চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর শিশু ইফতেকার (৭) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন সহ ২ শিশু হত্যাকারী গ্রেফতার

Uncategorized অপরাধ

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর চাঞ্চল্যকর শিশু ইফতেকার (৭) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে সহিত জড়িত ২ শিশু গ্রেফতার সহ আলামত উদ্ধার করেছে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা।

জানা গেছে, ভিকটিম ইফতেকার মালেকুল মাসফি (০৭) কে ঘটনাস্থল আল্লামা শাহ অছিয়র রহমান মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানা, চরণদ্বীপ দরবার শরীফে হেফজ বিভাগে ঘটনার ৫ (পাঁচ) মাস পূর্বে ভর্তি করায়। সে উক্ত মাদ্রাসার হেফজ খানার হলে থেকে লেখাপড়া করতো। গত ৫ মার্চ ২০২২ তারিখ সকাল অনুমান সাড়ে ৭ টায় সময় মাদ্রাসার শিক্ষক জাফর আহাম্মদ বাদীর বাড়ীতে গিয়ে জানান যে, ভিকটিম ইফতেকার মালেকুল মাসফি (০৭) কে খুঁজিয়া পাওয়া যাইতেছে না। তখন ভিকটিমের অভিভাবক ও আত্মীয়,স্বজন দ্রুত মাদ্রাসায় পৌঁছাইয়া মাদ্রাসার আশপাশ সহ অভ্যন্তরে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। খোঁজাখুঁজি একপর্যায়ে একই দিন সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটের সময় সময় উক্ত মাদ্রাসার ২য় তলায় মাদ্রাসার স্টোর রুমের ভিতরে দক্ষিণ কোনায় কম্বল ও তোষক দিয়া মোড়ানো গলাকাটা রক্তাক্ত অবস্থায় ভিকটিমের মৃতদেহ পায়। মাদ্রাসার অন্যান্য ছাত্রদের চিৎকারে মাদ্রাসার শিক্ষকগন সহ আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। এই সংক্রান্তে ভিকটিমের মামা মোঃ মাসুদ খাঁন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বোয়ালখালী থানায় মামলা নং—০৫, তারিখ—০৬/০৩/২০২২, ধারা—৩০২/৩৪ পেনাল কোড আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বহুল আলোচিত হওয়ায় এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার স্মারক নং৪৪.০১.০০০০.০৩৫.২৫.০২৪.২০২২—৭৫৫, তাং ১৬ মার্চ ২০২২, পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।

পুলিশ সুপার, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা এর হাওলা মতে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) সিরাজুল ইসলাম বিধি মোতাবেক মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করেন।

এক পর্যায়ে পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সার্বিক দিক নির্দেশনায় এবং পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, পিপিএম সেবা, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) সিরাজুল ইসলাম এর নেতৃত্বে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার একটি চৌকস টিম গত ১৮ জুন ঘটনাস্থল আল্লামা শাহ অছিয়র রহমান মাদ্রাসা হেফজখানা ও এতিমখানা, চরণদ্বীপ দরবার শরীফের হেফজ বিভাগের সকল ছাত্রদের অভিভাক সহ পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে এনে অভিভাকদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শিশু আমান (ছদ্মনাম) (১২) ও শিশু জামান (ছদ্মনাম) (১২) দ্বয় ভিকটিম ইফতেকার মালেকুল মাসফি(০৭) কে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের নাম প্রকাশ করে।
দুইজন শিশুর স্বীকারোক্তি মোতাবেক শিশু ভিকটিম ইফতেকার মালেকুল মাসফি (০৭) হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অপর দুই শিশু যথাক্রমে আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) এবং আহাদ (ছদ্মনাম) (১৫) কে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে একপর্যায়ে তারা হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ছিল বলে স্বীকার করে। স্বীকারোক্তির প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকান্ডের কারন হিসেবে জানা যায় যে, ঘটনাস্থল হেফজখানা মাদ্রাসাটি ভিকটিমের বাড়ীর পাশে। ভিকটিমকে তার অভিভাবক প্রায় সময় বাড়ীর রান্না করা খাবার ও নাস্তা পাঠাতো । ভিকটিমের বাড়ী থেকে পাঠানো খাবার ও নাস্তাগুলো গ্রেফতার কৃত দুই শিশু খেয়ে ফেলতো। এই বিষয়টি শিশু ভিকটিম ইফতেকার মালেকুল মাসফি (০৭) তাহার বড় ভাই ইমতিয়াজ মালেকুল মাজেদকে জানায়। তখন ভিকটিমের বড় ভাই শিশু আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) কে ভিকটিমের খাবার খেতে নিষেধ করে এবং মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা জাফর আহাম্মদকে বিষয়টি জানায়। ভিকটিমের খাবার খেতে নিষেধ করায় আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) ভিকটিমের উপর ক্ষিত হয় এবং তা মনের মধ্যে পুষে রাখে।
ঘটনার দিন ভোর অনুমান ৬ টা ৪০ মিনিটের সময় শিশু আমান (ছদ্মনাম) (১২) পড়া দেওয়ার জন্য শিশু আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) কে খোঁজাখুঁজি করতে মাদ্রাসার দোতলার স্টোর রুমের সামনে পৌঁছাইলে স্টোর রুমের সামনে আহাদ (ছদ্মনাম) (১৫) কে পাঁয়চারী করা অবস্থায় দেখতে পায়। তখন শিশু আমান (ছদ্মনাম) (১২) স্টোর রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে ভিতরে তাকালে শিশু আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) কে ভিতরে দেখতে পায়। সে আরো দেখতে পায় যে, ভিকটিমকে আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) কম্বল দিয়ে চেপে ধরেছে , ভিকটিমের কান্নার শব্দ ও আমি আর কাউকে কিছু বলব না বলে ভিকটিমের কান্না শুনতে পায়। তখন স্টোর রুমের সামনে অবস্থানরত আহাদ (ছদ্মনাম) (১৫) শিশু আমান (ছদ্মনাম) (১২) কে ঘটনাস্থল থেকে নিচে চলে যেতে বলে এবং কাউকে কিছু না বলার জন্য হুমকি দেয়। আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) ভিকটিমকে ঘটনাস্থল স্টোর রুমে নিয়া দেওয়ালের সাথে ভিকটিমের মাথায় জোরে আঘাত করে। আহাদ (ছদ্মনাম) (১৫) ভিকটিমের পা চেপে ধরে আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) গলায় ছুরি দিয়া জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং কম্বল দিয়ে মোড়াইয়া রেখে সে নিচতলার হেফজখানার রুমে চলিয়া যায়। শিশু আসাদ (ছদ্মনাম) (১৫) এর স্বীকারোক্তি, দেখানো ও সনাক্তমতে ঘটনাস্থল হইতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি, কম্বল, ট্রাংক ও লাশ ঢেকে রাখার ব্যবহৃত ব্যানার উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। গ্রেফতার কৃত উক্ত দুই শিশুকে গত ১৯ জুন, শিশু আদালতে উপস্থাপন করা হইলে উভয়েই ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *