নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের ব্যবহার করা ওষুধের সমালোচনা করে হাইকোর্ট বলেছেন, গত বছর ওষুধ ছিটালে ঘরেও তার ঝাঁজ পেতাম। এবার গন্ধও পাওয়া যায় না। জনগণের ধারণা হচ্ছে এবারের ওষুধে কাজ হচ্ছে না।’
বৃহস্পতিবার বিচারপতি তারিকুল হাকিম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এক শুনানিতে এসব কথা বলেন।
গত সোমবার ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়াসহ অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে আদালত সন্তোষ না হওয়ায় দুই সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হন ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন।
আদালত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করেন, ‘এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এত কেন?’
জবাবে প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। ক্লাইমেট সেনসেটিভ ডিজিজ। আর এ বছর আমাদের দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, সর্বোচ্চ আর্দ্রতা ও সর্বোচ্চ উষ্ণতা ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এমনটা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এর ভয়াবহ প্রভাব চলছে। সব দেশেই তো ডেঙ্গু আছে।’
তখন আদালত বলেন, ‘ওষুধ কার্যকর হচ্ছে না কেন? গত বছর ওষুধ ছিটালে ঘরেও তার ঝাঁজ পেতাম। এবার গন্ধও পাওয়া যায় না। জনগণের ধারণা হচ্ছে এবারের ওষুধে কাজ হচ্ছে না। টিভিতে দেখলাম সড়ক মন্ত্রী বললেন এবারের ওষুধ কাজ করছে না। এর আগে তো কেউ স্বীকারই করেনি।’
জবাবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যখনই ওষুধ আনি তখনই সরকারি দুটি ল্যাবে টেস্ট করে পজেটিভ সার্টিফিকেট পেলেই ব্যবহার করি। অর্থাৎ ল্যাব পরীক্ষায় সন্তোষজনক বললে ব্যবহার করি।’
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘যখন দেখলেন ওষুধ কাজ করছে না তখন অন্য জায়গায় দ্রুত টেস্ট করবেন না? এসব কি আমাদের বলে দিতে হবে? হোয়াট ইজ দ্য প্রবলেম? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারাদেশের স্বাস্থ্য দেখবে। এগুলো আমরা দেখতে চাই না। অবস্থা যেরকম যাচ্ছে এটা কেবল সিটি করপোরেশনের উপর ছেড়ে দিলে হবে না। বিষয়টা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেখতে হবে।’
জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখন তৃতীয় ল্যাবে টেস্ট করতে দিয়েছি। কৃষি গবেষণাতে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রাজধানীর মশা মারতে দুই সিটি করপোরেশনকে চারদিন সময় দিয়েছেন। দুই সিটির পক্ষে তাদের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সমন্বিতভাবে ডোজ বাড়িয়ে মশা মারার কাজ করবেন।
দুই সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের আইনজীবীরা জানান, সমন্বিতভাবে মশা মারবে দুই সিটি। এজন্য প্রয়োজনে ডোজ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। আগে যেখানে এক ডেজ দেওয়া হতো সেখানে তা বাড়িয়ে দুই ডোজ করা হবে। যেখানে দুই ডোজ ছিল সেখানে প্রয়োজনে চার ডোজ ওষুধ ছিটানো হবে। আর এজন্য তারা আদালতের কাছে চারদিন সময় চান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতও তাদের সময় দেন। আদালত বলেন, ‘আমরা চাই মশা মরুক, আপনি তিনবার দেন আর পাঁচবার দেন সেইটা আপনাদের বিষয়।’