বিশেষ প্রতিবেদক ঃ সাম্প্রতিক সময়ে বাড্ডা থানাধীন মেরুল বাড্ডা এলাকায় জাল দলিল ও এতদ্সংক্রান্ত বিরোধের কারণে পরস্পর যোগসাজশে একটি হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটে। যেখানে ভিকটিমকে নিজ জমি থেকে জোরপূর্বক উৎখাত করার উদ্দেশ্যে প্রতারক গোলাম ফারুক ও তার প্রধান সহযোগী ফিরোজ আল মামুনসহ অন্যান্যরা গত ২৬ মার্চ ও ৬ এপ্রিল, বাদীদের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে। উক্ত ঘটনায় ভিকটিম বিজ্ঞ আদালতে একটি নালিশী দরখাস্ত করলে বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে রাজধানীর বাড্ডা থানাকে এটিকে এফআইআর হিসেবে গণ্য করার আদেশ দেন।
এতদ্সংক্রান্তে বাড্ডা থানায় একটি মামলা রুজু হয়। বর্ণিত ঘটনাটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে র্যাব উক্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ১৪ এপ্রিল, রাতে র্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর উত্তরা হতে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাতকারী এবং হত্যা চেষ্টা মামলার প্রধান আসামী মোঃ গোলাম ফারুক (৫০), পিতা- মৃত নুরুল আমিন, জেলা- চট্টগ্রাম এবং তার সহযোগী, ফিরোজ আল মামুন@ ফিরোজ (৩৫), পিতা- মৃত আবু তাহের, জেলা- টাঙ্গাইল’কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রাজধানীর বাড্ডায় হত্যাচেষ্টা, চাদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে। এছাড়াও মহাসড়কের জমি ক্রয়-বিক্রয় করে প্রতারণামূলকভাবে ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে প্রতারিত করার বিভিন্ন বিষয়াদি ও কৌশল সম্পর্কে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। ২০২১ সালের এপ্রিলে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মহাসড়কের জমি ব্যক্তি নামে নিবন্ধন, বিক্রয়, ব্যাংকে বন্ধক ও ব্যাংক কর্তৃক নিলামে বিক্রি চেষ্টার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। এই ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে।
উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় হতে তদন্তপর্ষদ গঠিত হয় ও উক্ত পর্ষদ তাদের তদন্তে উল্লেখ করে যে একটি প্রতারক চক্র মহাসড়ক শ্রেনীভুক্ত সরকারি জমি কয়েকটি সরকারি অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে সরকারি ভূমি ব্যক্তি মালিকানায় নিবন্ধন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নেয়। যদিও, এসব জমি সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর এল. এ কেস ১৩-১৯৪৮/৪৯ সালের মূলে ও পুনরায় ৬৬-১৯৫৭/৫৮ সালের মূলে অধিগ্রহণ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত গোলাম ফারুক জানায় যে, সে ২০০০ সাল হতে গাড়ি আমদানিকারক হিসেবে তার ব্যবসা শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কোন বন্ধকি সম্পত্তি ব্যতিত এলসি আবেদন করে গাড়ি আমদানি শুরু করে। বিদেশি ব্যাংকের টাকার পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকায় বর্ণিত বেসরকারি ব্যাংকটি আমদানিকৃত গাড়ি বিক্রি করে ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করার শর্তে তাকে ৭ কোটি টাকা ডিম্যান্ড লোন দেয়। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক তাকে সম্পত্তি বন্ধক দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে সে সরকারি জমিকে অসদুপায়ে ব্যক্তি নামে নিবন্ধন করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ১৯৪৮ সালে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ হওয়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশের অধিগ্রহণ হওয়ার পূর্বের জমির মালিকের ছেলে’কে খুঁজে বের করে। জালিয়াতির সাহায্যে সে ২০০৬ সালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি ভূয়া দলিল তৈরি করে। পরবর্তীতে উক্ত দলিলমূলে তৎকালীন মালিকের ছেলের নিকট হতে গ্রেফতারকৃত গোলাম ফারুক তার স্ত্রীর নামে ২০১০ সালে নামমাত্র মূল্যে ক্রয় করে আরেকটি দলিল তৈরি করে। একই বছরে তার স্ত্রী হতে উক্ত জমি নিজের নামে দলিল করে নেয়। যার সাফ কবলা দলিল নম্বর ৮৮৮০। পরবর্তীতে উক্ত জমি ঐ বেসরকারি ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে সে ব্যাংক হতে আরও ১৫ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নেয়। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালে ব্যাংক অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে বন্ধকি জমি নিলামে বিক্রয় করার নোটিশ জারি করলে ব্যাংক সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পায় যে ঐ জমিটি সরকারি সম্মত্তি। পরবর্তীতে সে অসৎ উপায় অবলম্বন করে একটি ভ্রম সংশোধন দলিল করে পূর্বের বন্ধককৃত জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে বর্ণিত মামলার বাদীর জমির দাগ নম্বর উল্লেখ করে। তখন ব্যাংক সেই জমিতে বন্ধকি সম্মত্তির সাইনবোর্ড স্থাপনের চেষ্টা করলে উক্ত প্রতারণার বিষয়টি উন্মোচিত হয়। গ্রেফতারকৃত গোলাম ফারুক এর বিরুদ্ধে জমি জমা সংক্রান্ত, প্রতারণা, হত্যা চেষ্টা, এনআই এ্যাক্ট, জালিয়াতি ইত্যাদি অপরাধে রাজউক এর ০১টি, একটি বেসরকারি ব্যাংক এর ০৪টি ও পাবলিক বাদী হয়ে ০৩টিসহ মোট ০৮টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত ফিরোজ আল মামুন@ ফিরোজ গোলাম ফারুক এর সকল অপকর্মের অন্যতম সহযোগী। সে উত্তরা এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ বিস্তারে কিশোর গ্যাং এর পৃষ্ঠপোষকতা করে বলে অভিযোগ রয়েছে।