নিজস্ব প্রতিনিধি : শরীয়তপুরের নড়িয়ায় পদ্মার দুর্গম চরে বিদ্যুতের আলোতে ৪০ হাজার পরিবারের মুখে নির্মল হাসি ফুটেছে। নড়িয়ায় ৭০ বছরের অন্ধকার ঘুচেছে পদ্মার এ দুর্গম চরে।
৪০ হাজার পরিবারের মুখে এখন নির্মল হাসি। জনবসতি গড়ে ওঠার পর ৭০ বছর যাবত অবহেলিত ছিল শরীয়তপুর-২ নির্বাচনী এলাকা নড়িয়া ও সখিপুরের চরাঞ্চলের মানুষ।
পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চল নওপাড়া, চরআত্রা, কাঁচিকাটা, গৌরাঙ্গবাজার ও তারাবুনিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার পরিবারকে বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমের উদ্যোগে নড়িয়া উপজেলার পদ্মার দুর্গম চর নওপাড়া এলাকায় ২০ এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন উপকেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
২০১৯ সালে পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে চার কিলোমিটার সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে এসব চরে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছে। সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে লাইন টেনে ৪০ হাজার দুর্গম চরবাসীকে বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত করা দেশে এই প্রথম উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিমত ব্যক্ত করেছে।
এতে চরাঞ্চলের ৪০ হাজার পরিবারের মুখে নির্মল হাসি দেখা গেছে। শরীয়তপুরের মূল ভূখন্ড থেকে পদ্মা নদীর ওপারে হওয়ায় এসব পরিবার স্বপ্নেও ভাবেনি তারা বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে।
বিদ্যুতের আলোয় এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করবে, শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে প্রতিটি পরিবারের সন্তানেরা।
স্থানীয় লোকজনের অভিমত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শে পানি সম্পদ উপমন্ত্রীর উদ্যোগে সেই অসম্ভব স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ায় দুর্গম চরবাসীর চোখে মুখে এখন আনন্দের ঝলক।
দুর্গম চরে এমন অভাবনীয় সাফল্যে ৪০ হাজার পরিবারের প্রায় ৩ লাখ লোকের মুখে নির্মল হাসি ফুটেছে। এসব অবহেলিত চরবাসী কোনদিন ভাবেনি তাদের ঘর আলোকিত হবে বিদ্যুতের আলোতে।
সেই চরবাসীর স্বপ্ন পূরণ করেছে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী। স্বপ্নের বিদ্যুৎ পেয়ে তারা কেউ কৃষিতে সমৃদ্ধ হওয়ার কথা ভাবছেন।
আবার কেউ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে কল-কারখানার সুযোগ সুবিধা করে দেবে- এমন ভাবনার স্বপ্নে বিভোর হয়ে দিনক্ষণ গুণছেন তারা।
নওপাড়া ইউনিয়নরে বাসিন্দা মোঃ সাদ্দাম হোসেন ও জাকির হোসেন জানান, তারা স্বপ্নেও ভাবেনি বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হবে তাদের বাড়ি ও এলাকার লোকজন।
এমন স্বপ্নপূরণ হওয়ায় সেসহ এলাকার লোকজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
রাইস্যা নামে স্কুলপড়–য়া এক শিক্ষার্থী বিদ্যুতের আলোতে পড়ালেখা করে নিজেকে আলোকিত মানুষ করে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সাগর-নদী পেরিয়ে বিদ্যুৎ আসবে তা কোনদিন কল্পনা করি নাই।
একইভাবে নওপাড়া এলাকার সোহেল ইসলাম জানান, পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে চরের মধ্যে বিদ্যুৎ আসবে কোনদিন কল্পনাও করিনি।
সেই কল্পনা এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধার কারণে এখন তারা কৃষিসহ সব সেক্টরে উন্নতি করতে পারবেন।
“স্বপ্নেও ভাবি নাই যে আমাগো এই দেশে কারেন (বিদ্যুৎ) আইবো। অনেক ভালোলাগে ঘরে এহন কারেনবাতি জ্বলে।’
৭৫ বছর বয়সী চরআত্রার আলেয়া বেগম এভাবেই জানালেন নিজের অনুভূতি।
তাঁর চোখে মুখে উচ্ছ্বসিত আনন্দ। শরীয়তপুরের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নের বাসিন্দা তিনি।
পদ্মা নদীবেষ্টিত জনপদের বাসিন্দা হওয়ায় কখনোই বিদ্যুতের আলোয় জীবন যাপন করা হয়নি তাঁর।
কিন্তু জীবনের শেষার্ধে এসে বিদ্যুতের আলোয় তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিল। শুধু আলেয়াই না, এমন আনন্দে মেতেছে স্থানীয় ৩ লক্ষাধিক মানুষ।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে শরীয়তপুরের বিদ্যুতবিহীন এসব চরে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় নির্মল হাসি ফুটেছে তাদের মুখে।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ সুবিধার কারণে ডিজিটাল সুবিধাসহ সব ধরনের সুবিধার আওতায় আসবে ৪০ হাজার পরিবারের ৩ লক্ষাধিক চরবাসীর।
শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ জুলফিকার রহমান বলেন, পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলসহ শরীয়তপুরে সর্বস্তরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করছে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, বিদ্যুতের কারণে চরের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে।
বিদ্যুৎ সুবিধার কারণে ডিজিটাল সুবিধাসহ সব ধরনের সুবিধার আওতায় আনা হবে চরের মানুষকে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত গ্রাম হবে শহর সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
উপমন্ত্রী বলেন, এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ইতোমধ্যে নড়িয়া ও সখিপুরে বিদ্যুতের সাব-স্টেশন করা হয়েছে। নড়িয়াতে এখন জোনাল অফিস করা হল।