কুটনৈতিক বিশ্লেষক ঃ মিয়ানমার নৌবাহিনীর সামরিক পরিকল্পনা অনুযায়ী কমপক্ষে আরো দুটি সাবমেরিন ২০২৬ সালের আগেই ফ্লিটে যোগ করতে চায় মিয়ানমার।এ বিষয়ে রাশিয়ার সাথে আলোচনা করছে বার্মা। অন্যদিকে ফ্লিটের বৈচিত্র বজায় রাখতে নুন্যতম আরো একটি টাইপ ৩৫ বি মিং ক্লাস ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিন চাইছে বার্মা। মিয়ানমারের সাবমেরিন কেনার কথাবার্তা ২০০৪ সাল থেকে চলমান থাকলেও বাংলাদেশ চীন থেকে সাবমেরিন হাতে পাওয়ার পরই মিয়ানমার তোড়জোড় শুরু করে।
বাংলাদেশের মিং ক্লাস কে ”ঠেলাগাড়ি” এর সাথেও তুলনা নিয়ে বসে মিয়ানমার নৌবাহিনী।তা সত্বেও ২০২০ সালে ভারত থেকে আই এন এস সিন্ধুবীর মডিফাইড কিলো ক্লাস সাবমেরিন এবং ২০২১ সালে চীন থেকে মিং ক্লাস সাবমেরিন উপহার পায় বার্মা। এরই মধ্যে চীনা এবং রাশিয়ান সাবমেরিন ব্যবহার করে নতুন সাবমেরিনারদের ব্যাচ চালিয়ে যাচ্ছে বার্মা।মিয়ানমার মিং ক্লাস সাবমেরিন হাতে পাওয়ার পর থেকেই থাইল্যান্ড চীন থেকে সাবমেরিন ডিল স্থগিত করে রেখেছে। চীনা ইউয়ান ক্লাস ০৩৯ এ এর উপর ভিত্তি করে ৩ টি জার্মান ইঞ্জিন নির্মিত এস২৬টি সাবমেরিন ২০২৪ সালে হাতে পাওয়ার কথা ছিল থাইল্যান্ডের।তবে এ ডিলটি বাদ রেখে ইউরোপ থেকে সাবমেরিন আনার চেষ্টা করছে থাইল্যান্ড।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী নিজেও এ ব্যপারটি নিয়ে অবগত।মিয়ানমারের উপর ভারতের সাথেও বাংলাদেশ নেভীর গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান।সম্প্রতি ভারতের ডেলিগেশন টিম চীনা টেকনিক্যাল সহায়তায় নির্মিত বাংলাদেশের ড্রাইডক গুলো ভিজিট করছে।একই সাথে যৌথভাবে ভেসেল নির্মাণ নিয়েও কথা চলছে।আন্তর্জাতিক ভাবে আমাদের উচিত পলিটিক্সে না জড়িয়ে চীন এবং ভারতকে বাংলাদেশে
কম্পিট করতে দেয়া।
এ দুদেশকে ছোট খাটো ডিল দিয়ে, ডেনমার্ক, তুরস্ক,ব্রিটেন প্রভৃতি দেশগুলোর সাথে সার্ফেস ফ্লিট এবং জার্মানীর সাথে আন্ডার ওয়াটার ফ্লিট কেনার ব্যপারে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আরো মনযোগী হওয়া উচিত। ২০১৭ সাল থেকে চট্রগ্রাম ড্রাই ডকে ফ্রিগেট নির্মাণের কথা থাকলেও চীনা অসহযোগী এবং আমাদের নিজস্ব জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।বছরের পর বছর চীন থেকেই ফ্রিগ্রেট,কর্ভেট না কিনে তা নিয়ে জোরেশোরে কাজ করা দরকার হলেও ২০২২ সালে সামরিক বাহিনীর জন্য কেনাকাটার বরাদ্দ কমবে। অস্থির বিশ্ব এবং যুদ্ধের ডামাডোল,করোনাকালীন সময় সামরিক বাহিনীর কাংখিত উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে।
বাংলাদেশকে মনে রাখতে হবে,শত্রুর হাতে এমন কোন অস্ত্র থাকা উচিত হবে না,যা আমাদের কাছেও বিদ্যমান।চীন বাংলাদেশকে যে অস্ত্র দেয়,সেটি মিয়ানমারকেও প্রদান করে।এক্ষেত্রে চীনের একচ্ছত্র মনোপলি থাকলেও বাংলাদেশ তা ভাংবার চেষ্টা করছে।এরই মধ্যে ভারত ফ্রান্স যেন বাংলাদেশকে কোন রাফালে বিক্রয় না করে সে ব্যপারেও চাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশকে তার উভয় প্রতিবেশী ভারত এবং মিয়ানমারের সাথে ডিটারেন্স বজায় রাখতে হবে,তাতে উভয় দেশের যতই ভাল সম্পর্ক থাকুক না কেন।সার্বভৌমত্ব এবং স্বার্থের ব্যপারে আন্তর্জাতিক পলিটিক্সে কোন বন্ধু হয়না,হয় শুধু বিজনেস।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশকেও ঝানু ব্যবসায়ী হতে হবে। স্বাধীনতার ব্যপারে কারো সাথেই কোন ছাড় নেই।