বন্যায় দুর্গত মানুষের দুর্দশা লাঘবে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা

Uncategorized অন্যান্য

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা সৃষ্টি হয়েছে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে। শুরু থেকেই সতর্কতার সাথে এই বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রথম দিনেই বিভিন্ন অঞ্চলে আটকে পড়া বন্যার্তদের উদ্ধারে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। একইসঙ্গে বন্যাকবলিত মানুষদের যেকোনো প্রয়োজন মেটাতে শুরু থেকেই ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সর্বোস্তরের নেতাকর্মীরা। দুর্গতদের উদ্ধার করা এবং তাদের খাদ্য ও ওষুধের প্রয়োজন মেটাতে ঢাকা থেকে সিলেটের প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিয়মিত নির্দেশনা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। যেকারণে, স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বন্যা সৃষ্টি হলেও গণহারে প্রাণহানির মতো বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে। শুধু তাই নয়, বন্যাপরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত কাটিয়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নিজ চোখে বন্যা-পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ২১ জুন দুর্গত অঞ্চল পরিদর্শন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টার নিয়ে ২ ঘণ্টা সময় ধরে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বন্যা উপদ্রুত এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। এরপর সিলেট সার্কিট হাউজে স্থানীয় প্রশাসন, সেনা বাহিনী, বিজিবিসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দলীয় নেতাকর্মী ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন। দুর্যোগ মোকাবিলায় এর আগে কোনো সরকার প্রধানকে এভাবে বহুমুখী উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এসময় বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য এবং পরবর্তী করণীয় বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও উপস্থিত ব্যক্তিদের সবার বক্তব্য শোনেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা জানান, বন্যার শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে গিয়েছিল। এমনকি বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা ছবি ও তথ্য পাঠিয়ে নিজ নিজ অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির খবর দিয়েছে প্রতিনিয়ত। সার্বক্ষণিক তথ্য পাওয়ায় বন্যার প্রাথমিক ধাক্তা মোকাবিলা করা সহজ হয়েছে সরকারের জন্য। শুরু থেকেই তৎপর থাকায় স্থানীয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বন্যা মোকাবিলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিকূলতার কারণে যেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পৌঁছাতে পারেনি, সেখানকার ছবি ও তথ্য পাঠিয়েছের তারা। সেই ছবি আমি সেনাপ্রধান, আমাদের অফিস, বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। তারা মানুষকে উদ্ধার করতে পেরেছে।’
এরপর দুপুরে দিকে, সিলেটে অবস্থিত হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার ও এরপর হজরত শাহ পরান (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করেন। এসময় পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও ফাতেহা পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্যোগের কারণে বিপদগ্রস্ত মানুষদের জন্য এবং সার্বিকভাবে জাতির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য দোয়া ও মোনাজাত করেন তিনি।
বন্যা দুর্গতদের চিকিৎসার জন্য তিনশ’র বেশি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে এবং ২৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং ১৩০৭ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
বন্যা মোকাবিলা প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভৌগলিক কারণেই বাংলাদেশের মানুষকে সবসময় এধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করতে হবে, এই মানসিকতা সবার থাকতে হবে। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নও এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে করতে হবে। সিলেট, সুনামগঞ্জ অঞ্চলে উঁচু করে রাস্তা বানানো যাবে না। এসব অঞ্চলে এলিভেটেড রাস্তা হবে। এতে রাস্তা আর নষ্ট হবে না। দুর্যোগ এলেও সুবিধা পাওয়া যাবে। এছাড়া, নদীর বৈশিষ্ট্য মাথায় রেখে ড্রেজিং করতে হবে। একবার ক্যাপিটেল ড্রেজিং করার পর প্রতিবছর ড্রেজিং করতে হবে।’সরকারের সতর্কতা প্রসঙ্গে তিনি আরেও বলেন, ‘আষাঢ় মাসে এই অঞ্চলে বন্যা হল। এরপর মধ্য ও দক্ষিণ অঞ্চলে বন্যা হবে। সেভাবেই প্রস্তুতি রাখতে হবে। শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওষুধ, খাবার পানি সব সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে খাদ্যমন্ত্রীকে আগে থেকেই বলেছিলাম এবার বন্যা আসবে। খাদ্য গুদামে পানি আসতে পারে। তাই সার এবং খাদ্য গুদাম রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।’শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, ‘সিলেট অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের যত খাদ্য এবং ওষুধ লাগে সব দেওয়া হবে। বন্যায় মাছচাষিরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন, সেজন্য ব্যবস্থা নেবে সরকার। বন্যায় যারা কাজ করছেন, তাদেরও সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে।’ বন্যার পানিতে যাতে ঠাণ্ডা লেগে কেউ অসুস্থ না হন, সেজন্য স্বেচ্ছাসেবী ও উদ্ধারকর্মীদেরও সতর্ক থাকার আহ্বানও জানান তিনি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সৃষ্টির পর ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভাষণের শুরুতেই উল্লেখ বলেছিলেন, ‘এমন এক বিশ্ব-ব্যবস্থা গঠনে বাঙালি জাতি উৎসর্গীকৃত, যে ব্যবস্থায় সব মানুষের শান্তি ও ন্যায়বিচার লাভের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে।’ বঙ্গবন্ধুর মানবিক রাষ্ট্র গড়ার দর্মন থেকেই তার কন্যা শেখ হাসিনা দুর্যোগ মোকাবিলায় অসহায় মানুষের পাশে থাকাকে তার অন্যতম একটি প্রধান দায়িত্ব হিসেবে পালন করে আসছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর, ১৯৯৭ সালে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কক্সবাজার জেলার পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেক হাসিনা। অসহায় মানুষদের দুর্দশা লাঘবের জন্য এরপর তিনি সারা দেশের গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে শুরু করেন ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’। আশ্রয়ণ প্রকল্প, গুচ্ছগ্রাম, গৃহায়ণ, ঘরে ফেরা, বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় দশ লাখের অধিক পরিবারকে পুনর্বাসন করেছেন তিনি। ১৯৯৮ সালের বন্যায় যখন বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক প্লাবিত হয়েছিল, তখনও দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *