নড়াইলে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে অভিযোগকারী নারীর ২৫ হাজার টাকায় রফাদফা,এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি

Uncategorized আইন ও আদালত

মো:রফিকুল ইসলাম,নড়াইলঃ
নড়াইলে ধর্ষণচেষ্টা মামলা’র বাদিনী ২৫ হাজার টাকায় ধর্ষণ চেষ্টাকারিকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিলেন এবং এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নড়াইলের বিছালী ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের আনোয়ার গাজীর বাড়িতে ভাড়া থাকা মৃত,সাজ্জাদ হোসেন এর স্ত্রী ১ ও ২ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য,হোসনেয়ারা বেগম (৩৫),কে গত (২০ মে) শুক্রবার রাত ৮-৩০ মিনিটে শেখ বায়জিদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি জোরপূর্বক ধর্ষণচেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেন ধর্ষণচেষ্টার শিকার হোসনেয়ারা বেগম। গত (২০ মে) শুক্রবার রাতে মহিলা মেম্বারের ঘরে ঢুকে ধর্ষণচেষ্টা করে,সংবাদ পেয়ে মহিলা মেম্বার হোসনেয়ারার মুঠোফোনে ধর্ষণচেষ্টার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক জানতে চাইলে,মেম্বার হোসনেয়ারা বলেন,বায়জিদ তার ঘরে ঢুকে তাকে বলে তোমার সাথে কথা আছে এবং তার মেয়েদের বলে তোমার মায়ের সাথে তার কথা আছে,তোমরা পাসের রুমে যাও,এর পরে তার মেয়েরা পাসের রুমে যাওয়া মাত্রই বায়জিদ ঘরের দরজা বন্ধ করে তাকে যোঁরপূর্বক ধর্ষণেরচেষ্টা করে। এসময় তার আন্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে বায়জিদকে ঘরে আটকে রেখে মির্জাপুর ফাড়ির পুলিশকে খবর দিলে সাথে সাথে পুলিশ এসে ধর্ষণচেষ্টাকারী সেখ বায়জিদ হোসেনকে আটক করে মির্জাপুর পুলিশ ফাড়িতে নিয়ে যায় বলেও মেম্বার হোসনেয়ারা বেগম জানান। অভিযোগের রেকোডিং সাংবাদিকদের কাছে সংগ্রহীত রয়েছে। পরে পুলিশ জিগ্গাসাবাদ শেষে বায়জিদ হোসেনকে নড়াইল সদর থানায় প্রেরন করেন। এদিকে রাত পার হলেই (২১মে) শনিবার ধর্ষণচেষ্টাকারী সেখ বায়জিদ হোসেনকে বিছালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: হেমায়েত হোসেন (ফকির ) ও পুরুষ মেম্বার মঈনসহ স্থানীয়’রা ধর্ষণচেষ্টার অভিযুক্তকে মিমাংসা করে থানা থেকে বের করে নিয়ে যায়। কথিত ধর্ষণচেষ্টার শিকার মহিলা মেম্বার হোসনেয়ারা বেগম এর কাছে অত্র প্রতিবেদক মুঠফোনে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা মিমাংসা কি ভাবে হলো বা আপনি কি ভাবে মিমাংসা করলেন,জানতে চাইলে মহিলা মেম্বার হোসনেয়ারা বেগম আরো জানান,আমাকে চেয়ারম্যান মামলা করতে দেয়নি,গ্রামের ব্যপার বলে ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে বলেন। আমি কোর্টে অভিযোগ পত্র লিখতে উকিলের কাছে আসলে,আমার উকিল খন্দকার সোহেলী সুলতানা শিলী’র চেম্বারে গিয়ে লিখিত এজাহার সম্পন্ন করি,এসময় আমাদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার মঈনসহ বেশ কয়েক জন এসে আমাকে মিমাংসা করতে বলে,এসময় আমার উকিল শিলী সামাজিক ভাবে মিমাংসা করতে হলে চেয়ারম্যান মো: হেমায়েত হোসেনকে ১ লাখ টাকা দিতে হবে বলার পরে চেয়ারম্যান ও মেম্বার ২৫ হাজার টাকায় মিমাংসা করে এবং আমার কাছ থেকে মিমাংসা পত্রে সই করে নিয়ে আমাকে দিয়েই বায়জিদ হোসেনকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় বলেও জানান। যার রেকোডিং সহ ভিডিও ফুটেজ সাংবাদিকদের কাছে সংগ্রহীত রয়েছে। অভিযুক্ত শেখ বায়জিদ হোসেন জানান,আমি সমাজ সামাজিকতা করি,আমাকে হোসনেয়ারা একাধিক বার ফোন করে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে আমাকে সমাজের কাছে হেউ করার জন্য তার লোক দিয়ে নাটক সাজিয়েছে। বায়জিদ হোসেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে আরো জানান,আমি কিছুই জানি না,আমি জেল হাজতে ছিলাম,আমাকে আমার চেয়ারম্যান আপনাদের ক্যামেরার সামনে স্বাক্ষাৎকার দিতে নিষেধ করেছে,আমি তার অনুমতি ছাড়া কিছু বলতে পারবো না,প্রতিবেদককে আরো বলেন,যা হয়েছে তা মিমাংসা হয়ে গেছে। এসময় বায়জিদ হোসেন মির্জাপুর ক্যাম্পের ইন্চার্জ এর সাথে মুঠফোনে কথা বলেন এবং কথা শেষে