আইপিএল’র জুয়ার টাকা কেন্দ্র করে রুবেল মিয়া খুন

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিনিধি : শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী থানার চাঞ্চল্যকর কিশোর প্রতিবন্ধী রুবেল মিয়া (১৭) হত্যার মামলার রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই জামালপুর। মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী ১। সোহেল (১৯),পিতা- মজিবর, সাং-পাইকুড়া নয়াপাড়া, থানা-ঝিনাইগাতী, জেলা- শেরপুরকে ইং ০৮/০৯/২০২১ তারিখ রাত ১২ঃ৩০ ঘটিকার সময় ঝিনাইগাতী থানাধীন পাইকুড়া নয়াপাড়া গ্রামের তার নিজ বাড়ী হইতে গ্রেফতার করা হয়।


বিজ্ঞাপন

মামলার বাদী মোঃ নূরুল হক (৫০), পিতা- মৃত শরাফত আলী, সাং-কান্দুলী, থানা-ঝিনাইগাতী, জেলা-শেরপুর, ঝিনাইগাতী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন। তার ছেলে রুবেল মিয়া (১৭) পাইকুড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীর ছাত্র এবং প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগী। গত ১৯/০৮/২০২১ তারিখ সকাল ১০.৩০ ঘটিাকায় রুবেল মিয়া খয়েরী কালো রংঙের ০১টি নতুন পাঞ্জাবী ও আ্যশ কালারের ফুল প্যান্ট পরে চামড়ার নতুন জুতা পায়ে দিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়। রাতে যখন তার মোবাইল নম্বর এ ফোন করে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ইতিপূর্বেও সে অনেকবার এমন কাজ করছে বিধায় তেমন একটা গুরুত্ব দেয় নাই।

এরপর ৪/৫ দিনের মধ্যে মোবাইল ফোনে ভিকটিম রুবেলকে না পাওয়ায় বাদীর মনে উদ্বেগ দেখা দিলে বাদীপক্ষ বিভিন্ন জায়গায় খোজাঁখোঁজি করে ঝিনাইগাতী থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করে। যাহা ঝিনাইগাতী থানার জিডি নং-১০৩২, তারিখ-২৫/০৮/২০২১ খ্রিঃ। ইং-০৬/০৯/২০২১ তারিখ সকাল অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় বাদী লোকমুখে শুনতে পায় যে, ঝিনাইগাতী থানাধীন পাইকুড়ার কানি বিলে জনৈক সাহাজ উদ্দিন মাস্টারের অনাবাদি ক্ষেতের কচুরী পানায় ভরপুর থাকা হাটু পানিতে কচুরী পানার ভিতরে একটি মস্তক বিহীন গলিত মৃত দেহ পাওয়া গেছে। বাদী তার স্ত্রী রুপালী খাতুন, ভাতিজা আলমগীর হোসাইন এবং ছোট ভাই আমিরুল ইসলাম সহ আরোও কয়েকজনকে সাথে নিয়া ঘটনাস্থলে এসে দেখেন যে, থানা পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই এর লোকজন মিলে কুচুরী পানার ভিতর থেকে সম্পূর্ন গলিত কঙ্কালসার একটি মৃত দেহ রাস্তার উপর নিয়ে আসে। বাদী তার ছেলের পরিহিত পাঞ্জাবী, ফুল প্যান্ট, বেল্ট, সেন্টু গেঞ্জী দেখে নিশ্চিত হয় যে, মৃত দেহটি তার ছেলেরুবেল মিয়ার। এরপর পুলিশ বাদীর ছেলে রুবেল মিয়া (১৭) এর সুরতাহাল রিপোর্ট তৈরী করে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। বাদীর ছেলে রুবেল মিয়া (১৭) এর লাশ পাওয়ার পর বাদী লোকমুখে জানতে পারে যে, তার ছেলে মোবাইলে আইপিএল বাজি খেলত। বাদী আরোও জানতে পারে যে, পাইকুড়া বাজারেআইপিএল বাজি খেলা ও আড্ডা দেওয়া একটি চক্র গড়ে উঠেছিল। সে প্রতিদিন দীর্ঘ সময় লিটন স্বর্নকার ও হারাধনসহ অন্যান্যদের নিকট টাকা জমা রাখত এবং বাজিতে হেরে গেলে মান্নানের ছেলে ফরিদুল এর নিকট টাকা ধার নিত। বাদীর ধারনা আইপিএল বাজি খেলা নিয়ে বা খেলার টাকার বিরোধের জের ধরে তার ছেলে রুবেল মিয়া (১৭) ইং-১৯/০৮/২০২১ তারিখ ১০.৩০ ঘটিকার পর থেকে যেকোন সময় খুন হয়েছে।

