প্রাক্তন স্ত্রীর বর্তমান স্বামী খুন, ঘটনার মুল রহস্য উন্মোচন সহ ১ জন কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই বগুড়া

Uncategorized আইন ও আদালত

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ মেয়ের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের জন্য প্রাক্তন স্ত্রী এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধনের কপি দিতে রাজী না হওয়ায় প্রাক্তন স্ত্রীর বর্তমান স্বামী ডিসিস্ট মহসিন হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন সহ ঘটনার সহিত জড়িত আসামী শাহীনুরকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই বগুড়া জেলা।

জানা গেছে , ডিসিস্ট মহসিন গত ৭ জুন বিকাল অনুমান ৩ টার সময় বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও ডিসিস্ট মহসিন তার বাড়ীতে না ফেরায় তার পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও ডিসিস্ট মহসিনের পরিবারের লোকজন তার সন্ধান পায় না।

গত ৮ জুন, সকাল অনুমান ৭ টার সময় মোলামগাড়ী বাজার হইতে করিমপুর গামী রাস্তার দক্ষিন পাশে বামন গ্রামস্থ জৈনক মোঃ নজরুল ইসলাম মাস্টার, পিতাঃ নুরুল প্রামাণিক এর ধান ক্ষেতের উত্তর পূর্ব কোনে পানিতে লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন কালাই থানায় খবর দেয়।
উক্ত সংবাদের প্রেক্ষিতে ডিসিস্ট মহসিনের পিতা মোহাম্মদ আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলের লাশ সনাক্ত করেন। এর প্রেক্ষিতে পিবিআই বগুড়া জেলার “ক্রাইমসিন টিম” ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার বিষয়ে ছায়া তদন্ত করতে থাকে।

উক্ত ঘটনায় ডিসিস্ট মহিসিনের পিতা বাদী হয়ে জয়পুরহাট জেলার কালাই থানার মামলা নং—০৭, তারিখ— ০৮/০৬/২০২২, ধারাঃ ৩০২/৩৪ পেনাল কোড আইনে মামলা দায়ের করে।

পরবর্তীতে গত মঙ্গলবার ২১ জুন, পিবিআই বগুড়া জেলা স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।

পুলিশ সুপার পিবিআই, বগুড়া জেলা এর হাওলা মতে এসআই (নিঃ) মোঃ সবুজ আলী মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন।
অ্যাডিশনাল আইজিপি পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পুলিশ সুপার, পিবিআই বগুড়া মোঃ আকরামুল হোসেন এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্ত এসআই (নিঃ) মোঃ সবুজ আলী গত মঙ্গলবার ২১ জুন, বিকাল ৪ টার সময় গাজীপুর মেট্রোপলিটনের গাছা থানাধীন ছয়দানা হাজীরপুকুর এলাকা হতে ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামী মোঃ শাহীনুর রহমান @ শাহীন (৩৩), পিতাঃ নঈম উদ্দিন, সাং—চাকরাইল, থানাঃ বদলগাছি, জেলাঃ নওগাঁ কে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার পরবর্তী সময়ে উক্ত ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ শাহীনুর রহমান @ শাহীন নিজেই উক্ত ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ শাহীনুর রহমান @ শাহীন জানান যে, ডিসিস্ট মহসীন আলী (২৬) এর বর্তমান স্ত্রী মোছাঃ শারমীন সুলাতানা শাকিলা আসামী শাহীনের প্রাক্তন স্ত্রী ছিল।

পারিবারিক জটিলতার কারণে এক বছর পূর্বে তার প্রাক্তন স্ত্রী মোছাঃ শারমীন সুলতানা শাকিলা দীর্ঘ ১২ বছরের সংসার ভেঙ্গে আসামী শাহীনকে তালাক প্রদান করে। পরবর্তীতে গত প্রায় ৪ মাস পূর্বে আসামী শাহীনের পাক্তন স্ত্রী মোছাঃ শারমীন সুলাতানা শাকিলা ডিসিস্ট মহসীন আলীকে বিয়ে করে। বিষয়টি জানতে পেরে আসামী শাহীনের মনের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
আসামী শাহীনের প্রাক্তন স্ত্রী শারমীনের ওয়াসিফা নামে একটি কন্যা সন্তান আছে। উক্ত সন্তানটি আসামী শাহীনুর রহমানের নিকট থাকে। সে বর্তমানে ২য় শ্রেণীতে পড়ালেখা করে। তার উপবৃত্তির জন্য তার পিতা—মাতা উভয়েরই এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হয়।

তখন আসামী শাহীনুর রহমান তার প্রাক্তন স্ত্রী ও তার পিতামাতার সাথে যোগাযোগ করে এবং মেয়ের উপবৃত্তির জন্য তার (প্রাক্তন স্ত্রীর) এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধনের কপি লাগবে বলে জানায়।

আসামী শাহীনের প্রাক্তন স্ত্রী শারমীন সুলাতানা ও তার পরিবারের লোকজন শাকিলার এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধনের কপি দিতে রাজী না হওয়ায় আসামী শাহীনুর রহমান প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে সুকৌশলে আসামী মোঃ শাহীনুর রহমান @ শাহীন ডিসিস্ট মহসীন আলীর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে সখ্যতা গড়ে তোলে।

একপর্যায়ে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৭ জুন, তারা জয়পুরহাট জেলার কালাই থানাধীন মোলামগাড়ী বাজারে সাক্ষাৎ করে। মোলামগাড়ী বাজারে উভয়ের চা পান করে আসামী শাহীনুর রহমান ডিসিস্ট মহসীন আলীকে মোলামগাড়ী বাজার হতে করিমগামী পাকা রাস্তার মাঝামাঝি স্থানে সুকৌশলে মোটরবাইকে করে নিয়ে যায়।

মামলার ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আসামী শাহীনুর রহমান @ শাহীন ডিসিস্ট মহসীন আলীকে নিজের প্রকৃত পরিচয় প্রদান করে এবং তার কন্যার উপবৃত্তির জন্য শাকিলার এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধনের কাগজ চায়। তখন ডিসিস্ট মহসীন আলী উক্ত কাগজপত্রাদী দিতে রাজী না হলে আসামী তার প্রতি প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়।
আসামী শাহীন তার প্রাক্তন স্ত্রীকে বিয়ের করার কারণে এবং তার কন্যার উপবৃত্তির জন্য শাকিলার এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধনের কপি দিতে রাজী না হওয়ার উক্ত স্থানেই সময় রাত অনুমান সাড়ে ৯ টায় তার মোটরসাইকেলে থাকা অনুমান ২ ফিট দৈর্ঘের একটি লোহার পাত (যার একপাশ কিছুটা ধারালো) দিয়ে ডিসিস্ট মহসীন আলীর মাথার পিছন অংশে ২/৩ টি জোরালো কোপ মারলে সে মাটিতে পড়ে যায়। তখনন আসামী শাহীন পুনরায় ডিসিস্ট মহসীনের মাথার পিছনে ২/৩ টি জোরালো আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল হতে দ্রুত নিজ বাড়ীতে চলে যায়।

কিছুদুর যাওয়ার পর ডিসিস্ট মহসীন আলীর সাথে গোপনে যোগাযোগ করার জন্য ব্যবহৃত সিম সহ ফোনটি সে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। আরও কিছুদুর যাওয়ার পর ব্রীজের উপর হতে মহসীনকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লোহার পাতটি নদীর মাঝখানে ফেলে দেয় মর্মে জানায়।
বিধি মোতাবেক তাকে ফৌঃ কাঃ বিঃ এর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে প্রেরণ করা হয়ে আসামী শাহীন আদালতে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্বীকার করে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *