র‍্যাব কর্তৃক ফতুল্লা এলাকা থেকে আশুলিয়ার চাঞ্চল্যকর বৃষ্টি হত্যা মামলার প্রধান আসামি আসাদুল’কে গ্রেফতার

অন্যান্য এইমাত্র

গত ১৫ জানুয়ারি, দুপুরে আশুলিয়ার কাঠগড়া সরকারবাড়ী এলাকার একটি ভাড়া বাড়ির একটি কক্ষ থেকে বৃষ্টি আক্তার নামের এক নারীর লাশ আশুলিয়া থানা পুলিশ কর্তৃক উদ্ধার করা হয়।


বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় ঐদিন রাতেই আসাদুলসহ অজ্ঞাতনাম কয়েক জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।

উক্ত ঘটনায় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিকস্ মিডিয়াসহ এলাকায় ব্যপক চাঞ্চ্যল্যের সৃষ্টি হয়। যার ফলশ্রুতিতে র‌্যাব-৪ এর একটি গোয়েন্দা দল পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যারের গোয়েন্দা তথ্য ও স্থানীয় সোর্সের মাধ্যমে জানা যায়, উক্ত হত্যার মূল অভিযুক্ত আসাদুল নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লার কোন এক এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রবিবার ৩০ জানুয়ারি, সাড়ে ৬ টা থেকে সোমবার ৩১ জানুয়ারি, সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে উক্ত চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উদঘাটনপূর্বক মূলহত্যাকারী মোঃ আসাদুল ইসলাম (২৬), জেলা-ময়মনসিংহ’কে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামী’কে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ভিকটিম মোছাঃ বৃষ্টি আক্তার (২৩) কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানাধীন এলাকার মেয়ে। গত ২০১২ সালে ভিকটিম বৃষ্টির প্রথম বিবাহ হয়।

প্রথম স্বামীর সংসারে তার ৬ বছর ও ৪ বছরের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে যারা ভিকটিমের বড় বোন আকলিমা’র কাছে থাকত।

গত ২০১৯ সালে ভিকটিমের প্রথম স্বামী ভিকটিমকে না জানিয়ে অন্য এক নারীকে বিবাহ করলে বৃষ্টি আর সংসার করবেনা বলে জানায়। এক পর্যায়ে বৃষ্টির প্রথম স্বামী বৃষ্টিকে তালাক দেয়।

ভিকটিম বৃষ্টির ডিভোর্সের পর সে গাজীপুরে তার বোনের সাথে থেকে গার্মেন্টেসে চাকুরী করা কালে আসামী আসাদুলের সাথে পরিচয় হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামী আসাদুল একজন লোভী এবং ধূর্ত প্রকৃতির হওয়ায় ভিকটিম বৃষ্টির ডিভোর্সের টাকার জন্য কৌশলে তার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে এবং এক পর্যায়ে ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে রাজি করায়। গত ২০২০ সালে ১ লক্ষ টাকা যৌতুক নিয়ে আসামী আসাদ বৃষ্টির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

বিয়ের পূর্বে আসাদুল বৃষ্টির প্রতি অনেক যত্নশীলতা ও সহমর্মিতা দেখাতো, কিন্তু বিয়ের পর পরই তার রূপ পাল্টে যায়। সে বৃষ্টির পূর্বের স্বামীর সাথে ডিভোর্সের পর প্রাপ্ত অর্থ এবং মাসিক বেতনের উপর লোভাতুর দৃষ্টি দেয়। বিয়ের পর তারা গাজীপুরে থাকা অবস্থায় তাদের মাঝে মাঝেই দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হত।

পরে তারা গাজীপুর থেকে আশুলিয়ায় এসে একটি গার্মেন্টেস এ চাকুরী নিয়ে গার্মেন্টসের কাছে বাসা ভাড়া নেয়। তারা দুজনেই একই মোবাইল ব্যবহার করত এবং তাদের বেতনের টাকা সেই মোবাইলেই আসত। বেতনের টাকা আসামী আসাদ নিজে উত্তোলন করত। বৃষ্টির প্রথম পক্ষের দুই সন্তান থাকায় তাকে সন্তানদের খরচ প্রদান করতে হতো ফলে সে আসাদের কাছে বেতনের উত্তোলনকৃত অর্থ চাইত কিন্তু আসাদ এ সংক্রান্ত কোন খরচ দিতে চাইতনা তাছাড়াও বৃষ্টির হাতখরচের জন্যও কোন টাকা দিতনা।

ইতোমধ্যে গ্রেফতারকৃত আসামী আসাদ একাধিক পরনারীতে আসক্ত হলে তাদের সম্পর্কের চুড়ান্ত অবনতি ঘটে। আশুলিয়ায় গত ৩/৪ মাস পূর্বে আসাদের পরকীয়াকে কেন্দ্র করে তারা বাসা পরিবর্তন করে বর্তমান বাসায় আসে।

তথাপিও আসাদ অন্য মেয়েদের সাথে মোবাইল ফোনে, ইমো ভিডিও কল ও ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ রাখত। ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ১৩ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার রাত ১২ টার দিকে বাসায় ফিরলে ভিকটিম বৃষ্টি আসাদের মোবাইলে অন্য নারীর অপ্রতিকর ছবি, কথপোকথন দেখতে পেয়ে রাগ করে আসাদের মোবাইল ভেঙ্গে ফেলে, আসাদও ক্ষিপ্ত হয়ে বৃষ্টির কিস্তির টাকায় কিনা টিভি ভেঙ্গে ফেলে।

তাতেও উগ্র মেজাজ প্রশমিত না হলে আসাদ ভিকটিম বৃষ্টির গলা টিপে ধরে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে উড়না বা অন্য কোন কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধ করে আসাদ ভিকটিমকে হত্যা করে।

আসামীর বক্তব্য অনুযায়ী পরবর্তীতে বৃষ্টির মৃত্যু নিশ্চিতকল্পে তাকে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে হত্যা সুনিশ্চিত করে। তারপর ঘটনাটি অন্যভাবে সাজানোর জন্য সে ঝুলন্ত মৃতদেহটি সিলিং ফ্যান থেকে নামায় এবং তার পরিহিত লুঙ্গী দিয়ে মৃত ভিকটিমের মুখ ঢেকে রাখে।

অতপর আসাদ তার মা ও ফুপুকে ঘটনাটি জানিয়ে ঘরে তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। পরবর্তী দিন অর্থাৎ ১৪ জানুয়ারি, আনুমানিক বিকাল ৪ টায় আসাদের জনৈক ফুপু ভিকটিমের বড় বোন আকলিমা’কে মোবাইলে কল করে বলে বৃষ্টি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে, আসলেই দেখতে পাবেন বলে সে তার মোবাইল বন্ধ করে দেয়।

একই দিন সন্ধ্যার দিকে আসামীর মাও ভিকটিমের পরিবারকে মোবাইলে কল করে বলে ভিকটিম বৃষ্টি মারা গেছে এবং সেও মোবাইল বন্ধ করে দেয়। ভিকটিমের পরিবারের আসামী আসাদ ও বৃষ্টির নতুন বাসার অবস্থান সম্পর্কে ধারণা ছিলনা।

ভিকটিমের ভাই গাজীপুর থেকে সাভারের আশুলিয়ায় এসে সন্ধ্যা থেকে সারারাত অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বৃষ্টির কোন ঠিকানা না পেয়ে আশুলিয়া থানায় যোগাযোগ করে।

ইতোমধ্যে ভিকটিমের পরিবার বৃষ্টির কোন ঠিকানা না পাওয়ার কারণে ১৫ জানুয়ারি ২০২২ তারা কয়েকজন মিলে আসাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে গিয়ে বৃষ্টি ও আসাদের ঠিকানা দিতে আসাদের মাকে চাপ প্রয়োগ করে।

চাপ প্রয়োগের এক পর্যায়ে আসাদের মা তাদের সাভারের আশুলিয়ায় সরকার বাড়ীর ঠিকানা দেয়। এরপর ঐদিন দুপুরের দিকে ভিকটিমের আপন ভাই ও খালাতো ভাই আশুলিয়ায় সরকার বাড়ীতে গিয়ে দরজায় তালা মারা দেখতে পায়। পরে দরজার ফুটো দিয়ে বৃষ্টির পা দেখতে পায়। পরে তালা ভেঙে বৃষ্টির ক্ষতবিক্ষত লাশের গায়ে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। ফরেনসিক রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর মুল রহস্য উদঘাটন হবে। গ্রেফতার কৃত আসামি কে আশুলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।