রেবিপ্রাজল “ক্যাপসুল” নিষিদ্ধ হয়েছে, কিন্তু রেবিপ্রাজল “ট্যাবলেট” খাওয়া যাবে?

Uncategorized স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্য বিশ্লেষক ঃ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি সাম্প্রতিক আদেশ ভাইরাল হয়েছে যার বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে র‍্যাবিপ্রাজল ওষুধটিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধরনের টেকনিক্যাল বিষয়ে খুব বুঝে শুনে চিন্তা করে শেয়ার করা উচিত। দ র‍্যাবিপ্রাজল বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত, জনপ্রিয় ওষুধগুলোর মাঝে একটি।

এটি স্বাস্থ্যঝুকির কারনে নিষিদ্ধ হয়েছে এমন কথা ছড়িয়ে পড়লে অনেক মানুষ আতংকিত হবে যা তাদের স্ট্রেস বাড়িয়ে গ্যাস্ট্রাইটিস এর সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
ওষুধ প্রশাসনের মূল আদেশটি ভালো করা খেয়াল করুন।

সেখানে লাইসেন্স বাতিলকৃত ওষুধগুলোর বিশেষ ফর্মুলেশনের কথা বলা হয়েছে। কোন একটি ওষুধ বাজারে বিভিন্ন ফর্মুলেশনে পাওয়া যায়, যেমন ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ, ইনজেকশন। এগুলোর মাঝেও স্পেসালাইজেশন আছে যেমন পিলেট, এন্টেরিক কোটেড, ডিলেইড রিলিজ ইত্যাদি৷

প্রতিটি আলাদা ফর্মুলেশন এর জন্য আলাদাভাবে লাইসেন্স নিতে হয় এবং তার সপক্ষে আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত কয়েকটি রেগুলেটরি এজেন্সির (USFDA, UKMHRA, EMA ইত্যাদি) রেফারেন্স দিতে হয়। ঔষধ প্রশাসন তাদের আদেশে উল্লেখিত ওষুধের নির্দিষ্ট ফর্মুলেশনের জন্য এইসব রেফারেন্স না পাওয়ায় শুধুমাত্র ঐ ফর্মুলেশনটি বাতিল করেছে।

সুতরাং, এই আদেশের অর্থ হচ্ছে র‍্যাবিপ্রাজল এর Rabeprazole Sodium Enteric Coated Pellets 8.5% w/w Ph grade 235.294mg ফর্মুলেশনটির লাইসেন্স বাতিল। কোম্পানিগুলো এই বিশেষ ধরনটি বিক্রি করতে পারবে না কিন্তু র‍্যাবিপ্রাজলের অন্যান্য ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল ফর্মুলেশন বিক্রি করা যাবে।

এর সাথে স্বাস্থ্য ঝুকির কোন সম্পর্ক নেই। ঐ নির্দিষ্ট ফর্মুলেশন এর যেসব ওষুধ বাজারে আছে বা লোকে ব্যবহার করছে সেগুলোর কি হবে এ ব্যাপারে ডিজিডিএ এর নির্দেশনা নেই। সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে ঐ ফর্মুলেশনের বদলে র‍্যাবিপ্রাজলের অন্য ফর্মুলেশন (যেমন ট্যাবলেট) ব্যবহার করতে পারেন।

উল্লেখ্য, আরও একটি ফর্মুলেশন Rabeprazole Sodium Delayed Release Pellet 15% w/w MUPS এটির পক্ষেও লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় রেফারেন্স পাওয়া যায়নি কিন্তু আবেদনকারী কর্তৃপক্ষ বাতিলের ব্যাপারে আপিল করায় এই ফর্মুলেশনে বাতিলের সিদ্ধান্ত আপিলের রায়ের অপেক্ষায় আছে।
সুতরাং, অনুগ্রহ করে আতংকিত হবেন না বা বাসায় থাকা র‍্যাবিপ্রাজলের অন্যান্য ফর্মুলেশন ছুড়ে ফেলে দেবারও কোন প্রয়োজন নেই।

চিকিৎসকগণ দয়া করে প্যানিক ছড়ানো কথাবার্তা বলবেন না। আপনারা লাইসেন্স বাতিলকৃত ফর্মুলেশনটি বাদে অন্য ফর্মুলেশনের র‍্যাবিপ্রাজল প্রেসক্রাইব করতে পারেন।

ড্রাগ কন্ট্রোল কমিটির ২৫৩ নং সভায় এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আলোচিত হয়েছে। সেটি হলো এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এড়ানোর জন্য এন্টিবায়োটিকের প্যাকেট আলাদাভাবে চিহ্নিত করা।

দেখা গেছে ৬৭% ওষুধ বিক্রেতা এন্টিবায়োটিককে আলাদাভাবে চিনতে পারেন না। এই সমস্যা দূর করতে কার্টনের গায়ে লাল রঙ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার না করার নির্দেশনা দেয়া থাকবে। ওষুধের পাতায়ও একইভাবে লাল রঙ দেয়া থাকবে। এই সিদ্ধান্তটি আশাকরি এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে৷

লিখেছেনঃ
ডা. মোঃ মারুফুর রহমান
চিকিৎসা ও পিএইচডি গবেষক
দ্যা ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ড, যুক্তরাজ্য


বিজ্ঞাপন