নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, র্যাব এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ নির্মূলের লক্ষ্যে অত্যন্ত আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূল ও মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি খুন, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, অস্ত্রধারী ও ছিনতাই চক্রের সাথে জড়িত বিভিন্ন সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে র্যাবের জোরালো তৎপরতা অব্যাহত আছে।
জানা গেছে, গত ২ আগস্ট ২০১১ তারিখে মোঃ রেজাউল মন্ডল (৩৭) মামলার বাদী মোঃ ইসমাইল হোসেনের বড় বোন ভিকটিম সালেহা বেগমকে হত্যা করে।
যার প্রেক্ষিতে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানায় মামলা নং ০১(১০)১১ তারিখ ২ আগস্ট ২০১১ একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। মামলা হওয়ার পর এজাহারনামীয় আসামি মোঃ রেজাউল মন্ডল (৩৭) ধরা পড়ে এবং ৪ বছর হাজত খেটে ২০১৫ সালে জামিনে বের হয়ে পরে আত্নগোপনে চলে যায়। পরে আদালত উক্ত মামলার বিচারকার্য শেষে আসামী মোঃ রেজাউল মন্ডলকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। আসামীর বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক দায়েরকৃত যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানা রুজু হবার পর হতে গ্রেফতার কৃত আসামী মোঃ রেজাউল মন্ডল নিজেকে আত্মগোপন করার জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতো।
এরই ধারাবাহিকতায়, র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শুক্রবার ১০ জুন রাত ১ টা ৩০ মিনিটের সময় সময় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ রেজাউল মন্ডল (৩৭) কে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দঘাট থানাধীন নিহালপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ রেজাউল মন্ডল (৩৭) ও সালেহা বেগমের স্বামী সিরাজুল ইসলাম (সের্জাল) উভয়রই পাটুরিয়া ঘাটে চায়ের দোকান ছিল এবং তাদের একে অপরের বাসাও পাশাপাশি ছিলো বিধায় একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সালেহা বেগমের সাথে আসামি রেজাউলের ঘনিষ্ঠতা প্রেমের সম্পর্কে রুপ নেয়। এমনকি সালেহা বেগমের স্বামীর অনুপস্থিতিতে আসামি রেজাউল তার বাড়িতে আসা যাওয়া শুরু করে।
বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার পরে ঘটনার দিন গত ১ আগস্ট ২০১১ তারিখ দিবাগত রাতে অনুমান ১১টা ৫৫ মিনিটের এর দিকে আসামি রেজাউল সালেহা বেগমের স্বামী সিরাজুল এর অনুপস্থিতিতে তার বসত ঘরে প্রবেশ করলে সালেহা বেগম রেজাউলকে বিয়ের জন্য চাপাচাপি শুরু করায় তাদের মধ্যে বাক বিতন্ডা শুরু হয়। বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে রেজাউল, সালেহা বেগমের পরনের কাপড়ের আচল দিয়ে সালেহা বেগমের গলা পেচিয়ে ধরলে শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মুহুর্তেই সালেহা বেগম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এবং আসামি রেজাউল পালিয়ে যায়।
এরপর রেজাউলকে একমাত্র আসামি করে সালেহা বেগমের ছোট ভাই ইসমাইল হোসেন বাদি হয়ে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার মামলা নং ০১(১০)১১ তারিখ ২ আগস্ট ২০১১ একটি হত্যা মামলা রুজু করলে পরের দিনই আসামি রেজাউল থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পরবর্তীতে ৪ বছর জেলে থাকার পর ২০১৫ সালে মামলার চুড়ান্ত রায়ের পূর্বেই আসমি রেজাউল জামিনে বের হয়ে তার শাস্তি নিশ্চিত জেনে আত্নগোপনে চলে যায়।
গত ৭ বছর ধরে আসামি রেজাউল বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রথমে দৌলতদিয়া ও পরে ঢাকা জেলার সাভার, আশুলিয়া ও নবীনগর এলাকায় আত্মগোপনে থাকার পর গত শুক্রবার ১০ জুন, রাতে আসামি রেজাউল রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ ঘাট থানা এলাকার নিহালপুর গ্রামে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে বর্নিত ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী’কে মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম করা হয়েছে । ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে র্যাবের জোরালো অভিযান অব্যাহত থাকবে।