নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ স্বপ্নের মৃত্যু নেই, স্বপ্ন অবিনশ্বর। মার্টিন লুথার কিং এর বিখ্যাত স্পিচ ”I have a dream’ এর মত করেই স্বপ্ন বুনেছিলেন দৈনিক নওয়াপাড়া পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আমার পিতা মরহুম আসলাম হোসেন।
সেই ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে কয়েক যুগ ধরে নিষ্ঠা, সাহস ও জৌলুসের সাথে সাংবাদিকতায় যার পদচারণা। কাজ করেছেন গ্রামের কাগজ, দৈনিক কল্যাণ, দৈনিক স্ফুলিংগ, দৈনিক তথ্য, দৈনিক বাংলার বাণী সহ নানা জনপ্রিয় পত্রিকায়।
কিন্তু তিনি স্বপ্ন দেখতেন তিনি নিজেই একটি পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করবেন যা সাধারণ জনমানুষের কথা বলবে, হয়ে উঠবে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ নীপীড়িত মানুষের কন্ঠস্বর।
শিল্পশহর ও বন্দরনগরী নওয়াপাড়া থেকে মুদ্রিত এই পত্রিকা যেন তার “নওয়াপাড়া” নামক এই ছোট্ট ভালবাসার শহরের নামটিও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেয় সেটিও তার স্বপ্ন ও উদ্দেশ্য ছিল। সেই লালিত স্বপ্নেরই রুপ ‘দৈনিক নওয়াপাড়া- আজ যার ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও নবম বছরে পদার্পণ।
২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা শুরু করা দক্ষিণবংগের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও বহুলভাবে পঠিত এই পত্রিকার রূপকার আসলাম হোসেন আজ হয়ত নেই, কিন্তু তার স্বপ্নের শিখা আজও প্রজ্জ্বলিত আছে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে, জনগণের মনের কথা ও প্রাণের দাবি প্রকাশে, সমাজের নানান অসংগতি প্রকাশে জন্মলগ্ন থেকেই দৈনিক নওয়াপাড়া সোচ্চার ছিল।
নানান চোখরাংগানি, হুমকি, মামলা মোকাদ্দমা ও কন্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়েই জৌলুসের সাথেই এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এই অবস্থানে পত্রিকাকে দাড় করিয়েছিলেন আমার পিতা ও তার সহযোদ্ধারা।
তবে একটি পরিবারের বটবৃক্ষ ও নৌকার মাঝি যখন হঠাত হারিয়ে যায় তখন সেই চলার পথে ছেদ পড়ে, খেয় হারিয়ে ফেলে সাবলীল সেই পদচারণা। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে বাবার রেখে যাওয়া সহযোদ্ধারাই তার এই সৃষ্টিকে পরম মমতা ও আদর দিয়ে আগলে নিয়ে সেই চলার পথে ছেদ পড়তে দেননি।
এই দীর্ঘ এক বছরে কত অন্ধকার সময় এসেছে দৈনিক নওয়াপাড়ার স্বপ্নের বাতিঘরে, কত নিস্তব্ধ অসহ্যকর রাত এসেছে তা নিজ চোখে দেখেছি। কিন্তু স্বপ্নের বাতিঘরে আলো নেভেনি। নিভু নিভু আলো আরো স্বশক্তিতে প্রজ্জ্বলিত হয়েছে।
ঠিক যেমন অন্ধকার একটি অন্ধকার টানেল থেকে বের হয়ে আসার সময় আলোতে চোখ ধাধিয়ে যায়- সেই আলোর পিছনেই আমাদের এই ছোট্ট পরিবার ছুটেছি। অবাক হয়ে দেখেছি এখনো পাঠকের হৃদয়ে কতটা মমতা নিয়ে আছে দৈনিক নওয়াপাড়া, কতটা অকুন্ঠ সমর্থন রয়েছে সাধারণ মানুষের।
পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর কত অসহায় পরিবার আশার আলো ফিরে পেয়েছে, কত অসহায় ছাত্রছাত্রী পেয়েছে সহযোগিতা, কত অন্ধ ব্যক্তি ফিরে পেয়েছে চোখের আলো, কত এলাকার চরম জনদুর্ভোগের সমাধান হয়েছে- এসবকিছুই আমাদের চিত্তে আনন্দ দেয়, আরো অধিক পরিশ্রম করতে উতসাহিত করে।
আজও মানুষ আশা করে কোন অসংগতি, সাধারণ মানুষের দাবিদাওয়া যেন আমরা নির্ভীকতার সাথেই আমরা প্রচার করি- এই আকাংক্ষা, ভালবাসা ও সমর্থনই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে আমি বিশ্বাস করি।
প্রথমেই আমি অন্তরের গহীন হতে ধন্যবাদ দিতে চাই পত্রিকার পাঠকদের। পত্রিকার পাঠকেরাই হচ্ছে প্রাণভোমরা। তাদের চাওয়া পাওয়া, দাবি, চিন্তাধারা সবকিছুর সাথে ব্যালেন্স করে চলাই আসলে একটি পত্রিকার সার্থকতা। সেখানে আমরা সফল।
এই স্বপ্নযাত্রাকে বাচিয়ে রাখার জন্য আমি আমার হৃদয়ের গভীর হতে কিছু মানুষকে ধন্যবাদ দিতে চাই। প্রথমেই, আমার পিতার চরম ভরসার প্রতীক, দৈনিক নওয়াপাড়ার নির্বাহী সম্পাদক মফিজুর রহমান দপ্তরী- যিনি তার অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, পরিশ্রমের মাধ্যমে পরম মমতা দিয়ে প্রতিদিন এই পত্রিকাকে আগলে রেখেছেন কোন চাওয়া পাওয়া ছাড়াই।
সম্পাদক হিসেবে আমার যত অপূর্ণতা, অনভিজ্ঞতা তাতে সর্বদা পূর্ণতা দিয়ে আসছেন সম্মানিত নির্বাহী সম্পাদক। আসলাম হোসেনের সন্তান হিসেবে আমি যদি দৈনিক নওয়াপাড়ার মশালের বাহক হই তবে তিনি সেই মশালের প্রজ্জলিত শিখা। আমি যদি পত্রিকার পৃষ্ঠপোষক হই, তবে তিনি আমার দিকনির্দেশক ও শিক্ষক।
দ্বিতীয়ত যাকে ধন্যবাদ দিতে চাই তিনি আমাদের দৈনিক নওয়াপাড়া পরিবারের দেখভালকারী ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম পারভেজ যিনি দিনের ২৪ ঘন্টা তার অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে দুকূল ঠিক রাখেন সর্বদা। এছাড়া উপসম্পাদক আক্তারুজ্জামান, মফস্বল সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ তাজ, মেকাপম্যান ইকবাল হোসেন ও ইনতিশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার সাকিব জিকো, স্টাফ রিপোর্টার তাওহীদ আল উসামা ও আহাদুজ্জামান, মেশিনম্যান সাইদ ও দেলোয়ার চাচা, হেল্পিং হ্যান্ড আরিফ ও প্রহরী মোর্শেদ চাচা- একেকজন যেন এই পুরো গল্পের একেকটি অংশ। যাদের একজনকে বাদেও এই কাব্য পূর্ণতা পাবে না।
আমি হয়ত মুখে প্রকাশ করতে পারিনা আমি আপনাদের কাছে কতটা কৃতজ্ঞ। দৈনিক নওয়াপাড়ার সকল প্রতিনিধি, বিশেষ প্রতিনিধি দের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ আমাদের যাত্রাকে আরো শক্তিশালী করার জন্য।
আপনাদের পাঠানো দূর দূরান্তের খবর পত্রিকায় সারারাত সংকলিত হবার পর ভোরবেলা যখন “দৈনিক নওয়াপাড়া” রূপে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে যায় তখন আমার বিশ্বাস ওপারে আমার পিতার মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠে।
আমার বিশ্বাস ও প্রতিজ্ঞা – সমাজ সংস্কারে, সমাজের নানান অসংগতি তুলে ধরতে, জনকল্যাণমূলক কাজগুলো সমাজের কাছে ছড়িয়ে দিতে দৈনিক নওয়াপাড়া আগেও যেমন গতিশীল ছিল ভবিষ্যতে আরো বেশি গতিশীল হবে।
পাঠকের ভালবাসা ও অকুন্ঠ সমর্থন নিয়েই আরো দীর্ঘ যাত্রাপথের উদ্দেশ্যেই দৌড়ে চলবে এই পত্রিকা। স্বপ্ন যেমন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মন্তারে অতিবাহিত হয় ঠিক তেমনই এগিয়ে চলার দৃঢ প্রত্যয় নিয়েই আমাদের দৈনিক নওয়াপাড়া টিমের সহযোদ্ধারা এগিয়ে চলব স্বপ্নালু চোখেই। কারণ আসলাম হোসেনের স্বপ্নের বিনাশ নেই।