স্বরূপে ফিরছে রাজধানী

এইমাত্র রাজধানী

বিশেষ প্রতিবেদক : সারা দেশে বুধবার থেকে লকডাউন শিথিল হচ্ছে। তার আগেই রাজধানী ফিরতে শুরু করেছে স্বরূপে। গণপরিবহন ছাড়া সব যানবাহন চলছে। আগের তুলনায় কমেছে পুলিশের চেকপোস্টের সংখ্যাও। মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানী ফিরেছে আগের চেনারূপে। গণপরিবহন ছাড়া সবই চলছে দেদারসে। মাঝে মাঝে দেখা মিলছে যানজটেরও।
জিজ্ঞাসাবাদে সবারই যুক্তি, জরুরি কাজ। কারো বা জীবিকার তাড়না। এক মোটরসাইকেল চালক জানান, জীবিকার জন্য বের হয়েছি। সোমবার আমাকে ফার্মগেটে দুই হাজার টাকার মামলা দেওয়া হয়েছে। এদিকে চেকপোস্টগুলোতে অনেকটা ঢিলেঢালা ভাব।
পুলিশ বলছে, আমাদের রুটিন চেকআপ চলছে। জরুরি কাজে যারা বের হয়েছেন; তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আর যারা কাজ ছাড়া বের হয়েছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পথে নামা অনেকেই বলছেন, মহামারি থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া বিকল্প নেই। কয়েকজন জানান, নিজের জন্য হলেও সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। যদি কেউ না পরে তাহলে জরিমানার আওতায় নিয়ে আসা উচিত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউন শিথিল মানে এই নয় যে, সবাই যে যার মতো চলবেন। বরং বুধবার থেকে গুরুত্বের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। কারণ করোনায় সংক্রমণ এবং মৃত্যু প্রতিদিনই রেকর্ড ছাড়াচ্ছে।
লকডাউন কবে থেকে শিথিল সেই খবরও জানেন না অনেকে। যারা জানেন তারাও বেরিয়েছেন রাস্তায়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ১ থেকে ৭ জুলাই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। পরে তা ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ঈদুল আজহার কারণে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। পরে ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ‘কঠোরতম বিধিনিষেধ’ জারি করে সরকার। সে মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়ে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ‘কঠোরতম বিধিনিষেধের’ মেয়াদ বাড়ায় সরকার। আপাতত লকডাউনের মেয়াদ আর বাড়ছে না। বুধবার থেকে লকডাউন শিথিল হচ্ছে।
ঈদুল আজহার পর টানা ১৯ দিন কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ উঠছে বুধবার থেকে। রোববার দেশব্যাপী লকডাউনের শিথিলতার বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরপর থেকেই পরিবহন খাতের দীর্ঘ স্থবিরতায় ফিরে প্রাণ-চাঞ্চল্যতা।
প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সোমবার থেকেই চলছে নানা প্রস্তুতি। সকালে রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকরা বাস ধোয়ামোছার কাছে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে যন্ত্রপাতি। রং করে বাস চলাচলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
চালক ও হেলপাররা জানান, অনেক দিন ধরে গাড়িগুলো বসে আছে। তাই ইঞ্জিন চালু করে দেখা হচ্ছে ঠিক আছে কি না। এ ছাড়া ময়লা পড়ে যাওয়ায় তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে বাস কাউন্টারগুলো এখনও বন্ধ থাকলেও মঙ্গলবার থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে আগাম টিকিট বিক্রিও অংশ হিসেবে সকাল ৮ থেকে শুরু হয়েছে কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট বিক্রি। সোমবার দেওয়া হচ্ছে ১১, ১২ ও ১৩ তারিখের টিকিট। একই সঙ্গে টিকিট বিক্রি হচ্ছে অনলাইনেও। দীর্ঘদিন পর কাউন্টারে টিকিট কাটতে পেরে খুশি যাত্রীরা। কোনো ঝামেলা ছাড়া টিকিট নিতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন রেল যাত্রীরা।
কমলাপুর রেলস্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম জানান, শতভাগ টিকিট বিক্রি হবে কাউন্টার ও অনলাইনে। সেক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতার অংশ হিসেবে স্টেশন ও ট্রেনে জীবাণুনাশক ছিটানো, যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া ও মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া কমলাপুর যেসব ট্রেন অবস্থান করছে, সেগুলো যথারীতি চলাচল করবে। আর ঢাকার বাইরে যেসব ট্রেন অবস্থান করছে সেগুলো ঢাকায় আসার পর একইভাবে স্বাভাবিক নিয়মেই সব ট্রেন চলবে।
অন্যান্য খাতের মতো বুধবার থেকে খুলবে দোকানপাট ও শপিংমল ও রেস্টুরেন্ট। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ব্যস্ত রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, সরকারের প্রজ্ঞাপন বা নির্দেশনা অনুযায়ি সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েই রেস্টুরেন্ট খোলা হবে। যে কেউ বিধিবিধান পাল করবে না, তার দায়িত্ব অ্যাসোসিয়েশন নেবে না।


বিজ্ঞাপন