-মা নি:স্বার্থভাবে তাঁদের সন্তানদের সেবা করেন।
যদি আমরা আসল স্বর্গ অর্জন করতে চাই তবে যেনো বাবা-মায়ের পায়ে মাথা নত করি। তাঁদের কথামতো চলি।
বাবার সবচেয়ে বড় গুণ হল পকেট খালি কিন্তু কখনই সন্তানকে হতাশ করে না।
মা’ ও একই গুণের অধিকারী ঘরে সামান্য খাবার আছে সন্তান ও অন্যদের সবাইকে খাইয়ে নিজে না খেয়ে থেকে হাসি মুখে বলেন আমার ক্ষুদা নেই।
বাবা আরেকটি বার ফিরে আসা যায় না..? ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট বাঙালির শোকাবহ মাসে বাবা চলে গেলেন না ফেরার দেশে, কবরের দেশে। বাবা’র কথা প্রতিটিক্ষণ মনে পড়ে, এই দু’টি বছরের মধ্যে একবারও বাবাকে স্বপ্নে পর্যন্ত দেখি নাই। বাবার সঙ্গে ছোট সন্তান হিসেবে আমার সবচাইতে বেশি সখ্যতা ছিল। আমি বাবাকে বন্ধুর মতো ভাবতাম। বাবাও আমাকে বন্ধুর মতো ভাবতেন।
আমার যত কথাছিল সবই বাবাকে বলতাম, কোন সংশয় কিংবা সংকোচ মনে হতো না। বাবা আমাকে তার জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসতেন। বাবার বড় গুণ ছিল তিনি আমাদের তিন ভাই বোনকে সবসময় সত্য-ন্যায়ের কথা বলতেন ও জীবনে তা ধারণ করতে বলতেন। বাবা অনেক পরিশ্রমী ও সৎ সাহসিক ছিলেন। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন সততা,আদর্শ, কমিটমেন্ট যদি ঠিক থাকে তাহলে জীবনে সাফল্য আসবেই। মানুষের ভালোবাসাকে তিনি বেশি প্রাধান্য দিতেন। গরীব-দু:খী মানুষের কষ্ট তাঁকে ভীষণ পীড়া দিতো। কারণ বাবা অনেক কষ্টে মানুষ হয়েছেন। তিনি জীবনে অনেক স্ট্রাগল করে প্রতিষ্ঠিত হন।
আমার দাদাও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান ছিলেন। আর তাই বাবা সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখে আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। প্রতিটি মানুষের পারিবারিক শিক্ষাটা যে কতগুরুত্বপূর্ণ তা আমি ও আমার পরিবার বুঝি। বাবা ছিলেন আমাদের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি বেশি দূর পড়ালেখা করেননি কিন্তু তাঁর মেধা মনন, মনুষ্যত্ব, মূল্যবোধ বর্তমান সমাজে খুবই প্রয়োজন। তিনি প্রচন্ড ধার্মিক ছিলেন, তবে অনেক আধুনিক মনের মানুষ ছিলেন। কোনকিছুর অন্ধভক্ত ছিলেন না। তিনি সবকিছু বুঝে-শুনে মন্তব্য করতেন। অকারণে কিংবা অপ্রয়োজনে কার সাথে খোশগল্প করতে পছন্দ করতেন না, তবে মানুষ হিসেবে অনেক মিশুক ছিলেন। ছোট বড় সবার কাছে তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত ও অমায়িক ব্যবহারের একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। মানুষকে বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়াতে পছন্দ করতেন। তাঁর মনে কোন হিংসা-বিদ্বেষ ছিল না। একটু রাগী ছিলেন, তবে কিছুক্ষণের মধ্যে পানি হয়ে যেতেন।
আমার দাদা-দাদী ও বাবা-মা’র কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে জেনেছি ও সম্যক জ্ঞান লাভ করি। আমার বাবা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে বাড়ি থেকে যখন পাড়ি জমায় তখন তাঁর বন্ধু এন্তাজ সরদারসহ (আমার মামা) যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তাঁর অবিচল আস্থা, বিশ্বাস, ভালোবাসা, সম্মান আমরা পৈত্রিক সূত্রেই পেয়েছি অথার্ৎ বাবা’র কাছ থেকেই আমরা জেনেছি ও শিখেছি।
আমার বাবা আগস্ট মাস আসলেই বলতেন ‘মুজিব ভাইকে স্বাধীনতা বিরোধীচক্ররা কিভাবে যে হত্যা করেছে! তা যদি তোমরা জানতে তাহলে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর রোডের বাড়ি কারবালা প্রান্তর হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করেছেন তা দেখে যেতে পারলাম, এখন মরেও শান্তি পাবো। তিনি আগস্ট মাসে কেমন যেন গম্ভীর থাকতেন, যে মানুষটির মুখে হাসি লেগেই থাকতো, তাঁকে এই সময়ে অনুপস্থিত দেখা যেতো। তিনি আমাদেরকে বলতেন তোমরা আগস্ট মাসে বিয়ে-সাধীর কোনো অনুষ্ঠান করবে না। যতোটা সম্ভাব বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের জন্য দোয়া করবে। যে মানুষটির (বঙ্গবন্ধুর) জন্ম না হলে এ দেশ স্বাধীন হতো না। তাঁর জন্য এই টুকু করতে পাড়বে না…?
বাবা যেইদিন মৃত্যুবরণ করেন সেইদিন আমি সকাল থেকে মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় দৈনিক পত্রিকার জন্য উপ-সম্পাদকীয় লিখতেছিলাম। লেখা শেষ করে পত্রিকা অফিসে মেইল পাঠিয়ে, বাসার কাছে সেলুনে গিয়েছিলাম দাঁড়ি সেটিং করতে। দাঁড়ি সেটিং শেষ করে বাসায় আসবো, সেই সময় ফুফাতো ভাই বাদশাহ (পুলিশ) অবশ্য তাঁকে মিয়া ভাই বলি, তিনি কল করেন মামা জানি কেমন করছেন দ্রুত বাসায় আসো। বাসায় এসে দেখি আমার বাবা আমার জন্য অপেক্ষা করতেছেন। আমি বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করি, বাবা কেমন লাগছে, বাবা ফিস ফিস করে কি যেনো বলছে, পরে খেয়াল করে শুনি, তিনি কালেমা পাঠ করছেন। আমি বাবার কাছে গিয়ে বাবা বলে ডাক দেই, তখন বাবা ইশারা দিয়ে কি যেনো বলতে চাচ্ছে, আর চোখের জল ছেড়ে দিচ্ছে…. বাবা বলে ডাকের শেষ উত্তর ছিল চোখের জল….!
আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না আমার বাবা আমাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছেন। আমি বাবার মুখে পানি দেই, তখন তিনি পানি পান করেন এবং চোখের জল ছেড়ে দিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
বাঙালির শোকাবহ মাসে বাবা চলে গেলেন।
বাবা বঙ্গবন্ধুর প্রচন্ড ভক্ত ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করতেন ও অন্তরে পালন করতেন। বাবা তাঁর বঙ্গবন্ধুর রক্তস্নাত মাসে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন। বাবা আগস্ট মাসেই চলে গেলেন! এটা নিয়ে যখন চিন্তা করি তখন বারবার বাবার সেই কথা মনে পড়ছে, যে আগস্ট মাসে তিনি আনন্দ করতে নিষেধ করতেন, বাঙালির সেই শোকাবহ মাসেই তিনি চলে গেলেন। মহান আল্লাহ তাঁর মনের বাসনা হয়তো পূরণ করেছেন। তিনি হয়তো মনে করতেন, তিনি যদি আগস্ট মাসে না ফেরার দেশে চলে যান, তাহলে তাঁর সন্তানেরা অনন্তত আগস্ট মাসকে বেশি প্রাধান্য দিবে। আগস্ট মাসের মর্যাদা কোনদিন হানি করবে না।
তাইতো তিনি তাঁর সন্তানদের যে শিক্ষা, আদেশ, উপদেশ দিয়ে গেছেন, তা বাস্তবায়ন করতে শোকাবহ আগস্ট মাসে চিরবিদায় নিয়ে নেন ।
বাবা বলে ডাকিনা আজ দু’টি বছর হয়ে গেলো! আর কোনদিন ডাকতে পাড়বো না তাও হয়তো জানি কিন্তু মনকে শান্তনা দিতে পাড়িনা। কত কষ্ট কত ব্যথা বুকে আজও বেঁচে আছি! যাঁর বাবা নাই সেই শুধুমাত্র উপলদ্ধি করছে। বাবার অভাব প্রতিটিক্ষণ, প্রতিটি মুহূর্ত আমাকে পীড়া দেয়। এখন বুঝি তিনি আমার জন্য কি ছিলেন। সূর্যের তাপটা এখন সোজা মাথায় লাগে! বাবা দু’টি বছর হয়ে গেলো তোমার নম্বর থেকে একবারের জন্যও কল আসেনি বাবা….!!!
যে মানুষটি দিনের মধ্যে অনন্তত তিন চারবার মোবাইল করতো। সেই ব্যক্তি দু’টি বছর হলো আমাকে মোবাইল না করে চির শান্তিতে ঘুমিয়ে গেছেন ।
বাবা তোমার অভাব কিছুটা লাগব করতে মা কে আমার কাছে রাখছি। মা কে চেষ্টা করছি ভালো রাখতে। তবে মা তোমার চলে যাওয়া এখনও মেনে নিতে পারেননি।
বাবা তুমি অনন্তকাল ঘুমাও। তোমার কনিষ্ঠ পুত্র তোমাকে আর কোনদিন মোবাইল করতে বলবে না। আদর্শবান মহান পিতা তুমি, তুমি চিরভাস্বর, তুমি ধ্রুবতারা, তুমি বর্তমান সমাজের বিবেক ।
বাবা নিশ্চয়ই তোমাকে মহান রাব্বুল আলামিন ভালো রেখেছেন। তোমার সৎ কর্মই তোমাকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করবে।
বাবা তোমার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তোমার অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট, সহকারী সম্পাদক, দৈনিক সকালের সময়, সাবেক সহ সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