নাগালের বাইরে চালের দাম
কাঁচা মরিচে বাড়তি ‘ঝাল’
বিশেষ প্রতিবেদক : রাজধানীর মানিক নগর বিশ্বরোড এলাকার মুদি দোকানি ইউসুফ আলী। শুক্রবার তিনি মোটা চালের কেজি বিক্রি করলেন ৫২ টাকা। তার কাছ থেকে ১০৪ টাকা দিয়ে ২ কেজি মোটা চাল কিনলেন সেলিম উদ্দিন। যিনি একই এলাকায় কখনও দিনমজুরের কাজ করেন, আবার কখনও ভ্যানে মৌসুমী ফল ও সবজি বিক্রি করেন। সেলিম জানালেন, করোনা আসার আগে তিনি চিকন মিনিকেট ছাড়া অন্য কোনও চাল কিনতেন না। করোনা আসার পর তার সব ওলটপালট হয়ে গেছে। এখন তার আগের মতো আয় নেই। সংসারই চলে না। গত দেড় বছর ধরে মোটা চাল খাওয়ার অভ্যাস করলেও এখন এই চাল কিনতেও কষ্ট হয়।
মুদি দোকানি ইউসুফ আলী জানালেন, তিনিও এখন মোটা চাল খাওয়ার অভ্যাস করেছেন। কিন্তু এই মোটা চালের দাম চলে গেছে নাগালের বাইরে।
অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে কাঁচা মরিচের দাম চড়া। ভালো মানের প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। দামের ‘ঝাল’ না কমার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে গাছ মরে যাওয়ায় সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সরবরাহ কমে গেছে, ফলে দামও বেড়েছে।
শীতের আগাম সবজি শিম ও ফুলকপি রাজধানীর বাজারগুলোতে চলে এসেছে। তবে দাম একটু চড়া। শিম কিনতে ক্রেতাদের কেজিতে ১৬০-২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। আর ছোট একটা ফুলকপি কিনতে লাগছে ৩০-৫০ টাকা।
যদিও দেশে বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। সরকারি গুদামে মজুত বেড়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দাম কমতির দিকে। কিন্তু দেশের বাজারের চিত্র এর উল্টো।
বাজারে সরু চালের মধ্যে মূল্যনির্দেশক বা ‘বেঞ্চমার্ক’ হলো মিনিকেট। সুপরিচিত ব্র্যান্ডের সরু মিনিকেট চালের কেজি এখন ৬৮ থেকে ৭০ টাকার আশপাশে। আর সাধারণ মিনিকেট চাল ৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৫ টাকা।
রাজধানীর কাওরান বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম বেশ কিছু দিন ধরে নাগালের বাইরে চলে গেছে। তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে চালের দাম নিয়ে হতাশার কথা শুনছেন গত এক বছর ধরে।
এদিকে বাজারে চালের দাম বাড়ায় ওএমএসের চাল কিনতে ভিড় বাড়ছে মানুষ। কারণ সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে।
ক্রেতা ও বিক্রেতা বলছেন, গত কয়েক মাস ধরেই বাজারে চালের দাম বেশি। ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ৫০ টাকা বা এর আশপাশে বিক্রি হচ্ছে মোটা চাল। আর সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকার বা এর কাছাকাছি।
চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছু দিন আগে ইরি মৌসুম শেষ হয়েছে। সাধারণত, প্রতিবছর এ সময় চালের দাম কম থাকে। এছাড়া বিভিন্ন সময় সরকারি মজুত কমে যাওয়ায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ব্যতিক্রম। তারা বলছেন, কোনও কারণ ছাড়াই এবার চালের দাম বাড়ছে।
এদিকে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৪৭ থেকে ৫২ টাকা। গত বছর এ সময় মোটা চালের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কেজি মোটা চালের দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আর গত এক মাসে এই চালের দাম বেড়েছে ৪ শতাংশের মতো।
শুধু মোটা চাল নয়, সব ধরনের চালের দামই ব্যাপক চড়া। সরকারি হিসাবেই মিনিকেট ও নাজির শাইল চালের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ।
রাজধানীর কাপ্তান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মুবারক হোসেন বলেন, ‘গত শুক্রবারে মোটা চালের দাম ছিল ৫০ টাকা কেজি। এখন সেই চাল বিক্রি করছি ৫২ টাকা। অর্থাৎ, মোটা চালের দাম গত এক সপ্তাহে দুই টাকার মতো বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শুক্রবার বিআর-২৮ চাল ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা এবং মোটা গুটি স্বর্ণা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘ধানের দাম বেশি হওয়ার কারণে চালের দাম বেশি। তার মতে, ধানের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
জানা গেছে, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মধ্যে বাংলাদেশেই এখন চালের দাম সর্বোচ্চ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এএফও) সর্বশেষ প্রতিবেদন এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সব দেশে চালের দাম কমেছে।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন ১৬ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত আছে, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে চালের মজুত রয়েছে ১৩ লাখ টন।
এমন পরিস্থিতিতেও বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে সরকার। সেদ্ধ ও আতপ চাল এই শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পাবে। বাসমতী ও সুগন্ধি চাল আমদানির ক্ষেত্রে আগের শুল্ক বজায় থাকবে। ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ছাড় দেওয়া শুল্ক হারে চাল আমদানির সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা।
কাঁচা মরিচে বাড়তি ‘ঝাল’ : বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে কাঁচা মরিচের দাম চড়া। ভালো মানের প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। দামের ‘ঝাল’ না কমার কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে গাছ মরে যাওয়ায় সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সরবরাহ কমে গেছে, ফলে দামও বেড়েছে।
শীতের আগাম সবজি শিম ও ফুলকপি রাজধানীর বাজারগুলোতে চলে এসেছে। তবে দাম একটু চড়া। শিম কিনতে ক্রেতাদের কেজিতে ১৬০-২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে। আর ছোট একটা ফুলকপি কিনতে লাগছে ৩০-৫০ টাকা।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
গত সপ্তাহে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচের দাম আরও বেড়ে হয়েছে ২৪০ টাকা। ব্যবসায়ীরা এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচা মরিচ ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। গত সপ্তাহে এক পোয়া কাঁচা মরিচ ছিল ৫০ টাকা।
মোস্তফা শেখ নামে এক বিক্রেতা বলেন, এই বছর বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে যাচ্ছে। এতে বেশির ভাগ মরিচ গাছ মরে গেছে। তাই বাজারে আমদানি কম। ফলে দাম বেশি।
সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বরবটি প্রতি কেজি ৭০ টাকা, কচুর মুখী ৪০ টাকা, কাঁচকলা হালি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, লাল গোল আলু ৩০ টাকা, সাদা গোল আলু ২৫, গাজর ৮০ টাকা, টমাটো ১০০, পটল ৪০ টাকা, ঢেড়স ৪০, কাকরোল ৪০, উচ্ছে ৬০, কালো বেগুন ৭০ টাকা, সাদা বেগুন ৬০ টাকা।
এছাড়া কচুর লতি ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৫০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০, চিচিংগা ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ টাকা, রসুন ১২০ টাকা, আদা ১৪০ টাকা এবং কাঁচা মরিচ প্রতিকেজি বিক্রয় হচ্ছে ২৫০ টাকা দরে।
মাংস বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে, খাসির মাংস ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগির বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১৪০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা এবং সোনালী মুরগি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় ইলিশ মাছ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা দরে। যার ওজন প্রায় দেড় কেজি। রুই মাছের কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। মৃগেলের কেজি পাওয়া যাচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। পাবদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা। পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকায়। বেলে মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, ছোট চিংরি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে।