জিডিপির প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হলে উন্নয়নমুখী প্রকল্প সীমিত আকারে হলেও বাস্তবায়ন আবশ্যক

Uncategorized জাতীয়

অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ঃ দেশের উন্নয়নমুলক মেগাপ্রজেক্ট গুলো উদ্ধোধনের আগে আগেই অনলাইনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে স্লিপার সেল।মুলত,পদ্মা সেতু,কর্নফুলি টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মত প্রকল্পগুলো উদ্ধোধনের আগেই এসব প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্প বন্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছে একটি চক্র।যার পালে হাওয়া দিচ্ছে দেশেরই কিছু পত্রিকা এবং মিডিয়া হাউস।বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা নতুন কিছু নয়,এর আগে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়ায় অস্থিরতা থাকলেও তা তেলের বাজার ছাড়া তেমন কোন উত্তাপ ছড়ায়নি।কিন্ত সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ উত্তাপ ছড়িয়েছে পুরো বিশ্বেই।অন্যদিকে তেলের বাজারে অস্থিরতা উত্তাপ ছড়িয়েছে দেশের পাওয়ার সেক্টরেও।গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে যেতে শুরু করায় গৃহস্থালির গ্যাসকে ব্যবহার করা হচ্ছে শিল্প কারখানায়।অন্যদিকে,গ্যাস ভিত্তিক পাওয়ার প্লান্টগুলোতে গ্যাস নিয়ে সমস্যা রয়েছে।
আগামী ৩-৪ বছর পর গ্যাস সংকটের ফলে অনেক গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকেই বন্ধ করতে হবে।যদিও বর্তমান মহাপরিকল্পনায় মধ্যপ্রাচ্য,সৌদি আরব থেকে গ্যাস আমদানি করে গ্যাস নির্ভর বিদ্যুতকেন্দ্র করাকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।সৌদি আরব,কাতার,আরব আমিরাতের মত দেশগুলি বাংলাদেশের পাওয়ার সেক্টরে ভবিষ্যতে ৫ বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট আনতে চাইছে।যার মাঝে শুধু সৌদি বিনিয়োগই হলো ২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রাসংগিক ভাবে হিসেব করলে কোন জাতীয় মিডিয়াই গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধী নয়।কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ সরে এসেছে যা স্বস্তির খবর।কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম এখনো স্টাবল না।তেলের দামের মাঝেই অনেকটা বাধ্য হয়ে আমদানী নির্ভর ফার্নেস তেল পুড়িয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে বাংলাদেশ।যার মাশুল দিতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে সোলার কিংবা বায়ু বিদ্যুৎ এখনো বাংলাদেশের জন্য না।পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার হয়ে চীন থেকে বিদ্যুৎ আনার প্রস্তাব থাকলেও মিয়ানমারের অস্থিতিশীলতা এবং মিয়ানমারের অনীহা বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে।
অন্যদিকে,নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রেও ভারতের অনীহা রয়েছে।বাংলাদেশ এবং নেপাল বিদ্যুৎ বিনিময়ে রাজী হলেও ভারতের বিভিন্ন যুক্তি এবং রাজ্য এবং মন্ত্রণালয়ের ঘোরাঘুরিতেই প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়েছে।
এমন পরিস্থিতি বিবেচনায় রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কে সাদাহাতির সাথে তুলনা করে চীনের উদ্দ্যোগে দ্বিতীয় পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাবও উথাপন করা হয়েছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি লং টার্ম ইনভেস্টমেন্ট। জার্মানী, ফ্রান্স,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর মত দেশ পারমাণবিক কেন্দ্র ফেজ আউট করার বড় কারণ তাদের অন্যান্য ফসিল ফিউল কিংবা রিনিউয়েবল বিদ্যুৎকেন্দ্র করার মত জমি এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার বিদ্যমান।কিন্তু এমন সুবিধা এখনো কিংবা অদূর ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের পক্ষে অর্জন করা সম্ভবপর নয় কেননা তা ইকোনমিক্যালি ফিজিবল নয়। অন্যদিকে,পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের সবচাইতে বড় অসুবিধা এর নির্মাণের সময়কাল এবং ব্যয়।তার জন্যই ৬-১০ বছর ব্যয় করে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মিত হওয়ার পর তার আয় আসতেই আরো ১০-১২ বছর সময় লেগে যায়।প্রথম উৎপাদিত বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি মুল্য বেশী হলেও ইনিসিয়াল ফেজের পর সে বিদ্যুতই ২-৩ টাকা এবং ক্ষেত্রবিশেষে ইউনিটপ্রতি মাত্র ১ টাকাতেও পাওয়া সম্ভব।
ইকোনমিক্যালি গ্যাস কিংবা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্বল্পমেয়াদে কার্যকর হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা ব্যবহার সম্ভব নয়।সে হিসেবে একমাত্র পারমানবিক বিদ্যুতকেন্দ্রেই বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ভবিষ্যত বিদ্যমান।বিগত কয়েকবছরের প্রকল্পের হিসেব নিকেশ করলে দেখা যায় চীন এবং রাশিয়ার অর্থায়ন কিংবা তত্বাবধানে নির্মিত প্রকল্পগুলোকেই সর্বাপেক্ষা বেশী প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।সিলেট,চট্টগ্রাম কিংবা কুমিলা বা রাজশাহী-রংপুরের মানুষ পদ্মা সেতুতে না চড়লেও তাদেরকেও এ পদ্মা সেতুর ট্যাক্সের ভার বহন করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে,টাইম ইজ মানি এ প্রবাদকে ভুলে গিয়ে কিছুক্ষেত্রে প্রায় একই খরচে ঘন্টাব্যাপী ফেরী যাত্রাকেই ভাল বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করতে টোল নিয়েও সমালোচনা করা হচ্ছে।অথচ,পদ্মা নদী পার হওয়া প্রায় সকলেই জানে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব কতটা। দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ঈদ করতে যাওয়া , চাকুরীর পরীক্ষা দিতে না পারা,কিংবা চিকিৎসা না পাওয়া ঘাটে আটকে থাকা অসুস্থ বাবার সন্তানই জানে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব কতটা।।পদ্মা সেতুর সাথে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্প নেয়া এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন জরুরী।মনে রাখতে হবে,রাষ্ট্রের যেসব কার্যক্রম সরাসরিভাবে জিডিপিতে ভুমিকা রাখে সেসব কাজের বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরী।চট্টগ্রাম – কক্সবাজার দুই লেন হাইওয়ে কিংবা কুমিল্লা হয়ে সিলেটের টু লেন হাইওয়ের জন্য এখনো কর্মঘন্টার ক্ষতি হয়েই যাচ্ছে।হিসেব করলে যা বাৎসরিকভাবে সড়ক কিংবা সেতু করবার ক্ষতির চাইতে কম নয়। দ্রুততম সময়ে পন্য পরিবহন দেশের জিডিপিতে সরাসরিভাবে ভুমিকা রাখে।অন্যদিকে,প্রকল্প বাস্তবায়ন স্বচ্ছ হলে তা একাধারে যেমন প্রকল্প কেন্দ্রিক চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি করে তেমনিভাবে এলাকাভিত্তিক জিডিপির মান বৃদ্ধি করে।উদাহরণস্বরুপ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চারলেন হওয়ার ফলে জাপান সরকার বিনামুল্যে অনেক পরিবারকেই রাইস কুকার,টিভি,ফ্রিজ নেয়ার জন্য অনুদান দিয়েছিল।কেননা নতুন রাস্তাঘাট অভ্যন্তরীণ একটি বাজার সৃষ্টি করে। জনসংখ্যা বাংলাদেশের জন্য এক অংশে আশীর্বাদ,এক অংশে অভিশাপ।বাংলাদেশের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বড় ভুমিকা রাখে ডেমোগ্রাফিক পপুলেশন।এবং প্রকল্পগুলোর সফতাও করে এই জনসংখ্যা
অন্যদিকে,দেশের স্বার্থে প্রকল্প নিতেই হবে।যতদিন ইটের পর ইট কিংবা ইস্পাতের উপর ইস্পাতের জোড়া লাগবে ততদিনই অর্থনীতি সচল থাকবে।যেদিন প্রকল্পের দরকার পড়বে না সেদিনই বুঝতে হবে হয় আপনি প্রকল্প নেয়ার কিংবা জিডিপির চরম সীমায় উপনীত হয়েছেন এবং এর পর থেকে আপনার জিডিপি কমবে,হয়ত জীবনযাত্রার মান বাড়বে কিংবা সামগ্রিক জিডিপি কমতেই হবে।


বিজ্ঞাপন