নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর হাবিবুর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন সহ ঘটনার সাথে জড়িত ৩ জন আসামীকে গ্রেফতার পূর্বক আদালতে সোপর্দ্দ এবং স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি রের্কড সহ আসামীদের জবানবান্দি মোতাবেক ঘটনার সহিত জড়িত অপর দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা।
জানা গেছে, গত ১৪/০২/২০২১ তারিখ ভিকটিম মোঃ হাবিবুর ইসলাম (২০) সকাল অনুমান ১১ টার সময় চন্দনাইশ পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড পূর্ব চৌধুরী পাড়া দীঘির পাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বাড়ীতে আসে। ভিকটিম মোঃ হাবিবুর ইসলাম বাড়ীতে এসে কাপড়-চোপড় পরিবর্তন করে। ঐ দিন সকাল অনুমান সাড়ে ১১ টার সময় পুনরায় ঘর থেকে বের হয়ে ভোট গ্রহণ দেখার জন্য ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ গাছবাড়ীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায়। বেলা অনুমান ১২ থেকে সাড়ে ১২ টার সময় দক্ষিণ গাছবাড়ীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে গ্রেফতারকৃত আসামী সহ তাহাদের সহযোগী অপরাপর আসামীগণ সহকারে আগ্নেয়াস্ত্র সহ পরস্পর যোগসাজসে একই উদ্দেশ্যে বেআইনী জনতাবদ্ধে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গোলা-গুলি করে। আসামীদের বর্ষণকৃত গুলির আঘাতে ভিকটিম হাবিবুর ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন ভিকটিমকে চন্দনাইশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
উক্ত হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভিকটিমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চ.মে.ক হাসপাতালে রেফার করেন। চ.মে.ক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় গত ২১/০২/২০২১ তারিখ সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটের সময় ভিকটিম হাবিবুর ইসলাম (২০) মৃত্যুবরণ করেন। এই সংক্রান্তে ভিকটিমের মা ছকিনা খাতুন বাদী হয়ে চন্দনাইশ থানার মামলা নং-২০, তাং-২১/০২/২০২১ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। বহুল আলোচিত উল্লেখিত হত্যা মামলাটি আদালতের নির্দেশে পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলার নিকট তদন্তভার ন্যস্ত হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার এসআই (নিঃ) শফিউল আলম’কে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তিনি এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন।
মামলাটি সুষ্ঠুভাবে তদন্তের লক্ষ্যে পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম সার্বিক দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) শফিউল আলম এর নেতৃত্বে এবং পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, পিপিএম—সেবা এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে গত শনিবার ১১ জুন বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বর্ণিত হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত ২ জন আসামী যথাক্রমে, মোঃ আব্দুর রহিম (৩৪), পিতা-মুক্তিযোদ্ধা কবির আহমদ, সাং-দক্ষিণ গাছবাড়িয়া, সৈয়দ মাহমুদ পাড়া, ৮নং ওয়ার্ড, চন্দনাইশ পৌরসভা ও মোঃ মোরশেদুল আলম (৪০), পিতা-মৃত ওমর আলী, সাং-দক্ষিণ গাছবাড়ীয়া, ছৈয়দ মোহাম্মদ পাড়া, ৮নং ওয়ার্ড, চন্দনাইশ পৌরসভা, উভয় থানা-চন্দনাইশ জেলা-চট্টগ্রাম। রাত অনুমান ১১ টার সময় চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ থানাধীন গাছবাড়ীয়া এলাকা হতে গ্রেফতার পূর্বক গতকাল রবিবার ১২ জুন আদালতে সোপর্দ করা হয়।
উল্লেখ যে, বর্ণিত হত্যা মামলার ঘটনায় গত বুধবার ৮ জুন আসামী, মোঃ শাখাওয়াত প্রঃ শওকত (৩৮), কামরুল আজাদ সুমন (৩২) এবং মোঃ আজাহার উদ্দিন (২৯) দেরকে গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়।
সোপর্দকৃত আসামী কামরুল আজাদ সুমন গত বৃহস্পতিবার ৯ জুন উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িত মর্মে নিজেকে জড়িয়ে ও অপরাপর আসামীদের নাম উল্লেখ পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। অপর দুই আসামীকে আদালত ৩ (তিন) দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডে থাকাকালীন আসামী মোঃ শাখাওয়াত প্রঃ শওকত গত শনিবার ১১ জুন আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে এবং আসামী আজাহার উদ্দিন (২৯) গতকাল রবিবার ১২ জুন ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
উল্লেখ্য গ্রেফতারকৃত আসামীদের স্বীকারোক্তিতে প্রকাশিত আরও ২ আসামী মোঃ আব্দুর রহিম (৩৪) ও মোরশেদুল আলম (৪০) কে গত শনিবার ১১ জুন গ্রেফতার পূর্বক ৭(সাত) দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন সহ গতকাল রবিবার ১২ জুন আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বর্ণিত আসামীদেরকে গ্রেফতারের মাধ্যমে ভিকটিম মোঃ হাবিবুর ইসলাম হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনার সহিত সম্পৃক্ত পলাতক অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এবং মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।