রাজধানীতে র‍্যাবের সাড়াশি অভিযানে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের ৩১ সদস্য গ্রেফতার সহ বিষাক্ত মলম, নগদ টাকা ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

Uncategorized আইন ও আদালত

বিশেষ প্রতিবেদক ঃ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই চক্রের তৎপরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে থাকায় দীর্ঘদিন পরে ব্যবসা বাণিজ্য সরগরম হয়ে ওঠে।

এই অবস্থায় পবিত্র ঈদু-উল-আযহা’কে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কিছু সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও কিশোর গ্যাং চক্রের তৎপরতা বেড়েছে। ঈদু-উল-আযহা উপলক্ষ্যে পশু হাটে কোরবাণীর পশু ক্রয় করার জন্য নগদ টাকা নিয়ে যাতায়াত চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র নিরীহ পথচারীদের সর্বস্ব ছিনতাই করছে।

গত বুধবার ৬ জুলাই, সন্ধা হতে বৃহস্পতিবার ৭ জুলাই, ভোর পর্যন্ত পর্যন্ত র‌্যাব-১ এর কয়েকটি আভিযানিক দল সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা হতে ছিনতাইকারী চক্রের সক্রিয় সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার কৃতরা যথাক্রমে, মোঃ বোরহান (২৪), পিতা-মৃত আব্বাস আলী, জেলা-বগুড়া, মোঃ ইমরান হোসেন (২৫), পিতা-মোঃ জাকির হোসেন, জেলা-বরিশাল, তুহিন (২২), পিতা-আলাল উদ্দিন, জেলা-ময়মনসিংহ, মোঃ জাহিদুল ইসলাম মাহমুদ (২০), পিতা-মোঃ মোস্তফা মানিক, জেলা-চাঁদপুর, মোঃ শিপন হুসাইন (২৩), পিতা-মোঃ জমির হোসেন, জেলা-শেরপুর, মোঃ আশিকুর রহমান আশিক (২১), পিতা-মোঃ ফারুক, জেলা-কুমিল্লা, মোঃ শাহ জালাল (২৬), পিতা-মৃত জয়নাল আবেদীন, জেলা-চাঁদপুর, মোঃ মিরাজ (২১), পিতা-মৃত দুলাল মিয়া, জেলা-মানিকগঞ্জ, নুর নবী (২২), পিতা-মোঃ রফিক, জেলা-ভোলা, মোঃ আশিক (২০), পিতা-মৃত আজিম উদ্দিন, জেলা-গাজীপুর, মোঃ মেহেদী হাসান হৃদয় (২০), পিতা-বাবুল মিয়া, জেলা-নোয়াখালি, মোঃ শাকিল (২০), পিতা-মোহাম্মদ আলী, জেলা-শেরপুর, মোঃ আকবর আলী (২৪), পিতা-মৃত আব্দুল লতিফ, জেলা-বরিশাল, মোঃ রাসেল খা (২৪), পিতা-শহিদ খা, জেলা-নেত্রকোনা, মোঃ রাসেল ব্যাপারী (২৮), পিতা-মৃত মফিজ উদ্দিন ব্যাপারী, জেলা-শরিয়াতপুর, মোঃ সুজন তালুকদার (২২), পিতা-মৃত সালাম তালুকদার, জেলা-বাগেরহাট, মোঃ বাবুল (২৪), পিতা-মোঃ আলী ডাক্তার, জেলা-শেরপুর, টুকু মিয়া (২২), পিতা-মেনু মিয়া, জেলা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আব্দুল্লাহ (২২), পিতা-সাদেক হোসেন, জেলা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মোঃ ফয়সাল (২৩), পিতা-মোঃ ফারুক, জেলা-ময়মনসিংহ, জহরুল মিয়া (২০), পিতা-রব মিয়া, জেলা-বরিশাল মোঃ পারভেজ (২৭), পিতা- মৃত নুরু হোসেন, জেলা- ময়মনসিংহ, মোঃ আসিফ (২২), পিতা- মতিউর রহমান, জেলা- শরীয়তপুর, মোঃ নিশান উদ্দিন (৩০), পিতা- মোঃ নাজিম উদ্দিন নাজু, গাজীপুর, মোঃ জুয়েল (৩৫), পিতা- মৃত রিয়াজুল, জিএমপি গাজীপুর, মোঃ বিজয় হোসেন (১৯), পিতা- মোঃ মঙ্গল হোসেন, গাজীপুর, আবুল কাশেম (৪০), পিতা- মৃত বাকু মিয়া, গাজীপুর, মোঃ শফিক উদ্দিন (২৫), পিতা- মোঃ আব্দুল মান্নান, জেলা- ময়মনসিংহ, মোঃ রানা (২৮), পিতা- শামসুদ্দিন, জেলা- গাজীপুর, মোঃ মাহবুব (২৬), পিতা- মৃত আবুল হোসেন ভুইয়া, ঢাকা এবং মোঃ শাকিল শেখ (২৫), পিতা- হারুন শেখ, জেলা- ঢাকা’দেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

এসময় ছিনতাইকারীদের নিকট হতে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ৮ টি বিষাক্ত মলম, ১ টি কুড়াল সাদৃশ্য দেশীয় অস্ত্র, ২ টি লোহার রড, ১১ টি ছুরি, ৩ টি লোহা কাটার হ্যাকসো ব্লেড, ১০ টি চাকু, ৪ টি গামছা, ছিনতাইকৃত ১৮ টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ২,৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতার কৃত আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা কয়েকটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দলের সক্রিয় সদস্য। তারা পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে আসছে।

তারা রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতে ওৎপেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, বাসযাত্রী, মটরসাইকেল আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাই কাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতে দ্বিধা বোধ করে না মর্মে জানা যায়।

গ্রেফতার কৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, গুলশান এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ বোরহান তার সহযোগী ৩ জন।

বনানী এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা শিপন হুসাইন ও নূর নবী এবং তাদের সহযোগী ৫ জন। ভাটারা এলাকার একটি ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ শাকিল তার সহযোগী ৩ জন এবং অন্য একটি ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা সুজন তালুকদার তার সহযোগী ২ জন। বাড্ডা এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ আব্দুল্লাহ ও তার সহযোগী ২ জন। টঙ্গী এলাকার একটি ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা আব্দুল্লাহ তার সহযোগী ৩ জন এবং অন্য একটি ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ পারভেজ তার সহযোগী ২ জন। তুরাগ এলাকার ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতা মোঃ রানা তার সহযোগী ০২ জন তাদের নির্দেশে ছিনতাই চক্রের প্রতিটি সদস্য বর্ণিত এলাকায় ছিনতাই করে থাকে।

ছিনতাই চক্রের সকলে স্বল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত। তারা প্রত্যেকে মাদকাসক্ত ও দীর্ঘ দিন যাবৎ ডান্ডি, ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক সেবন করে আসছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। তারা কেউ কেউ বাস/লেগুনার হেলপার, ওয়ার্কসপের শ্রমিক, দিনমুজুর, টোকাই, মাছ/কাঁচামালের আড়তে কাজ করে। তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছিনতাই করে আসছে মর্মে স্বীকার করে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *