পিবিআই হবিগঞ্জ কর্তৃক মাধবপুর এর আলোচিত শিশু লিজা হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

অন্যান্য এইমাত্র

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানাধীন আইলাবই গ্রামের আলোচিত শিশু কন্যা তাকমিনা আক্তার লিজা (৯) ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), হবিগঞ্জ।


বিজ্ঞাপন

ঘটনায় প্রকাশ এই যে, অত্র মামলার ভিকটিম তাকমিনা আক্তার লিজা বাদী মোঃ সাগর আলী এবং মোছাঃ সেলিনা বেগম এর মেয়ে।


বিজ্ঞাপন

গত ২১/০৭/২১ তারিখ ঈদ-উল-আযহার দিন সকাল অনুমান সাড়ে ৬ টার সময় সেলিনা বেগম তার মেয়ে তাকমিনা আক্তার লিজাকে পাশের গন্ধব্যপুর গ্রামের একটি দোকান থেকে নুডুলস ও প্রয়োজনীয় কিছু দ্রব্য সামগ্রী কিনে আনার জন্য পাঠায়।

পরবর্তীতে তার মেয়ে নুডুলস নিয়ে বাড়ীতে ফিরে না আসলে আশেপাশের সম্ভাব্য সকল স্থানে ও আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে খোঁজাখুজি করে মেয়ের কোন সন্ধান না পেয়ে সেলিনা বেগম মাধবপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রী করেন।

পরবর্তীতে গত ২৫/০৭/২১ তারিখ বেলা অনুমান ১১ টায় দুই জন মহিলা গ্রামের বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে ভিকটিম লিজার অর্ধ-গলিত মৃতদেহ দেখতে পান এবং ভিকটিমের মা সেলিনা বেগমকে সংবাদ দেন। তাৎক্ষনিক ভাবে সেলিনা বেগম ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে তার মেয়ের অর্ধ-গলিত মৃতদেহ শনাক্ত করেন।

গত ২১/০৭/২১ তারিখ সকাল অনুমান সাড়ে ৬ থেকে ২৫/০৭/২১ তারিখ বেলা অনুমান ১১ টার মধ্যে যে কোন সময় অজ্ঞাতনামা খুনিরা বাদীর নাবালিকা শিশু কন্যা লিজাকে শ্বাসরুদ্ধ করে বা অন্য যেকোন ভাবে হত্যা করেছে মর্মে লিজার বাবা বাদী হয়ে মাধবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

অতিরিক্ত
আইজিপি, পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক দিক নির্দেশনায়, পিবিআই হবিগঞ্জ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোঃ আল মামুন শিকদার এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে, মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শাহনেওয়াজ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে আসামী বাহার উদ্দিন, খাদিজা আক্তার তাজরীন এবং আমেনা খাতুন আঞ্জুদেরকে গ্রেফতার করেন।

মামলাটি তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য প্রমানে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী খাদিজা আক্তার তাজরীন এর ছোট ভাই তাকবীর হাসান (২০) এর সাথে পার্শ্ববর্তী বাড়ীর জনৈক সিরাজের মেয়ে শান্তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক চলাকালীন সময় একদিন সন্ধ্যায় তাদের বাড়ীর পাশে শান্তা এবং তাকবীর দেখা করার সময় ভিকটিম লিজা তাদের দেখে ফেলে।

পরবর্তীতে ভিকটিম উক্ত ঘটনাটি শান্তার মাকে জানায়। শান্তার মা বিষয়টি জানার পর শান্তাকে গালি-গালাজ করে এবং শান্তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে শান্তার সাথে তাকবীরের প্রেমের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে তাকবীর ভিকটিম
লিজার উপর ক্ষুদ্ধ হয় এবং ভিকটিম লিজাকে শায়েস্তা করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২১/০৭/২১ তারিখ সকাল অনুমান ৭ টার সময় ভিকটিম লিজা পাশের গন্ধব্যপুর গ্রামের দোকান থেকে নুডুলস ও জর্দ্দার কৌটা কিনে বাড়ি ফেরার পথে তাকবীর নির্জন জায়গায় ভিকটিমকে মামা ওয়েফার নামক চকলেট এর লোভ দেখিয়ে ভুলিয়ে তাদের বাড়ির মাটির ঘরে নিয়ে যায় এবং সেখানে ভিকটিম লিজাকে গলা টিপে হত্যা করে।

হত্যার পর ভিকটিম লিজার লাশ সে তার পরিবারের সহায়তায় বস্তাবন্দি করে বসতঘর সংলগ্ন গোয়ালঘরে লুকিয়ে রাখে।

হত্যার ৪ দিন পর অর্থ্যাৎ ২৪/০৭/২০২১ তারিখ মৃতদেহ থেকে দূর্গন্ধ বের হলে তাকবীর তার পরিবারের লোকজন ও আসামী বাহার উদ্দিন-এর সহায়তায় রাতের আঁধারে ভিকটিম তাকমিনা আক্তার লিজার
মৃত দেহটি আইলাবই গ্রামের একটি বাঁশ ঝাড়ের ভিতরে ফেলে দেয়।

গ্রেফতারকৃত আসামী বাহার উদ্দিন এবং খাদিজা আক্তার কে আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে।