দীর্ঘ ২ বছর পর হত্যা ও ডাকাতি মামলার পলাতক আসামী গ্রেফতার

অপরাধ

নিজস্ব প্রতিনিধি : দীর্ঘ ২ ( দুই) বছর পর মহিষ ছিনতাইপূর্বক মহিষের মালিককে চলন্ত ট্রাক থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করার অন্যতম আসামী মোঃ ইবাদ শেখকে গ্রেফতার করলো পিবিআই, পাবনা।


বিজ্ঞাপন

মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ট্রাকড্রাইভার আসামী মোঃ ইবাদ শেখ (৩২), পিতা- মৃত-ইসমাইল শেখ, সাং- মোবারকপুর থানা-আমিনপুর, জেলা-পাবনাকে গত ২৮ অক্টোবর বিকাল অনুমান সাড়ে ৪ টায় পাবনা জেলার আমিনপুর থানাধীন কাশিনাথপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন

গত ৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখ সকাল অনুমান ৮টা ১৫ মিনিটে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ সংবাদ পায় যে, ঈশ্বরদী থানাধীন মানিকপুর গ্রামস্থ জনৈক মোঃ মন্টু মালিথার মেসার্স এইচকে রাইস মিলের সামনে দাশুরিয়া পাবনা মহাসড়কের উত্তর পাশে একজন অজ্ঞাতনামা পুরুষ ব্যক্তির মৃত দেহ হাত পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে।

উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে ঈশ্বরদী থানার এসআই(নিঃ) দেওয়ান মোঃ আলমগীর হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে একজন অজ্ঞাতনামা বয়স অনুমান ৪০ বছর পুরুষ ব্যক্তির মৃত দেহ পিছন হতে দুই হাত দুই পা একসাথে করে এবং গলায় গামছাসহ চিকন রশি দ্বারা বাধা অবস্থায় দেখতে পায়। অজ্ঞাতনামা মৃত ব্যক্তির ডান হাটুতে জখমসহ মাথা কপাল মুখমন্ডল ঠোট মুখ বিকৃত অবস্থায় ছিল।

এসআই(নিঃ) দেওয়ান মোঃ আলমগীর হোসেন মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত পূর্বক মৃত দেহ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন এবং মৃত ব্যক্তির নাম পরিচয় না পাওয়ায় আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে সৎকারের ব্যবস্থা করেন।

এরপর ঈশ্বরদী থানার এসআই(নিঃ) দেওয়ান মোঃ আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা ঈশ্বরদী থানার মামলা নং-১৭ তারিখ ৮ অক্টোবর ২০১৯, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন।

পরদিন পত্র- পত্রিকা, ও টিভি নিউজ দেখে জনৈক আবু সাঈদ প্রমানিক পিতা-জানমোহাম্মদ গ্রাম-জয়নগর পশ্চিম পাড়া, থানা ও জেলা-নাটোর ঈশ্বরদী থানায় হাজির হয়ে অজ্ঞাতনামা মৃত ব্যক্তির পরিহিত কাপড় চোপড় ও ছবি দেখে নিশ্চিত হন যে, মৃত ব্যক্তিটি তার ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন।

তিনি জানান যে, গত ৬ অক্টোবর তার বাবা জানমোহাম্মদ এবং দুই ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন ও সেলিম রাজশাহী সিটি হাট থেকে দুটি মহিষ ক্রয় করে ট্রাকে করে বাড়ী ফেরার পথে নিখোঁজ হয়।

ইতোমধ্যে তার বাবা জানমোহাম্মদ এবং ভাই সেলিমকে বনপাড়া সিরাজগঞ্জ হাইওয়ে সড়কস্থ আগড়ান বাজারের নিকট রাত্রী বেলায় রাস্তার পাশে হাইওয়ে পুলিশ হাত পা বাধা আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

