পঁচাত্তর পরবর্তী ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুসহ স্বাধীনতা রচনাকারীদের কোনও নাম ছিল না

রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মত্যাগ করেছেন, যাঁরা এ দেশের স্বাধীনতা রচনা করেছেন, পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাসে তাঁদের কোনও নাম ছিল না, তাঁদের কোনও মূল্যায়নও ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ঢাদসিক) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।


বিজ্ঞাপন

সোমবার নগরীর ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন পরিচালিত ‘পুরানা মোগলটুলী উচ্চ বিদ্যালয়’ এ বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এই মন্তব্য করেন।


বিজ্ঞাপন

ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “১৯৭৫ সালে ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা ও তার পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হয়। তারপরই জাতির পিতার সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা হারিয়ে গেল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলণ্ঠিত করা হলো, ইতিহাস বিকৃত করা হলো। সে সময় এমন এক ইতিহাস রচনা করা হলো, সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কোনও নাম নাই। যাঁরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে আত্মত্যাগ করেছেন, যাঁরা এ দেশের স্বাধীনতা রচনা করেছেন, তাঁদের কোনও নাম নেই, তাঁদের কোনও মূল্যায়ন নেই। এভাবে চললো ২১ বছর । আমরা আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরে আসলাম। বাঙালি জাতীয়তাবাদে ফিরে আসলাম।”

স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য একটি জাতিকে প্রস্তুত করতে বঙ্গবন্ধুকে গভীর আত্মত্যাগ ও সাধনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে জানিয়ে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “যে কোন কিছু শুরু হয় একটি স্বপ্ন দিয়ে। জাতির পিতার কারাগারে নিষ্পেষিত অবস্থায় স্বপ্ন দেখেছিলেন — একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসন আমলে তিনি প্রায় ১৪ বছর কারা নিষ্পেষিত ছিলেন, কারাবরণ করেছেন। এমনও হয়েছে যে. একটি নির্জন সেলে তাকে রেখে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে আলো-অন্ধাকার কোনও কিছুই দেখতে পাওয়া যায়না। সবসময়ই অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকত। কখন দিন হলো আর কখন রাত হলো তা বুঝার সুযোগ ছিলনা। সুতরাং কত দিন পার হলো কত বছর পার হলো সেটাও অনুধাবন করার সুযোগ ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে চরম অত্যাচার নিপীড়ন সহ্য করে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।

দীর্ঘকাল অন্ধকারে নিমজ্জিত থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই স্বাধীন বাংলাদেশ আবারও আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে মন্তব্য করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “২০০৮ সালে আমরা আবার নুতন করে স্বপ্ন দেখলাম। আমাদেরকে স্বপ্ন দেখালেন জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সে সময় ১১ মাস কারাগারে নিষ্পেষিত ছিলেন। সেই কারাগারে বসেই তিনি রচনা করলেন “দিনবদলের সনদ” – রূপকল্প ২০২১। সেই রূপকল্পে লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হবে। বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি ২০০৮ সালে বলেছিলেন, ২০২১ সালে মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা তার আগেই ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা যা বলেন তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেন উল্লেখ করে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, “জননেত্রী শেখ হাসিনা দিনবদলের সনদে ঘোষণা করেছিলেন যে, ২০২১ সালে বিশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। আজকে হিসেব করে দেখুন, আমরা কত উৎপাদন করতে পেরেছি। বর্তমানে বাংলাদেশের ২২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তিনি রূপকল্পে যা বলেছিলেন, তা শব্দ, অক্ষর, অঙ্ক ও পরিসংখ্যানে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে, সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করেছেন।”

ঢাদসিক মেয়র বছরের প্রথমদিনেই বিনামূল্যে ৩৬ কোটি বই বিতরণ, শিক্ষার উন্নয়নে উপবৃত্তিসহ নানামুখী উদ্যোগ তুলে ধরেন।

পরে তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন এবং শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় নাচ ও গান উপভোগ করেন।

মোগলটুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য জিন্নাতুল বাকিয়া, দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মদ, সচিব আকরামুজ্জামান, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী মো. আবু সাঈদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর শাহিনুর বেগম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক আব্দুর রহমান, ধর্ম সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন, বংশাল থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক এম সিরাজুদ্দিন বাদল, ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়ালি হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদ বিপুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।