নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ কিশোরগঞ্জে চাঞ্চল্যকর মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া (৫৫) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন সহ ঘটনার সহিত জড়িত সন্দিগ্ধ আসামী মোঃ হারিছ মিয়া (৫০) কে গ্রেফতার করলো পিবিআই কিশোরগঞ্জ।
ডিসিস্ট মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া (৫৫), পিতা মৃত তাহের উদ্দিন, সাং- সুলতান নগর, থানা- করিমগঞ্জ, জেলা- কিশোরগঞ্জ গ্রেফতারকৃত সন্দিগ্ধ আসামী মোঃ হারিছ মিয়া (৫০), পিতা- মৃত আঃ হাফিজ, সাং- সুলতান নগর, থানা করিমগঞ্জ, জেলা- কিশোরগঞ্জ এর মরিচখালী বাজারস্থ ভাতের হোটেলে কমচারী হিসেবে কাজ করত। ডিসিস্ট মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া (৫৫) গত ২৪ মে ২০২২ তারিখে বিকাল অনুমান ০৩.০০ ঘটিকার সময় কাউকে কিছু না বলে বাড়ী হতে বের হয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে না আসায় বাদীর পিতাকে যুজাখুজির এক পর্যায়ে গত ২৭ মে ২০২২ তারিখ দুপুর অনুমান ১ টা ৩০ মিনিটের সময় বাদীর পিতা মতিউর রহমানের খন্ডিত লাশের উপরের অংশ সুলতান নগন গ্রামস্থ জনৈক আশরাফ উদ্দিনের কবরস্থানে আশরাফ উদ্দিনের বোন ছলেমন্নেছার কবরের পাশে পাওয়া যায়। সংবাদ প্রাপ্তি পর পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইসিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতঃ ছায়া তদন্ত শুরু করে।
উক্ত ঘটনায় নিহতের পুত্র মোঃ রমজান আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে করিমগঞ্জ থানায় মামলা নং- ২৩, তারিখ- ২৭/০৫/২০২২ খ্রিঃ, ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করলে অফিসার ইনর্চাজ, করিমগঞ্জ থানা সাহেবের হাওলা মতে মামলার তদন্তভার ইন্সপেক্টর (নিঃ) জয়নাল আবেদীন এর উপর তদন্তভার অর্পন করেন। মামলাটি পিবিআই সিডিউলভুক্ত হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার ৯ জুন পিবিআই কিরোশগঞ্জ জেলা মামলাটি অধিযাচন করে। পুলিশ সুপার, পিবিআই কিশোরগঞ্জ জেলা এর হাওলা মতে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোহাম্মদ সাখরুল হক খান বিধি মোতাবেক মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন এবং তদন্তের জন্য তৎপর হন।
এক পর্যায়ে, পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পুলিশ সুপার মোঃ শাহাদাত হোসেন, পিপিএম এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোহাম্মদ সাখরুল হক খান এর নেতৃত্বে পিবিআই কিশোরগঞ্জের একটি একটি অভিযানিক টিম গত বৃহস্পতিবার ৯ জুন তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাত্রি ২ টা ৩০ মিনিটের সময় নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানাধীন জিমটি বাজার এলাকা থেকে মামলার ঘটনার সহিত জড়িত সন্দিগ্ধ আসামী মোঃ হারিছ মিয়া (৫০), পিতা- মৃত আঃ হাফিজ, সাং- সুলতান নগর, থানা- করিমগঞ্জ, জেলা- কিশোরগঞ্জ কে গ্রেফতার করে। মামলা ঘটনার সহিত জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ হারিছ মিয়াকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ডিসিস্ট মতিউর রহমান ওরফে মতি মিয়া (৫৫), পিতা মৃত তাহের উদ্দিন, সাং- সুলতান নগর, থানা- করিমগঞ্জ, জেলা- কিশোরগঞ্জ গ্রেফতারকৃত সন্দিগ্ধ আসামী মোঃ হারিছ মিয়া (৫০), পিতা- মৃত আঃ হাফিজ, সাং- সুলতান নগর, থানা করিমগঞ্জ, জেলা- কিশোরগঞ্জ এর মরিচখালী বাজারস্থ ভাতের হোটেলে কমচারী হিসেবে কাজ করত। ভিকটিম মতিউর রহমান আসামী হারিছ মিয়ার হোটেলের কমর্চারী হইলেও তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। অনুমান ৫/৬ বছর পূর্বে মতি মিয়ার স্ত্রী মারা যায়। এরপর হতে মতি মিয়া দিনে হোটেলে কাজ করিয়া রাতে আসামী হারিছ মিয়ার সাথেই তার হোটেল ঘরে ঘুমাতো।
গত ফাল্গুন মাসের ১৩ তারিখে মতি মিয়া তার ছোট মেয়ের সংসারে ফার্ণিচার কিনে দেওয়ার কথা বলিয়া আসামীর কাছে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা ধার চাহিলে আসামী হারিছ মিয়া মতি মিয়াকে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা ধার দেয়। অ্য মামলার ঘটনার ৩/৪ দিন পূর্বে মতি মিয়া তার বড় মেয়ের জামাইকে বিদেশ পাঠানোর উদ্দেশ্যে পুনরায় আসামীর কাছে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা ধার চাহিলে আসামী তাকে উক্ত ঢাকা ধার দেয়।
মতি মিয়া উক্ত টাকা নিয়া সিলেট যায় এবং সিলেট থেকে ফেরার পর ঘটনার দিন সকালে মতি মিয়া আসামী হারিছ এর নিকট হইতে ধার নেওয়া ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা হারিয়ে ফেলেছে বলে জানিয়ে বাড়ীতে চলে যায়। আসামী হারিছ মিয়ার বিধবা বোন রেজিয়াকে ভিকটিম মতি মিয়া বিবাহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও তাহাকে বিবাহ না করিয়া অভ্র ঘটনার ৬ দিন পূর্বে ২১ মে ২০২২ তারিখে ভিকটিম মতিউর রহমান দড়ি গাঙ্গাটিয়া গ্রামের মৃত কচুম আলীর মেয়ে দোলেনাকে বিবাহ করায় এবং ভিকটিম মতি মিয়া আসামী হারিছ মিয়ার নিকট থেকে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা ধার নিয়া টাকা হারানোর অজুহাত দেখানোয় ভিকটিম মতি মিয়ার প্রতি আসামী হারিছ চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন দুপুর ১২ টার দিকে মতি মিয়া মরিচখালী বাজারে এসে আসামী হারিছ মিয়ার সাথে বসে চা-পান খেয়ে তার শ্বশুর বাড়ি গাঙ্গাটিয়া চলে যায়। মতি মিয়া গাঙ্গাটিয়া হতে রাত সাড়ে ৮ টার সময় মরিচখালী বাজারে আসামী হারিছ মিয়ার দোকানে আসলে আসামী হারিছ মিয়া পরিকল্পিতভাবে ভিকটিম মতি মিয়াকে নিয়া কেক পাউরুটি যায় এবং সু-কৌশলে কোকের সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিয়ে মতি মিয়াকে খাইয়ে দেওয়ার পর মতি মিয়া দোকান ঘরে ঘুমিয়ে পরে।
রাত অনুমান ১২ টার দিকে আসামী হারিছ মিয়া তাহার হোটেল ঘরে ঘুমন্ত মতি মিয়াকে ধারালো দা দিয়া নৃশংসভাবে কুপাইয়া দেহকে দ্বিখন্ডিত করে হত্যা করে এবং লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ডিসিস্ট মতি মিয়ার দ্বিখন্ডিত লাশের একটি অংশ সুলতান নগর গ্রামস্থ ছলেমন্নেছার কবরের পাশে রেখে আসে এবং অপর অংশটি কাঁথা দিয়া মোড়াইয়া বস্তায় ভরিয়া নদীতে ফেলে দেয় মর্মে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। এরপর ফৌঃকাঃবিঃ আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদানের নিমিত্তে বিধি মোতাবেক তাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে আসামী মোঃ হারিছ মিয়া আদালতে মামলার ঘটনার সহিত জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।