গাজীপুরে চাঞ্চল্যকর বৃষ্টি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনও আসামী গ্রেফতার করলো পিবিআই

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ গাজীপুরের জয়দেবপুরে চাঞ্চল্যকর বৃষ্টি হত্যার মামলার রহস্য উদঘাটন সহ ঘটনার সহিত জড়িত আসামী সোহেল রানাকে গত ১৪ মে, রাত অনুমান ১১টা ৪৫ মিনিটের সময় নবাবগঞ্জ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর জেলা।

জানা গেছে, জয়দেবপুরে মামলার বাদী মোঃ সিদ্দিকুর রহমান (৫৮), অভিযোগে উল্লেখ করেন আসামী মোঃ সোহেল রানা (২৭),থানা-নবাবগঞ্জ, জেলা-দিনাজপুর এবং বৃষ্টির খাতুন (২৪) থানা-দৌলতপুর, জেলা-কুষ্টিয়া এর সাথে প্রায় ৫ বছর প্রেম করে গত ২০১২ সালে ইসলামী শরীয়াহ্ মোতাবেক রেজিঃ কাবিন মূলে বিবাহ করিয়া বর্তমান ঠিকানায় ভাড়া বাসায় ঘর সংসার করাবস্থায় তাহাদের দাম্পত্য জীবনে ১ টি ছেলে মোঃ ফাহিম প্রমানিক (০৪) জন্মগ্রহণ করে। ইতোপূর্বে তাদের দাম্পত্য জীবনে কোন ঝগড়া বিবাদ বা কলহ ছিলনা।

সম্প্রতি তার সহযোগী বিবাদী মোঃ কোহিনুর প্রমানিক (৫৭), এবং মোসাঃ পারুল খাতুন (৫০) থানা-ফুলবাড়ী, জেলা-দিনাজপুরদ্বয়ের প্ররোচনায় সহায়তায় ও ইন্ধনে মোছাঃ বৃষ্টি খাতুনকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে অত্যাচার নির্যাতন করত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আসিতেছিল এবং কারনে অকারনে আত্মহত্যা করার জন্য প্ররোচিত করিয়া আসছিল।

গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে বেলা অনুমান ১১ টার পর হইতে ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ বেলা ১২ টার মধ্যবর্তী যে কোন সময় জয়দেবপুর থানাধীন ভবানীপুর দক্ষিণ নয়াপাড়া সাকিনস্থ জনৈক মোঃ মিজানুর রহমান মজনু মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া বাড়িতে ১নং বিবাদী মোঃ সোহেল রানার ভাড়াকৃত টিনসেট বিশিষ্ট চৌচালা বসত ঘরের বারান্দার ঘরের আড়ার সাথে উড়না দ্বারা গলায় ফাঁস লাগাইয়া আত্মহত্যা করে। উক্ত বিবাদী তার স্ত্রী জীবিত আছে ধারনা করিয়া বৃষ্টি খাতুনকে চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বৃষ্টিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষনা করে।

ময়মনসিংহ কোতয়ালী থানার অফিসার বৃষ্টির সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত পূর্বক ময়না তদন্তের জন্য লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। উক্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে ডিসিষ্টের বাবা পরিবারসহ উক্ত হাসপাতালে গিয়ে বৃষ্টির লাশ সনাক্ত করে।

উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে জয়দেবপুর থানার মামলা নং-০৭, তারিখ-০৮/০৮/২০২০, ধারা-৩০৬/১০৯ পেনাল কোড রুজু হয়। পরবর্তীতে ময়না তদন্তের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে হত্যা মামলায় রুপান্তরিত হয়। অর্থাৎ ৩০৬/১০৯ তৎসহ ৩০২ পেনাল কোড।

মামলাটি জয়দেবপুর থানা পুলিশ প্রায় ৪ মাস তদন্ত করে কোন আসামী গ্রেফতার না করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই গাজীপুরকে নির্দেশ প্রদান করেন।

অ্যাডিশনাল আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর দিক নির্দেশনায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মোঃ মনিরুজ্জামান মামলাটি তদন্ত করেন।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী মোঃ সোহেল রানার সাথে তার স্ত্রীর প্রেমের সম্পর্ক করে ২০১২ সালে বিবাহ করে এবং বিবাহের ১ বছর পরেই জয়দেবপুর থানাধীন ভবানীপুর সাকিনে মোঃ মিজানুর রহমান মজনু মিয়ার বাড়ির ভাড়া থাকিয়া স্বামী-স্ত্রী গার্মেন্সে চাকুরি করিত এবং তাদের ফাহিম প্রমানিক (৪) নামে একজন পুত্র সন্তান আছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ঝগড়া বিবাদ হত। ঘটনার ০৬ দিন আগে ঈদের ছুটিতে আসামী মোঃ সোহেল ও তার স্ত্রী সন্তানসহ শ্বশুর বাড়িতে ঈদ করতে যায়।

ঈদ শেষে একমাত্র সন্তানকে শ্বশুর বাড়ীতে রেখে স্বামী-স্ত্রী দুইজন কর্মস্থলে চলে আসে। ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে রাত্র অনুমান ২টা ১৫ মিনিটের সময় আসামী ও তার স্ত্রী ঘুমাতে যায় এবং সকাল ৯ টার সময় স্বামী-স্ত্রী ঘুম থেকে উঠে। পরবর্তীতে অনুমান সকাল ১০ টার দিকে আসামীর সাথে তার স্ত্রীর কাপড় ধোয়া নিয়ে কথা কাটা কাটি হয় এবং দুইজনের সাথে দস্তাদস্তি শুরু হয়।

এরপর ভিকটিম উচ্চস্বরে চিৎকার শুরু করিলে আসামী সোহেল রানা তার স্ত্রী এর গলা চেপে ধরে রাখে। কিছু সময় পরে ভিকটিম এর শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামী সোহেল রানা বিষয়টিকে আত্মহত্যায় রুপান্তরিত করার জন্য ডিসিষ্ট এর গলায় ওড়না বেধে বারান্দার আড়ার সাথে টানিয়ে রাখে।

এরপর আসামী সু-কৌশলে বারান্দা ও বেড রুমের দরজা বন্ধ করে ঘরের চালের সিলিং এর ফাঁকা দিয়ে বেড রুমে গিয়ে চিৎকার শুরু করে। এরপর আসামী সোহেল রানা আশে পাশের লোকজনকে ডাকা ডাকি করে বলেন যে, তার স্ত্রী দরজা বন্ধ করে রেখেছে দরজা খুলছে না।

আশেপাশের লোকজন আসার পর আসামী ঘরের সিলিং ফাঁকা করে বেড রুমে থেকে বারান্দার রুমে এসে দরজা খুলে। খোলার পর সবাই মিলে দেখতে পায় তার স্ত্রী ঝুলন্ত অবস্থায় আছে।

পরবর্তীতে আশে পাশের লোকজনের সহায়তায় তার স্ত্রীকে ঝুলন্ত অবস্থায় থেকে নামিয়ে জয়দেবপুর থানাধীন মনিপুর পপুলার হাসপাতালে নেয়। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডিসিষ্টকে মৃত ঘোষনা করে।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, এটি একটি হত্যা মামলা। মামলার গ্রেফতারকৃত আসামী নিজেই ভিকটিমকে গলা টিপে হত্যা করে।

পরবর্তীতে উক্ত হত্যার ঘটনাটিকে আত্মহত্যায় রুপান্তরিত করার জন্য ভিকটিমের নিজ ওড়না দিয়ে বারান্দার আড়ার সাথে টানিয়ে রাখে। উক্ত আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করার পর বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এর ফলে মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটিত হয়।


বিজ্ঞাপন