বায়জিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন,আইসি সাহেব বলেছেন এ মামলা আমাদের মিটানোর কোন এখতিয়ার নেই,এটা বেআইনি,আপনি সাংবাদিকদের কিছুই বলবেন না বলেও জানান,বায়জিদ হোসেন,কিন্তু এসময় সাংবাদিক’রা গোপন ক্যামেরায় বায়জিদ হোসেনের এ কথা বার্তার ভিডিও ফুটেজে ধারন করেন। যার ভিডিও ফুটেজ সাংবাদিকদের কাছে সংগ্রহীত রয়েছে। মির্জাপুর গ্রামের স্থানীয় সৈয়দ রবিউল ইসলাম,ঘটনার সতত্যা শিকার করে বলেন,মিমাংসা করার সময় আমি নিজেই উপস্থিত ছিলাম,উকিল শিলী’র কাছে মেম্বার মঈনসহ সবাই গিয়েছিলাম,উকিল শিলী আমাদের বলে,মেয়েলী ব্যপার কোর্টে উঠলে সন্মানের ব্যপার,আমিও তো একটা মেয়ে,এটা আপনারা মিমাংসা করে নেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ফোন করে মিটিয়ে নিতে বলেন।ততক্ষনে মামলা করার জন্য কাগজ রেডি হয়ে গেছে,এসময় চেয়ারম্যান এসে বলে গ্রামের ব্যপার,আমাদের সন্মানের ব্যপার,কেস কারবারীর দরকার নেই,আমরাই মিটিয়ে ফেলি, শিকারোক্তির দোষ না,মেম্বার মঈন আর আমি মিটিয়ে ফেলি। এসময় উকিল শিলী আপা অনেক কথা বলার পরে চেয়ারম্যানকে মিমাংসা করতে ১ লাখ টাকার কথা বলে,পরে ২৫ হাজার টাকায় মিমাংসা হয় এবং আপস নামায় হোসনেয়ারা সই করে বলেও জানান। যার ভিডিও স্বাক্ষাৎকার সাংবাদিকদের কাছে সংগ্রহীত । নাম পরিচয় জানাতে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধীক ব্যক্তী জানান,ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টা এটা একটি সামাজিক ব্যাধি,যদি বায়জিদ হোসেন ধর্ষণচেষ্টা করে থাকে তাহলে তার বিচার আইন করবে,আর যদি সাজানো নাটক হয় তাহলে মহিলা মেম্বার হোসনেয়ারা’র বিচার হবে,এবং যদি বায়জিদ হোসেন এমন অপকর্ম করে তাহলে তার বিচার করবে আইন আদালত,তাহলে কিভাবে টাকার বিনিময়ে আপস মিমাংসা করলো চেয়ারম্যান মেম্বার,এরা কি আইনের উর্ধ্বে।
মির্জাপুর গ্রামের জন্য এটা একটা বড় অপমানের বিষয় টাকার বিনিময়ে ধর্ষণচেষ্টার মত জঘন্য ঘটনা টাকার বিনিময়ে রফাদফা হবে। অপরাধী যেই হোক না কেন বিচার তার হতেই হবে। অপরাধ দুই জনের যে কোন একজন করেছে,অপরাধ যেই করুক না কেন,তদন্ত করে তার বিচার আদালত করবে কিন্তু এত বড় একটা ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা,চেয়ারম্যান,মেম্বার মিমাংসা করতে পারে না। এটাও একটা অপরাধের নতুন সুচনা ও বড় অপরাধের সামিল বলেও জানান। এ ধর্ষণচেষ্টার মিমাংসাকারী মেম্বার মঈনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,টাকা পয়সা দিয়ে তিনি মিটমাট করিনি,চেয়ারম্যান টাকা দিয়ে মিটমাট করেছে কি না সে বিষয়ে তিনি অবগত নন। বিছালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো:হেমায়েত হোসেন (ফকির) জানান,আমি চেয়ারম্যান হিসাবে মিমাংসা করে দিয়েছি কিন্তু কোন টাকার বিনিময়ে মিটমাট করিনি।
এ বিষয়ে মির্জাপুর ক্যাম্পের ইন্চার্জ মুরসালীন ঘটনার সতত্য শিকার করে বলেন,খবর পেয়ে বায়জিদ হোসেন নামের এক জনকে আটক করে নড়াইল সদর থানায় প্রেরণ করেন,বলেও তিনি জানান। এদিকে এ ধর্ষণচেষ্টা ঘটনার সংবাদ মূহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রচার হয়। এবিষয়ে এ্যাডভোকেট খন্দকার সোহেলী সুলতানা শিলী জানান,মির্জাপুর গ্রাম থেকে এক মহিলা মেম্বার হোসনেয়ার বেগম নামের একজন আমার কাছে মামলা করার জন্য সাহাজ্য নিতে আসে,এসময় আমি আমার মামলার পস্তুতি শেষের দিকে চেয়ারম্যান ও মেম্বার আসলে আমি কোর্টে চলে যায়। পরে ওটা টাকার বিনিময়ে মিটমাট করেছে কি না জানিনা কিন্তু আমার সামনে বা আমি টাকার দিয়ে মিটমাটের বিষয় জানি না বলেও জানান। নড়াইল সদর থানার অফিসার ইন্চার্জ (ওসি) সৈকত কবীর জানান,বিছালী ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের মহিলা মেম্বারকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে বায়জিদ নামের এক জনকে আটক করে থানা হাজতে প্রেরণ করা হয়। পরে মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার আপস নামা করে এবং দুই জনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জন্য এমন ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান। আপসকারীদের জবানবন্ধি মোবাইলে রেকোর্ড করা আছে বলেও জানান।


বিজ্ঞাপন