শান্তির বার্তা দেবে ঢাকার বিশ্ব শান্তি সম্মেলন

বিশেষ প্রতিবেদন

‘আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই। সেজন্য আমরা বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করেছি। প্রথমে আমরা সশরীরে এটি করার চিন্তা করলেও ইউরোপ-আমেরিকায় কোভিড বেড়ে যাওয়ায় দুই ফরমেটই রাখা হয়েছে। আমরা অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিকে আনতে চেয়েছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এত লোক আনতে গেলে সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিতে পারব না।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী ‘বিশ্ব শান্তি সম্মেলন ২০২১’ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে আগামী ৪ ডিসেম্বর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ সম্মেলন শুরু হবে।
ট্র্যাক ১.৫ ফরম্যাটে সাজানো এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শান্তি রক্ষায় কাজ করা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কবি, সাহিত্যিক, নোবেল বিজয়ী, শিক্ষাবিদ, মানবাধিকারকর্মী, চলচ্চিত্রকার, থিংক ট্যাংক ও সাবেক রাজনীতিকদের।
সশরীরে ও ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনে শতাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, ৬০ থেকে ৬৫ জনের মতো আমন্ত্রিত অতিথি ঢাকায় সশরীরে এ সম্মেলনে যোগ দেবেন। ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন ৩৪ জনের মতো অতিথি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন এমন অতিথিদের মধ্যে রয়েছেন- জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোহ চক তং, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ভারতের কৈলাশ সত্যার্থীসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
সশরীরে উপস্থিত থাকবেন- শ্রীলঙ্কান ইউনিভার্সিটি অব কলম্বোর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর চান্দ্রিকা এন ওয়াজেয়ারতেœ, ভারতের সৃজনশীল চলচ্চিত্রকার গৌতম ঘোষ, ভারতের সাবেক মন্ত্রী সুরেশ প্রভুসহ আরও অনেকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, শান্তি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সম্মেলনের সমাপনী দিন উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য চারটি প্যানেল ডিসকাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সম্মেলনের শুরুর দিন দুটি এবং সমাপনী দিনে দুটি প্যানেল ডিসকাশন হবে।
আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে কারা থাকছেন জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা এটিকে দুটি ভাগে সাজিয়েছি। সশরীরে ও ভার্চুয়ালি। মূলত, এখানে শান্তি নিয়ে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। যেমন- কবি, সাহিত্যিক, মানবাধিকারকর্মী, প্রফেসর, নোবেল বিজয়ী, থিংক ট্যাংক, সাবেক রাজনীতিবিদসহ আরও অনেকেই আছেন আমন্ত্রিতদের তালিকায়।
সশরীরে ৬০ থেকে ৬৫ জনের মতো অতিথি আসার কথা রয়েছে। তবে বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে ইউরোপে কোভিড বেড়ে যাওয়ায় অনেকে আসতে পারছেন না। ভার্চুয়ালি ৩৪ জনের মতো যুক্ত হবেন বলে আশা করছি। এখানেও একটা সমস্যা হচ্ছে, অনেকে সময় দিতে পারছেন না। এক্ষেত্রে কিছু অতিথিকে ভিডিও বার্তা দেওয়ার অনুরোধ করেছি’ বলেন ওই কর্মকর্তা।
‘বর্তমানে রাজনীতিতে সক্রিয় এমন ব্যক্তিদের খুব একটা দাওয়াত দেওয়া হয়নি’ উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ধর্মীয় ইস্যুতে ভ্যাটিকান থেকে প্রতিনিধি পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে, ওয়ার্ল্ড পিস কাউন্সিল থেকে কিছু ব্যক্তিকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। বান কি মুন, সিঙ্গাপুরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গোহ চক তং, কৈলাশ সত্যার্থীসহ আরও অনেকেই ভার্চুয়ালি থাকতে রাজি হয়েছেন। তালিকায় ইউনিভার্সিটি অব কলম্বোর ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর চান্দ্রিকা এন ওয়াজেয়ারতেœ, গৌতম ঘোষ ও ভারতের সাবেক মন্ত্রী সুরেশ প্রভুসহ আরও অনেকেরই নাম রয়েছে।’
সম্মেলন সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে চাই। সেজন্য আমরা বিশ্ব শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করেছি। প্রথমে আমরা সশরীরে এটি করার চিন্তা করলেও ইউরোপ-আমেরিকায় কোভিড বেড়ে যাওয়ায় দুই ফরমেটই রাখা হয়েছে। আমরা অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিকে আনতে চেয়েছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এত লোক আনতে গেলে সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিতে পারব না।
‘মোটামুটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। কবি, সাহিত্যিক, শান্তি, মানবাধিকার ও গণহত্যা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা আসবেন। যারা সশরীরে আসবেন না তারা ভার্চুয়ালি থাকবেন। ৪ ডিসেম্বর এটি শুরু হবে। উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি। আর সমাপনীতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী।’
সম্মেলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু সারা জীবন শান্তির জন্য কাজ করেছেন। শান্তির প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির ধারক ও বাহক। সেজন্য আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করা হয় ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’। আমরা সম্মেলনে এগুলো তুলে ধরব। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, আমাদের প্রধানমন্ত্রীও শান্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দেশে ও বিদেশে শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করছেন। এই যে শান্তির প্রতি তারও অগাধ বিশ্বাস, এটি আমরা বিশ্বে ছড়িতে দিতে চাই।’
জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রী যে শান্তির সংস্কৃতির ধারণা দিয়েছেন, এটিও আমরা তুলে ধরব। সম্মেলন থেকে আমরা পৃথিবীতে শান্তির বার্তা দিতে চাই। আমরা চাই এই বার্তা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ুক। পৃথিবীতে টেকসই শান্তির জন্য প্রয়োজন একে-অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, সহনশীলতা — এগুলো আমরা তুলে ধরব।
এই সম্মেলন সারা বিশ্বে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে সহযোগিতা করবে। এজন্যই আমাদের এ আয়োজন— বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিশ্ব শান্তিতে আমাদের অনেক অবদান আছে। জাতিসংঘে তথা শান্তি রক্ষা মিশনে আমাদের নারী-পুরুষরা অবদান রাখছেন। বঙ্গবন্ধু শান্তি নিয়ে কাজ করায় তাকে জুলিও কুরি পদক দেওয়া হয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও শান্তি নিয়ে কাজ করছেন। জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতির যে রেজুলেশন এটি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা থেকে এসেছে।
শান্তির অভাবে বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, অন্যায় ও বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশে যেন শান্তির বার্তা ছড়িয়ে পড়ে, সবখানে যেন শান্তি প্রতিষ্ঠা পায়, সেজন্য এই আয়োজন। এটি একটি প্ল্যাটফর্ম হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় যারা কাজ করেন তারা এই সম্মেলনে যোগ দিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন। বিশ্বের সবাই এটি দেখবেন, বিষয়গুলো শেয়ার হবে। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে শান্তির বার্তা— বলেন শাব্বির আহমেদ।
ঢাকায় বিশ্ব শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে ‘সিনেমা ফর পিস’ নামের দুই দিনব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসবের। জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ২৯ ও ৩০ নভেম্বর (সোম ও মঙ্গলবার) এ উৎসব হবে।
উৎসবে চারটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। সেগুলো হলো- ব্যালাড অব আ সোলজার, দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইয়িং, ওয়ার অ্যান্ড পিস ও অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং জাতীয় জাদুঘর ও রেইনবো ফিল্ম সোসাইটির আয়োজনে এসব চলচ্চিত্র দেখতে দর্শকদের কোনো ফি দিতে হবে না।


বিজ্ঞাপন