আবু সাঈদ তার বাবার এবং ভাইয়ের নিকট জানতে পারেন যে, ট্রাকে থাকা ডাকাতরা তাদেরকে হাত পা বেধে মারপিট করে ট্রাক থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে মহিষসহ জাহাঙ্গীরকে নিয়ে চলে যায়।
মামলাটি প্রথমে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ তদন্ত করে পরবর্তীতে পিবিআই পাবনা স্বউদ্দ্যোগে মামলার তদন্ত ভার গ্রহণ করে।

ডিআইজি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নিদের্শনায় পিবিআই পাবনা ইউনিট ইনর্চাজ পুলিশ সুপার মোঃ ফজলে এলাহী এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আসাদউজজামান মামলাটি তদন্ত করেন।

উক্ত মামলার তদন্তভার গ্রহন করে পিবিআই, পাবনা কিছুদিনের মধ্যেই তথ্য-প্রযুক্তি সহায়তায় উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সনাক্ত করে মূল আসামীদেরকে গ্রেফতারের জন্য টিম গঠন করা হয়। মামলার মূল আসামীদেরকে গ্রেফতার করার জন্য বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

তারই অংশ হিসেবে অনেক কৌশল অবলম্বন করে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে তদন্তকালে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার সাথে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের দ্রুত নাম পরিচয় সনাক্ত করে ঘটনার সাথে জড়িত চারজন আসামী যথাক্রমে, রমজান, মিজান, শুকুর এবং আকছেদ কে অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে নাটোর জেলার বড়াই গ্রাম এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোর্পদ করলে তারা সকলেই ঘটনার সাথে নিজেদেরকে জড়িয়ে এবং অন্যান্য সহযোগী পলাতক আসামীদের নাম প্রকাশ করে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আসাদউজজামানের নেতৃত্বে গঠিত একটি চৌকিস টিম পূর্বে গ্রেফতারকৃত আসামীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দীর্ঘ ২ বছর পর ঘটনার সাথে জড়িত অন্যতম পলাতক আসামী ট্রাকড্রাইভার ইবাদ শেখকে গ্রেফতার করে।

আসামী ইবাদ শেখকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় যে ঘটনার দিন আসামী ইবাদ শেখ সহ নাটোর ও পাবনা জেলার আট জন ডাকাত পূর্বপরিকল্পিত ভাবে একত্রিত হয়ে রাজশাহী সিটিহাট হতে মহিষের ভাড়া ঠিক করে ট্রাকে করে মহিষ নাটোরে পৌছে দেওয়ার কথা বলে প্রথমে পথিমধ্যে ট্রাকে থাকা মহিষ মালিক জানমোহাম্মদ ও তার ছেলে সেলিমকে মারপিট করে হাত পা বেধে নাটোর জেলার আগড়ান বাজারের নিকট চলন্ত ট্রাক থেকে ফেলে দেয় এবং পরবর্তীতে জানমোহাম্মদ এর অপর ছেলে ভিকটিম জাহাঙ্গীর হোসেনকে পাবনা জেলার দাশুরিয়া মোড় পার হয়ে মেসার্স এইচকে রাইস মিলের সামনে দাশুরিয়া পাবনা মহাসড়কের উত্তর পাশে মারপিট করে হাত পা মুখ বেধে চলন্ত ট্রাক হতে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে জাহাঙ্গীরকে হত্যা করে দুটি মহিষ ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে পিবিআই, পাবনা এর এসপি মোঃ ফজলে এলাহী বলেন উক্ত আসামীকে গত ২৯ অক্টোবর আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামী মোঃ ইবাদ শেখ (৩২), পিতা- মৃত-ইসমাইল শেখ সাং- মোবারকপুর, থানা- আমিনপুর জেলা- পাবনা নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপরাপর আসামীর নাম উল্লেখ করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। গ্রেফতারকৃত আসামী ইবাদ শেখ এর দেওয়া তথ্য মতে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত ট্রাকটি সনাক্ত করা হয়েছে।