নিজস্ব প্রতিবেদক : মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ‘লালব্রিজ’ বা ‘লালপুল’ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সেই স্মৃতির কথা ভুলতে বসেছে পুরনো-দিনের মানুষে। নতুন প্রজন্মকে জানানোরও নেই কোনো উদ্যোগ। তারা জানে না এই ব্রিজ পাকসেনাদের হত্যাযজ্ঞের নীরব স্বাক্ষী। এ নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের।
স্থানীয় একাধিক মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সাধারণ মানুষদের ধরে এনে কালকিনি উপজেলার মজিদবাড়ি ভুরঘাটার একটি ব্রিজির উপড় গুলি করে অথবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হতো। লাশগুলো ফেলে দেওয়া হতো ব্রিজের নিচে খালের পানিতে। যে কারণে ব্রিজ ও ব্রিজের নিচে খালের পানি সব সময় থাকতো মানুষের রক্তে রঞ্জিত। সেই থেকে ব্রিজটির নাম হয় ‘লালব্রিজ’। তবে কত মানুষ এখানে হত্যা করা হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই উপজেলা প্রশাসন বা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কাছে।
কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী স্বর্ণা আক্তার। স্বর্ণা লালব্রিজ চিনতে পারলেও এই ব্রিজের নামকরণের পেছনের ইতিহাস জানেন না। ‘লালব্রিজ নামকরণ কেন হলো জানি না। তবে ছোটবেলা থেকেই জানি এই নামে ব্রিজ আছে; দেখেছিও অনেকবার কিন্তু কোথাও এ সম্পর্কে কিছু পড়িনি বা শুনিনি। ইতিহাস লেখা থাকলে সহজেই জানতে পারতাম। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ এই ইতিহাস যেন লেখা হয়।’ স্বর্ণার এমন দাবি সমর্থন করলেন স্থানীয় তরুণ সৈয়দ রাকিব।
ইতিহাসে লেখা নেই কেন? এ প্রশ্নের উত্তর নেই স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল জলিলের কাছে। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরেও এখানে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত হয়নি স্মৃতিসৌধ। ফলে নতুন প্রজন্ম জানে না লাল ব্রিজের ইতিহাস। আমরা চাই এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হোক।’
কালকিনি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আ. মালেক হাওলাদার বলেন, উপজেলার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিল মজিদবাড়ি ভুরঘাটা। পাশেই ছিল ব্রিজ। এই এলাকায় হানাদারদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। তারা নিরস্ত্র বাঙালিদের ব্রিজের ওপর এনে হত্যা করতো। যদিও পরে এই ঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধারা হামলা করে। পাকসেনারা তখন পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। দিনটি ছিল ৮ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার পর ব্রিজটি স্থানীয়দের কাছে লালব্রিজ হিসেবে পরিচিত হয়।
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর তঞ্চঙ্গ্যা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রসঙ্গে বলেন, এটি এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। স্মৃতিস্তম্ভে লালব্রিজ নামকরণের ইতিহাসও লিপিবদ্ধ থাকবে।