বাদী অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে ঝিনাইগাতী থানায় সূত্রোক্ত মামলা দায়ের করে।বাদীর ছেলে রুবেল মিয়া (১৭) এর লাশ পাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পরপরই পিবিআই, জামালপুর জেলা ০৮/০৯/২০২১খ্রিঃ মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহন করতঃ পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান এর উপর তদন্তভার অর্পন করেন।

পিবিআই প্রধান জনাব বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম(বার),পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই জামালপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব এম.এম. সালাহ উদ্দীন এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) আবুল বাসার মোহাম্মদবদরুজ্জামান মামলাটি তদন্ত করেন।

পিবিআই জামালপুর জেলা কর্তৃক মামলাটি তদন্তকালীন সময়ে পিবিআই জামালপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব এম.এম. সালাহ উদ্দীন এর দিক নির্দেশনায় ও তথ্য প্রযুক্তির সাহায়তায় তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান এর নেতৃত্বে পিবিআইজামালপুরের একটি অভিযানিক টিম মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী ১। । সোহেল (১৯),পিতা- মজিবর, সাং-পাইকুড়া নয়াপাড়া, থানা-ঝিনাইগাতী, জেলা- শেরপুরকে ইং ০৯/০৯/২০২১ তারিখ০০.৩০ ঘটিকার ঝিনাইগাতী থানাধীন পাইকুড়া নয়াপাড়ার তার নিজ বাড়ী হইতে গ্রেফতার করতঃ ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়।গ্রেফতারকৃত আসামী সোহেলকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় যে, অত্র খুনের মূল পরিকল্পনাকারী তার আপন খালাত ভাই সোহরাব (২০) ও সে নিজে। এই ০২ জন অত্র খুনের ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত। ভিকটিম রুবেল মিয়া(১৭), পলাতক আসামী সোহরাব এবং সে একই সাথে চলাফেরা করত এবং মাঝে মাঝে মোবাইলে আইপিএল
এর জুয়া খেলত। পলাতক আসামী সোহরাবের এর কাছে ভিকটিম রুবেল মিয়ার আইপিএল এর জুয়ার পাওনাটাকার বিষয় নিয়া ঘটনার ০২ দিন আগে পাইকুড়া হাই স্কুল মাঠে ঝগড়া হয়। তখন সোহরাব এবং সে রুবেলকে খুন করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে ঘটনার দিন ১৯/০৮/২০২১ ইং তারিখ বিকালঅনুমান ০৪.০০ ঘটিকার দিকে আসামী সোহরাব মিয়া ফোন করে ভিকটিমকে পাইকুড়া বাজারে আসতে বলে পাইকুড়া বাজারে আসার পর সে এবং সোহরাব মিয়া কিছুক্ষন বাজারে ঘোরাফেরা করে।সন্ধ্যার আগে ভিকটিম রুবেল মিয়া পাইকুড়া বাজারে আসার পর তার এবং সোহরাবের সাথে দেখা হয়।

তখন সোহরাব এবং সে ভিকটিম রুবেলকে সাথে নিয়া পাইকুড়া হাই স্কুল মাঠে যায় এবং ০৩ জন মিলে সোহরাবের মোবাইলে লুডু খেলে। এরপর তারা অনেকক্ষন ০৩ জন মিলে বাজারে ঘোরাফেরার পর সোহরাব তাকে ২৫/-টাকা দিয়ে একটি স্পিড কিনে আনতে বলে সে হালিমের দোকান থেকে ২৫ টাকা দিয়ে ০১ টি স্পিড কিনে ভাগাভাগি করে ৩ জনে খেতে খেতে কালীবাড়ী মোড়ের সামনে ব্রিজের কাছে যায়। ব্রিজের কাছে যাওয়ার পর সে এবং সোহরাব ভিকটিম রুবেলকে নিয়া মাছ ধরা বরুং (মাছ ধরার ফাঁদ) তোলার জন্য কানি বিলে যায়। কানি বিলে যাওয়ার পর তারা ক্ষেতের পাশে ০১ টি বাতর (আইল) দাড়ায়ে সে এবং সোহরাব লুঙ্গির কাছা মারে।