ঢাকার দৈনিক শ্যামবাজার ঝিনাইদহে

অপরাধ

কে এই নামধারী সম্পাদক আলী হাসান


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঝিনাইদহে হঠাৎ করেই দৈনিক শ্যামবাজার নামে একটি পত্রিকা অফিস ও একজন ঢাকা ফেরত সাংবাদিকের উত্থান সেই পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবার “আলী হাসান” নিজেই। কখনো শিল্পপতি, কখনো ইটভাটা ব্যবসায়ী, কখনো জাতীয় পত্রিকার সম্পাদক আবার কখনো আ.লীগের কথিত সহযোগী সংগঠন প্রচার লীগের নেতা। তার হাত নাকি বিশাল লম্বা। তিনি থামিয়ে দিতে পারেন অবৈধ ইটভাটার উপর প্রশাসনের অভিযান। ইচ্ছে করলেই যে কাউকে যেকোনো সময় বানাতে পারেন পত্রিকার উপদেষ্টা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুরে আলী হাসানের জন্ম। চেক জালিয়াতি সহ বিভিন্ন প্রতারণার প্রতারক হিসাবে ওই এলাকায় পরিচিত হয়ে উঠেন তিনি। তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে বলেও জানা গেছে।
নিজ এলাকায় কয়েকটি মামলা হওয়ার পর সেখান থেকে গা ঢাকা দিয়ে কয়েকবছর আগে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাটগোপালপুর এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে আত্মগোপন করে। পরে ঝিনাইদহর স্থানীয় কিছু সাংবাদিকের সহায়তায় সাংবাদিক হয়ে জান আলী হাসান। স্থানীয় সহায়তাকারী সাংবাদিকদের নিয়ে গড়ে তোলে চাঁদাবাজির শক্তিশালী সি-িকেট। গ্রামের নীরিহ মানুষ থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ী কেউ বাদ যায় না তাদের প্রতারণা থেকে। তিনি ঢাকার পুরনো এমন একটা জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক কিভাবে হলেন? দৈনিক শ্যামবাজার নামের বেশ পুরনো একটি পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এর নাম ভাঙিয়ে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঝিনাইদহের থানা, কোর্ট, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
জেলার পেশাদার সাংবাদিকের মাঝে তাকে নিয়ে বিব্রতকর ও অস্বস্তি বিরাজ করছে এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয় বেশ কয়েকজন পেশাদার সংবাদকর্মী।
খোঁজখবর নিয়ে আরও জানা যায়, গত মার্চে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেয়া হয় এই ঘোষণার পরে নিজেকে ইটভাটার মালিক দাবি করে ওই অঞ্চলের বেশকিছু ইটভাটায় অভিযান ঠেকানোর আশ্বাস দিয়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন আলী হাসান। পরবর্তীতে তার প্রতারণা বুঝতে পেরে সেসব ইটভাটার মালিকগণ তাকে মারধর করে এবং হাত পা বেধে আটকে রাখে পরবর্তীতে স্থানীয় সাংবাদিকের মধ্যে বিষয়টা জানাজানি হলে ভাটামালিকদের কিছু টাকা ফেরত দিয়ে মুক্ত হয়ে আসেন।
এছাড়াও আলি হাসান তার একজন ইটভাটার মালিক নিকট আত্মীয়কে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলহাজতে পাঠান, পরে তাকে জামিনে মুক্ত করার প্রয়োজনের কথা বলে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। পরবর্তীতে সেই সাদা স্ট্যাম্পে ইটভাটা তার নামে লিখে দেওয়ার চুক্তিপত্র লিখে ভয়ঙ্কর প্রতারণা করেন শ্বশুরবাড়ির নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে। শুধু কি প্রতারণা? দৈনিক শ্যামবাজার পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পরিচয়ে চোরকোল এলাকার আশরাফুল নামক জনৈক ইউপি সদস্যকে পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
আলী হাসান সম্পর্কে স্থানীয়দের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। কেউ কেউ তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও সন্দিহান। তবে আলী হাসান শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ঝিনাইদহ কেসি কলেজ থেকে অনার্স পাস করেছেন বলে জানান।
সবশেষ গত বুধবার মেহেরপুরের একজন ঠিকাদার মিঠু ও স্ত্রী বিশিষ্ট সমাজসেবক নিলুফার ইয়াসমিন রুপাকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন রকম ভয়-ভীতি দেখান এবং তাদের সম্পদের হিসেব ও উৎস জানতে চান কথিত এই সাংবাদিক তথা পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক পরিচয় দানকারী আলী হাসান। এ সকল কাজের ইন্দন যোগাতে মেহেরপুরের কথিত সংগীত শিল্পী রোকসানা আরা রেক্সোনা জড়িত বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতির নিকট আলী হাসান এর সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্প্রতি কিছুদিন হয় ওনাকে আমি চিনি, হঠাৎ করেই ওই পত্রিকাটির অফিস উদ্বোধন এর জন্য আমাকে নিমন্ত্রণ করেন। তিনি বলেন পত্রিকাটি ঢাকার হলেও অফিস এইখানে, তিনি সবসময় ঝিনাইদা এলাকায় বসবাস করেন। এর থেকে বেশি তার সম্পর্কে আমি জানিনা। আলী হাসানের এসব প্রতারণার সম্পর্কে এবং কীভাবে তিনি দৈনিক শ্যামবাজার পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হলেন সে বিষয়ে জানতে দৈনিক শ্যামবাজার পত্রিকার ঢাকার অফিসের ঠিকানা অনুযায়ী গেলে পত্রিকার কর্তৃপক্ষ কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক খান আজাদ এর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন আলি হাসান সম্পর্কে তিনি তেমন কিছুই জানেন না। তবে গত ছয় থেকে সাত মাস ধরে কোর্টের একটি এফিডেভিটের মাধ্যমে তিনি পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসাবে যুক্ত হয়েছেন বলে তিনি জানেন।
আলী হাসান এর নিকট মুঠোফোনে তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বরং ঔদ্ধত্য কথাবার্তা বলেন প্রতিবেদকের সঙ্গে।