নিজস্ব প্রতিবেদক : নেই রুট পারমিট, নেই ফিটনেস তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে চলছে কারওয়ান বাজার থেকে হাতিরঝিল হয়ে রামপুরা টিভি সেন্টার পর্যন্ত অবৈধ মাইক্রোবাস সার্ভিস। রুট পরিচালনাকারীরা স্বীকার করেন গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, রমনা, তেজগাঁও ও শিল্পাঞ্চল থানাকে ম্যানেজ করে চলছে এই অবৈধ বাণিজ্য। টাকা পৌঁছে দিলে সবই সম্ভব এই রুটে।
কোনো ধরনের বৈধতা ছাড়াই মাইক্রোবাসে যাত্রী পরিবহন চলছে কারওয়ান বাজার থেকে হাতিরঝিল হয়ে রামপুরা টিভি সেন্টার রুটে। এক একটি মাইক্রবাসে ঠাসাঠাসি করে নেওয়া হয় ১৪ থেকে ১৮ জন যাত্রী।
অবৈধ এই পথে চলাচলকারী যানবাহনের বেশিরভাগেরই কাগজপত্র নেই। অধিকাংশ চালকের নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। অরাজকতা এমন পর্যায়ে যে, চালক জানেনই না গাড়ির ফিটনেস কী? এক চালক বলেন, ফিটনেস মানে বুঝলাম না। ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আমরা বদলি চালাই, আমরা পার্মানেন্ট চালাই না। যারা স্থায়ী চালক তাদের হয়তো লাইসেন্স আছে।
আরেকজন বলেন, আমরা রোডে চালাই। দুই পয়সা নেই। মাহাজনকে দেই আর রোডে দুই-তিনশ’ টাকা, কখনও চার-পাঁচশ’ টাকা খরচ দেই।
তাহলে রাজধানীর বুকে কীভাবে চলছে এই অবৈধ বাণিজ্য? জানতে পরিচয় গোপন রেখে যোগাযোগ করা হয় লাইনম্যানের সঙ্গে। তিনি অবলীলায় অবৈধ বাণিজ্যের গোমর ফাঁস করেন। তিনি বলেন, ডানে-বামে কোনো দিকে কোনো ঝুট-ঝামেলা হলে আমি আছি। কোনো সার্জেন্ট, কোনো অফিসার, কোনো ডিসি-ওসি- পান তো, পান না! গাড়ি সবগুলা চলব। ৮টা কি ৯টা বাজব পাঁচ-ছয় হাজার গাড়ি থেকে কেটে খাতার মধ্যে লেখে… নেই। এখানকার ড্রাইভার সব হলো বাবাখোর, গাঁজাখোর। ভরপুর গাঁজা খেয়ে উরাধুরা চালাবে।
এবার সাক্ষাৎ পাওয়া গেল মুলহোতা মাসুদের। যিনি দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসায় জড়িত। তিনি বলেন, আগ্রহীরা গাড়ি নামাতে চাইলে আগের দিন জানালেই হবে। সব পুলিশ বক্সে গাড়ির নম্বর আর মিষ্টি খাওয়ার টাকা পৌঁছে দিলে কোনো সমস্যা থাকবে না।
তিনি বলেন, একটি গাড়ি ঢুকতে নতুন অবস্থায় প্রায় পাঁচ হাজার টাকা দেই। করোনার জন্য সর্বনি¤œ দুই হাজার টাকা দেই। চারটা বক্সে পাঁচশ’ করে সালামি পাঠাতে হবে। এটা কোনো ঘটনা না। কিন্তু আমি দিলাম, পরে আপনি আর গাড়িটা চালালেন না। তখন টাকাটাই লস। গাড়ির নাম্বারটা উঠে গেল লিস্টে। মাস শেষে তখন বলবে মাসুদ এই গাড়ির টাকাটা কই?
মাসুদ আরও বলেন, রোডে আমি যতক্ষণ থাকব, ততক্ষণ কোনো ঝামেলা হলে আমি দেখব। টুকিটাকি কোনো ঘটনা না। বড় ধরনের কিছু হলে আগেই মেসেজ পেয়ে যাই। আপনার কোনো ঝামেলাই নেই, সব কিছু আমি দেখব।
এ রুটের মাইক্রোবাসগুলোর বেশিরভাগই লক্কড়ঝক্কড়। দরজা বেঁধে রাখা হয় রশি দিয়ে। সিটগুলো নড়বড়ে। অতিরিক্ত যাত্রী তুলতে মূল সিটের সঙ্গে কাঠ ও লোহা দিয়ে বাড়ানো হয়েছে আসন সংখ্যা। আর দ্রুত পরিবহনে উল্টোপথে যাতায়াত চলে হরহামেশা।