আবরার হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ৫

বিশেষ প্রতিবেদন

আবরার হত্যা দেশের সব মানুষকে ব্যথিত করেছে
রায় কার্যকর হলে সন্তুষ্ট হবেন আবরারের বাবা


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদ- এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন আদালত। বুধবার দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মনিরুজ্জামান মনির, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, এএসএম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এসএম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ।
যাবজ্জীবন কারাদ- পাওয়া আসামিরা হলেন মুহতাসিম ফুয়াদ, ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আকাশ হোসেন, অমিত সাহা ও মোয়াজ আবু হুরায়রা।
এদের মধ্যে মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ পলাতক রয়েছেন।
বুধবার দুপুর ১২টায় বিচারক এজলাসে আসেন। এরপরই রায় পড়া শুরু করেন। এর আগে সকাল ১১টা ৪২ মিনিটে এ হত্যা মামলার ২২ আসামিকে আদালতের এজলাসে হাজির করা হয়।
সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া এসব তথ্য জানান।
বুধবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিশেষ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের আদালতের হাজত খানায় রাখা হয়। মামলার ২৫ আসামির মধ্যে তিন জন শুরু থেকে পলাতক রয়েছে। আদালতের হাজত খানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা নৃপন চন্দ্র বিশ্বাস এসব তথ্য জানান।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে আবরার ফাহাদকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তাদের বিরুদ্ধে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ ২২ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে আট জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।


বিজ্ঞাপন

আবরার হত্যা দেশের সব মানুষকে ব্যথিত করেছে : বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যাকা-ের ঘটনা দেশের সব মানুষকে ব্যথিত করেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার আলোচিত এ হত্যা মামলায় ২০ আসামির ফাঁসি ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদ-ের আদেশ দিয়ে রায় ঘোষণার পর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত এমন প্রতিক্রিয়া দেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেন, শিবির সন্দেহে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে আবরারকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংস হত্যাকা-ের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে, তা রোধকল্পে আসামিদের শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।
এদিন মৃত্যুদ-প্রাপ্ত তিন আসামি পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

 

রায় কার্যকর হলে সন্তুষ্ট হবেন আবরারের বাবা : ছেলের হত্যাকা-ের ঘটনায় করা মামলায় ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায়ে ‘আপাত সন্তুষ্টি’ প্রকাশ করেছেন বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ।
২০ আসামির ফাঁসি ও ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়ে বুধবার দুপুরে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালত রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন প্রতিক্রিয়া দেন।
আবরারের বাবা বলেন, আমি আপাতত সন্তুষ্ট। তবে রায়টি যদি উচ্চ আদালতে বহাল থাকে এবং রায়টি কার্যকর হলে আমি সন্তুষ্ট হবো। এছাড়াও পলাতক বাকি তিনজন আসামিকে অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাই।
এদিকে রায়ের পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল বলেন, শিবির সন্দেহে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে আবরারকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা বাংলাদেশের সকল মানুষকে ব্যথিত করেছে। বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংস হত্যাকা-ের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কখনো না ঘটে, তা রোধকল্পে আসামিদের শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।
আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণায় মধ্য দিয়ে দেশ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল।
অপরদিকে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মেদ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন, এ রায়ে আসামিপক্ষ সন্তুষ্ট না। এ মামলায় যারা মাস্টারমাইন্ড ছিল তাদের সামনে আনা হয়নি। অনেক সাক্ষীর বক্তব্য সেভাবে শোনা হয়নি। আমরা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। ওই দিনগত রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।
২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন ও তদন্তে প্রাপ্ত আরও ছয়জন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন ও এজাহার-বহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন। মামলায় মোট ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।