নিম হাকিমের জামিন হয়নি অর্থ আত্মসাত মামলায়

অপরাধ আইন ও আদালত

নিজের হাতে চেকে সহি দিয়ে নিজেই চেক হারানোর জিডি করতেন থানায়


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক : টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ না করা, চুক্তি ভঙ্গ করে অন্যত্র পণ্য সরবরাহ করা এবং টাকা ফেরত না দিয়ে প্রতারণার মামলায় কারাগারে থাকা আলোচিত আব্দুল হাকিম মন্ডল ওরফে নিম হাকিমের জামিন না মঞ্জুর করেছে আদালত।

সোমবার সাইফুর রহমানের দায়ের করা মামলায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত (কোর্ট-২) নিম হাকিমের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানা পুলিশ ডিওএইচএস’র বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। রাজধানীর বাইরে তিন জেলায় দায়ের করা অর্থ আত্মসাতের মামলায় নিম হাকিমের বিরুদ্ধে আগে থেকেই গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। এই পরোয়ানা মাথায় নিয়েই তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।

নিম হাকিমের বিরুদ্ধে মৌলভীবাজার জেলায় দায়ের করা (সিআর মামলা নং ৩১৭/২০) মামলায় কাফরুল থানা তাকে আটক করে।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা থানায় প্রতারণার মামলা (যার নম্বর-১১২/২১) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতারণার মামলা (সিআর ৬৪৪/২১) রয়েছে।

একাধিক ভুক্তভোগী জানান, ব্যবসায়ীদের পণ্য দেয়ার কথা বলে, আবার কাউকে পণ্য বিক্রয়ের ডিলারশিপ দিবে বলে মোটা অংকের টাকা নিয়ে চেক দেয়াই ছিল তার প্রতারণার অংশ। এসব চেক দিয়ে আবার নিজেই থানায় গিয়ে হাজির হয়ে ‘চেক হারিয়ে গেছে’ উল্লেখ করে জিডি করতেন।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আব্দুল হাকিম মন্ডল ওরাফে নিম হাকিমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া একাধিক মামলা ও সাধারণ ডাইরির অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছরের ৭ ডিসেম্বর ‘ড. নিম’ নামে একটি ট্রেডমার্ক জালিয়াতির অভিযোগে ডিএমপির কাফরুল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪ ধারায় মামলা দায়ের করেন এ্যালাইঞ্জ এফএমসিজি ট্রেডিং এফজেডইর কান্ট্রি ম্যানজার আলমগীর হোসেন (মামলা নং-১২, তারিখ : ০৭/১২/২০১৯ইং)। মামলাটির তদন্ত চলছে।

এছাড়া অগ্রণী হোল্ডিং গ্রুপের কাছ থেকে ৩৭ লাখ টাকা নিয়ে নিম অর্গানিক লিমিটেডের শেয়ার হস্তান্তর না করার অভিযোগে রাজধানীর রমনা থানায় ওমর ফারুক চৌধুরীর ৪২০/৪০৬ ধারায় দায়ের করা মামলা (মামলা নং-১২, তাং-০৫/০৮/২০১৭), ইন্টারন্যাশনাল কনজুমার প্রডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের বিধান কুমার দেবের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া ও হত্যার হুমকির অভিযোগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে সিআর মামলা (মামলা নং- ১৩৭/২০১৮), টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহের ডিলারশিপ না দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ব্যবসায়ী বাদল চন্দ্র মন্ডলের ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা সিআর মামলা (মামলা নং- ২১৭/২০১৮) চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

তদন্তসূত্রে জানা যায়, এছাড়া আব্দুল হাকিম মন্ডলের বিরুদ্ধে আরো অনেক মামলাসহ রমনা ও শাহাবাগ থানায় দায়ের হওয়া সাধারণ ডাইরির তদন্ত চলছে।

আব্দুল হাকিম মন্ডলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তার প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত কিছু পণ্য বাজারজাত-বিপণন করার বিষয়ে ক্রাউনটাচ গ্লোবাল লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেও সে চুক্তি তিনি ভঙ্গ করেছেন।

নির্ধারিত এসব পণ্য ক্রাউনটাচ গ্লোবাল লিমিটেডের বাইরে কারো কাছে বিক্রয়, বিপণন বা সরবরাহ করা যাবে না বলে চুক্তিতে উল্লেখ ছিল। আর এর বিপরীতে তিনি ক্রাউনটাচ-এর কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা গ্রহণ করেছেন।

টাকা গ্রহণের বিভিন্ন সময়ে তিনি পণ্য দেয়ার সিকিউরিটি হিসেবে ক্রাউনটাস গ্লোবাল লিমিটেডকে মোট ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার চেক দিয়েছিলেন। এ পর্যন্ত তিনি পণ্য দিয়েছেন প্রায় ৫০ লাখ টাকার।

ক্রাউনটাচের একজন কর্মকর্তা আজকের দেশ ডটকম কে জানান, পণ্য সরবরাহের নামে সাড়ে ৩ কোটি টাকা নিয়েও আব্দুল হাকিম মন্ডল তার নিম অর্গানিকের নির্ধারিত পণ্য সরবরাহ না করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এসব পণ্য অন্যত্র সরবরাহ করেছেন, যা চুক্তি অনুযায়ী অপরাধ।

পণ্য না দেয়া টাকা ফেরত না দিয়ে তার সরবরাহ করা পণ্য বাজারজাত না করতেও তিনি হুমকি প্রদান করছেন বলে জানান ক্রাউনটাচের এই কর্মকর্তা।