৬ বছর পর চাঞ্চল্যকর লাবলু হত্যার রহস্য উন্মোচন,আসামী গ্রেফতার করলো পিবিআই

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ বগুড়ায় দীর্ঘ ৬ (ছয়) বছর পর বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার বৃষ্ণপুর এলাকার বহুল আলোচিত লাভলু হত্যাকান্ডের মামলার রহস্য উদঘাটন ও মূল পরিকল্পনাকারী এবং হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত আসামীকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই, বগুড়া।

মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত দীর্ঘ প্রায় ৬ (ছয়) বছর পলাতক অবস্থায় মোছাঃ ফরিদা বেগম (৪৫), পিতা-মোঃ ফজর উদ্দিন, সাং-বৃষ্ণপুর, থানা-শিবগঞ্জ, জেলা-বগুড়াকে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানাধীন ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকা হতে গত ২৩ এপ্রিল সন্ধ্যা অনুমান ১৯.৩০ ঘটিকায় গ্রেপ্তার করা হয়।

সোনাতলা থানাধীন মোছাঃ নুর জাহান খাতুন (৩০), স্বামী- মৃত লাবলু সরকার, সাং- বামুনিয়া, থানা- সোনাতলা, জেলা- বগুড়া গত ১৩/০৮/২০১৬ খ্রিঃ শিবগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে এই মর্মে এজাহার দাখিল করেন যে, তার স্বামী অর্থাৎ ডিসিস্ট লাবলু সরকার একজন গরু ব্যবসায়ী ছিল।

গত ১০/০৭/২০১৬ খ্রিঃ ব্যবসার কাজে বাড়ী হতে গাবতলীর ডাকুমারা হাটে যায় এবং ১১/০৭/২০১৬ ডিসিস্ট লাবলু সরকারের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে শিবগঞ্জ থানাধীন বৃষ্ণপুর গ্রামস্থ জৈনক জবেদ আলির মেহগুনি বাগানে গিয়ে তার স্বামীর লাশ সনাক্ত করেন।

বাদীনির এজাহারের পরিপেক্ষিতে শিবগঞ্জ থানার মামলা নং-২৫, তাং-১৩/০৮/২০১৬ খ্রিঃ, ধারাঃ ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়। মামলাটি ক্লু-লেস ও আলোচিত হওয়ায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), বগুড়া জেলা স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।

গত ১১/০৭/২০১৬ খ্রিঃ শিবগঞ্জ থানাধীন বৃষ্ণপুর গ্রামস্থ জনৈক জবেদ আলীর মেহগুনি বাগানে ডিসিস্ট লাবলু সরকারের লাশ পাওয়া যায়। পরে ডিসিস্টের স্ত্রী ও তার পরিবারের লোকজন লাশ সনাক্ত করেন যে, উক্ত ব্যক্তিই লাভলু সরকার। সংবাদ পেয়ে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন উক্ত লাশ শাহজাহানের বলে দাবী করে।

এ বিষয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদীনির এজাহারের পরিপেক্ষিতে শিবগঞ্জ থানার মামলা নং-২৫, তাং-১৩/০৮/২০১৬ খ্রিঃ, ধারাঃ ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
মামলাটি প্রথমে শিবগঞ্জ থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পরবর্তিতে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার নির্দেশে উক্ত মামলাটি পিবিআই, বগুড়া জেলা প্রাপ্ত হয়ে তদন্ত শুরু করে।

অতিরিক্ত আইজিপি, পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই, বগুড়া জেলার পুলিশ সুপার মোঃ আকরামুল হোসেন এর সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সবুজ আলী মামলাটি তদন্ত করেন।
এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ডিসিস্ট লাবলু ও ফরিদার মধ্যে পরকিয়ার স¤পর্ক ছিল বিষয়টি আসামী ফরিদা বেগমের স্বামী মিনু বেপারী জানতে পারে এবং তালাক প্রদান করে।

তালাক প্রাপ্ত হওয়ার পর ডিসিস্ট লাভলু আসামী ফরিদা বেগমকে বিয়ের ৬ (ছয়) দিন পরেই তালাক প্রদান করে। তালাক প্রদানের পরেও ডিসিস্ট লাভলু আসামী ফরিদাকে জিম্মি করে নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক করত। যার ফলে ফরিদা বেগমের মনে ডিসিস্ট লাবলুর উপর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

লাভলুর কারণে পূর্বের স্বামীর দ্বারা তালাক প্রাপ্ত ও জিম্মি করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনসহ বিভিন্ন কারণে লাবলুর উপর আসামী ফরিদা বেগম প্রতিশোধ প্রবন হয়ে উঠেন এবং তাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন।

ঘটনার দিন অর্থাৎ ১০ জুলাই ২০১৬ তারিখে রাত্রি অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় শারীরিক স¤পর্কের লোভ দেখিয়ে আসামী ফরিদা বেগম ডিসিস্ট লাবলু সরকার কে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শিবগঞ্জ থানাধীন বিষ্ণপুর গ্রামস্থ জৈনক জবেদ আলীর মেহগনি বাগানে আসতে বলে। উল্লেখ্য উক্ত স্থানে ডিসিস্ট ও আসামী ফরিদা এর আগেও অনেক বার শারীরীক স¤পর্ক স্থাপন করত।
ডিসিস্ট লাবলু উক্ত স্থানে আসার পর পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী ফরিদা বেগম তার অন্যান্য সহযোগীদের সহায়তায় হাত পা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে ডিসিস্ট লাবলু’ কে হত্যা করে উক্ত স্থান ত্যাগ করে এবং এক পর্যায়ে আসামী ফরিদা বেগম নিজ এলাকা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাতক থাকেন।

গ্রেফাতারকৃত আসামীকে গত ২৫ এপ্রিল আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামী মোছাঃ ফরিদা বেগমকে সু-কৌশলে লাভলু সরকারকে হত্যা করার ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক সে¦চ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে এবং অন্যান্য আসামীদের নাম প্রকাশ করেছে।
তার জবানবন্দির ভিত্তিতে করে মামলার সাথে জড়িত আরও ১ (এক) জন আসামী মোঃ গফুর (৪০), পিতা-মৃত আমজাদ, সাং-বামুনিয়া, থানা-সোনাতলা, জেলা-বগুড়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সহযোগী অন্যান্য পলাতক আসামিদেরকে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


বিজ্ঞাপন