ইরানের পরমাণু অস্ত্র সক্ষমতা অর্জন বাস্তবতা নাকি মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র বানিজ্যের দীর্ঘ মেয়াদি ফাঁদ?

Uncategorized আন্তর্জাতিক

কুটনৈতিক বিশ্লেষক ঃ গত ৫ই জুলাই মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ইরান সম্পর্কিত বিশেষ দূত রব মেলি বলেছেন যে, ইরানের কাছে বর্তমানে যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম আছে, তা দিয়ে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তারা নিউক্লিয়ার অস্ত্র বানাতে পারবে। এটা হচ্ছে ইরানের পরমাণু অস্ত্র সক্ষমতা নিয়ে তিন বা দশক ধরে চলমান ধারাবাহিক প্রোপাগাণ্ডার একটি অংশ মাত্র।

আসলে আমি যখন ১৯৯১/৯২ সালে ৭ম কিংবা ৮ম শ্রেণিতে পড়তাম, তখন ইনকিলাব নিউজপেপারে আন্তর্জাতিক খবরের অংশে ঠিক একই জাতীয় নিউজ প্রকাশ করে যে, “মার্কিন পেন্টাগন আকাঙ্খা করে যে, ইরান পরমাণু প্রযুক্তি অর্জন থেকে আর মাত্র তিন মাস দূরে রয়েছে। এ মুহুর্তে ইরানকে ঠেকানো সম্ভব না হলে আগামী ৯০ দিনের মধ্যেই ইরান বেশকিছু পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে ফেলতে পারে। যা কিনা সারা বিশ্বের জন্য খুবই বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে।”

আর এখন প্রায় ৩০ বছর পরে এক বিংশ শতাব্দীর ২০২২ সালে এসেও ইরানের পরমাণু অস্ত্র সক্ষমতা অর্জন নিয়ে একই হাস্যকর এবং প্রোপাগাণ্ডা সংবাদ সারা বিশ্বেকে হজম করে যেতে হচ্ছে পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়ার কল্যাণে। এখন এই জাতীয় সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশ করে ইসরাইলকে দিয়ে মার্কিন পেন্টাগন ইরানের পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রের উপর বিমান হামলার কুপরামর্শ ও অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় কিনা তাও নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।

তবে যাই হোক না কেন, ইরানের পরমাণু প্রযুক্তি অর্জন এবং প্রভাব বিস্তারের ভীতিকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে একচ্ছত্রভাবে অস্ত্র বানিজ্য করে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্য যে, বর্তমানে বৈশ্বিক অস্ত্র চালানের প্রায় ৪৫% পর্যন্ত সরাসরি চলে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বাদশা আমীর শাসিত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত এবং বাহরাইনের মতো আরব দেশগুলোতে। যেখানে ২০২১ সালে সারা বিশ্বজুড়ে মোট প্রায় ১৩৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি প্রাণঘাতী অস্ত্র বানিজ্য হয়।
বিগত কয়েক দশক থেকেই বিশ্বের একক কোন দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ও আর্থিক মূল্যের প্রাণঘাতী অস্ত্র আমদানি করেছে সৌদি আরব। দেশটি একাই বিশ্ব অস্ত্র বানিজ্যের ১২% পর্যন্ত সরাসরি নিজে আমদানি করে থাকে। এখানে কিন্তু পরোক্ষভাবে হলেও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তার এবং ইরানের পরমাণু অস্ত্র সক্ষমতা অর্জন নিয়ে আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিডিয়ার ব্যাপক প্রপাগাণ্ডা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য আরব দেশ কাতার, কুয়েত, ইরাক, মিশর, বাহরান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম ক্রয়ের তালিকা দেখলে যে কেউ চমকে যেতে পারেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অস্ত্র ক্রয়ের হার ও প্রবণতা বিগত এক দশকে কোন কোন ক্ষেত্রে ৩০০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ২০২১ সালের শেষের দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ১৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ৮০টি এডভান্স রাফায়েল জেট ফাইটার ক্রয়ের চুক্তি করে সারা বিশ্বকে চমকে দেয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *