রাজধানীর ভাটারায় ভূয়া রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে প্রতারক চক্রের মূল হোতা সহ ৪ জন গ্রেফতার

অন্যান্য অপরাধ এইমাত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ প্রবাসে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী সংঘবদ্ধ চক্র বিদেশে কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষদের প্রতারিত করছে।


বিজ্ঞাপন

এতদ্সংক্রান্তে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী র‌্যাব-১ এর নিকট অভিযোগ দেয়। ফলশ্রুতিতে র‌্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।


বিজ্ঞাপন

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার ৫ মার্চ, আনুমানিক ৬ টা ১৫ মিনিটের সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকার ভাটারা থানাধীন নূরেরচালা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।

উক্ত অভিযান পরিচালনা কালে ৪ জন নারী ভিকটিম উদ্ধারসহ সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূল হোতা শেখ মোঃ ফরিদুল ইসলাম (৪৭), পিতা-মৃত মীর হোসেন, জেলা-কিশোরগঞ্জ ও তার সহযোগী আব্দুল হান্নান @ পালান (৬০), পিতা-মৃত আফিল উদ্দিন, জেলা-কিশোরগঞ্জ, মোঃ নাদিম মিয়া (৩৮), পিতা-মৃত বদর উদ্দিন, জেলা-কিশোরগঞ্জ ও মোঃ বাবুল উদ্দিন (৩৭), পিতা-মৃত মীর হোসেন, জেলা-কিশোরগঞ্জ’দেরকে গ্রেফতার করা হয়।

এসময় গ্রেফতার কৃত আসামীদের নিকট হতে ৪৪ টি পাসপোর্ট, প্রতারনার মাধ্যমে টাকা গ্রহণের ১ টি রেজিষ্টার, ২ টি ডায়েরী, ২৪টি ১০০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প, ১০ টি ভিজিটিং কার্ড, ৩ টি এটিএম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাক্তির নামীয় জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি ১২১ টি, ১ টি ব্ল্যাংক চেকের পাতা, ১ টি এনআইডি কার্ড, নগদ ৭,২০০ টাকা ও ৬ টি মোবাইল ফোন’সহ বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা তাদের প্রতারণা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রদান করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। গ্রেফতারকৃত শেখ মোঃ ফরিদুল ইসলাম উক্ত চক্রের মূল হোতা এবং গ্রেফতারকৃত অপর সদস্যরা তার অন্যতম সহযোগী।

তারা কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থান হতে হতদরিদ্র সরলমনা অল্প বয়সী নারীদের বিনা টাকায় বিদেশে প্রেরনের কথা বলে তাদের নিকট হতে পাসপোর্ট নিয়ে আটক করে প্রতারনাপূর্বক বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। তারা দীর্ঘদিন যাবত এই ধরনের প্রতারনামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

চক্রটি বিদেশে লোক পাঠানোর নামে শত শত মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। চক্রের সদস্যরা সাধারণত গার্মেন্টস, কারখানা, ড্রাইভার, সিএনজি চালক, গৃহকর্মী ইত্যাদি শ্রেণীর কর্মজীবীদের টার্গেট করত।

গ্রেফতারকৃতরা সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষদের টার্গেট করত। তাদেরকে প্রবাসে বর্তমান বেতনের ২/৩ গুন বেতনের আশ্বাস দিত। এছাড়া বিনা টাকায় ট্রেনিং দেওয়া সহ বিদেশে প্রেরণের প্রলোভন দেখাত।

বিদেশে দ্বিগুন/তিনগুন বেতন, অন্য দিকে স্বল্প সময়ে কম খরচে যাওয়া যাবে, এতে স্বল্প আয়ের মানুষরা সহজেই প্রলুব্ধ হত। বিদেশে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারকরা সাধারণ মানুষের নিকট হতে ৩০-৭০ হাজার টাকা প্রতারনাপূর্বক হাতিয়ে নিত।

যার ফলে সাধারণ মানুষ কষ্ট করে হলেও বিদেশে যাওয়ার লোভে উক্ত টাকা ঋণ করে প্রতারকচক্রের সদস্যদের দিত। এভাবে তারা নিরীহ সাধারণ মানুষ হতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

এই চক্রটি সাবলেটে বিভিন্ন জায়গায় অফিস ভাড়া নিত। ফলে অফিস ভাড়া কম হত এবং সহজেই অফিস পরিবর্তন করতে পারত।

তারা প্রবাসী কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়/বায়ারের ওয়েব সাইট দেখে বিভিন্ন অনুমোদিত রিক্রুটিং কোম্পানীর নাম ব্যবহার করত। উক্ত রিক্রুটিং কোম্পানীর নামে ভিজিডিং কার্ড ও অন্যান্য নথিপত্র বিদেশে গমন ইচ্ছুকদের প্রদর্শন করে বিশ্বাসযোগ্যাতা অর্জন করত।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শেখ মোঃ ফরিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবত ভাটারা থানা এলাকা সহ আশপাশের থানা এলাকায় বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির সহিত যোগাযোগ স্থাপন করে তাদের নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ করতঃ নিজে সাবলেট বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে অফিস পরিচালনা করে সাধারণ মানুষের সহিত প্রতারনা করে আসছে।

এমনকি উক্ত অফিসে বিভিন্ন স্থান হতে আগত বিদেশ গমনিচ্ছুক অল্প বয়সী মেয়েদের ট্রেনিংয়ের কথা বলে প্রতারনাপূর্বক বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে টাকা আদায় করত।