ভারতের সাথে পররাষ্ট্রনীতিতে সুক্ষ্ম পরিবর্তনগুলি কি খেয়াল করেছেন?

Uncategorized অন্যান্য

কুটনৈতিক বিশ্লেষক ঃ রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একটি প্রকল্প ভারতের দেয়া লাইন অব ক্রেডিটের অধীনে বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। প্যাকেজ ৬ এর অধীনে যমুনা ও পদ্মা অতিক্রম করে ২০ কিলোমিটারের সঞ্চালন ব্যাবস্থা করার কথা ছিল ভারতের লাইন অব ক্রেডিট ৩ এর অধীনে।

পিজিসিবির সাথে চুক্তির অধীনে ভারতীয় কোম্পানিকে নির্বাচিত করার পরো ভারত এই ফান্ডিং থেকে সরে এসেছে। ভারতের দাবি পিজিসিবি শর্ত মানতে ব্যার্থ হয়েছে। পিজিসিবি আন্তর্জাতিক টেন্ডার উন্মুক্ত করলে দেখা যায় যে প্রাক্কলিত মূল্যের থেকে উচ্চ মূল্যে দর প্রস্তাব করে ভারতীয় কোম্পানি।

রুপপুরের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে ৫ টি ট্রান্সমিশন লাইন করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৬৪ কিলোমিটারের ৪০০কেভি লাইন যেখানে রিভার ক্রসিং ১৩ কিলোমিটারের। ২০৫ কিলোমিটারের ২৩০ কেভি লাইন যেখানে রিভার ক্রসিং ৭ কিলোমিটারের। ৪০০ কেভির চারটি বে ক্রসিং, ২৩০ কেভির ৫ টা বে ক্রসিং। জটিলতার জব্য রিভার ক্রসিং এর ২০ কিলোমিটার আলাদাভাবে প্যাকেজ ৬ এর অধীনে বাস্তবায়নের জন্য ভারতের সাথে $১.০৬ বিলিয়ন ডলারে এলওসি-৩ এর অধীনে চুক্তি হয়। এলওসি সুবিধা পেতে শর্ত মোতাবেক ভারতীয় কোম্পানিকে কাজ দেয়ার বাধ্যতা থাকে। কিন্তু দরপত্র আহবানের পর খরচ অতিরিক্ত দেখানোর পর পিজিসিবি বিকল্প কোম্পানিকে কাজ দিতে চায়। পিজিসিবির মতে প্যাকেজ ৬ এ খরচ ৪০০০ কোটিতে সম্ভব। আর এজন্যই পিজিসিবি এখন বিকল্প ফান্ডিং খুজছে। যদি বিকল্প ফান্ডিং না পাওয়া যায় তবে নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মধ্যে অনেক গুলি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে আছে নদীশাসন, পুনর্বাসন, সার্ভিস এরিয়া ডেভেলপ। এমনকি পদ্মা সেতু দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন করার ঝুকি না নিয়ে সেতুর জন্য আনা ক্রেনে আলাদাভাবে নদীতে পাইলিং করে সঞ্চালন লাইন করা হচ্ছে। কাজ প্রায় শেষের পথে। নিচের ছবি পদ্মায় সঞ্চালন লাইন নির্মানের।

যাহোক, এই খবর গুলি আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খবর যেটি আমাদের নজর এড়িয়ে গেছে সেটি হল পাটকল বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেয়া। এখানে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খুলনা ও যশোর অঞ্চলে পাটকলগুলির জন্য আগ্রহী হয় ভারতের চারটি কোম্পানি। কিন্তু সর্বশেষ খবর হল চারটি কোম্পানিকেই বাদ দেয়া হয়েছে।

এর আগে আমরা দেখেছি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নিয়ন্ত্রন নিতে ভারতীয় কোম্পানি যথেষ্ট তোড়জোড় করে। কিন্তু বাংলাদেশ চীনকে বেছে নেয়। সার্বিক পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক দরকষাকষিতে বাংলাদেশ এখনো চাইনিজ ট্রাম্প কার্ড ভাল ভাবে ব্যাবহার করতে সক্ষম হয়েছে। সামরিক খাতের লাইন অব ক্রেডিটে বিগত ৩-৪ বছরেও বাংলাদেশ ভারতের ফান্ডিং এ অস্ত্র ক্রয় করেনি। চীনকে সাবমেরিন বেইজ নির্মানের কাজ দেয়ার পর ভারতীয় মিডিয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন টক শো গুলি দেখলেও বুঝতে পারবেন বিষয়টি। আবার চীনের ঋনে বাংলাদেশ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে এমন প্রচারেও তারা পিছুপা হচ্ছেনা। জয় সংকর সাহেব সেটি পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে বেশ রাগের সুরেই বোঝাতে চেয়েছিলেন প্রশ্নোত্তর পর্বে। বাংলাদেশের পালটা প্রশ্ন ছিল চীনের মত বিনিয়োগ তারা দিতে সক্ষম কিনা?

আপনারা খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা, মাস খানেক আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ভারত সফরে মোদিজি দেখা করেন নি। এটা নিয়ে ভারতের বিরোধীদল বিজেপির বিরুদ্ধে সোচ্চার ও হয়েছিলেন। সব মিলিয়ে সুক্ষ্ম বিষয়গুলির উপর নজর রাখলে কয়েকটি পিক্সেল মিলিয়ে একটা পূর্নাঙ্গ ছবিতে রুপ দেয়া সম্ভব। বোঝা সম্ভব আসলে দেশদুটির মাঝে কি চলছে।
বাংলাদেশ কিন্তু চীনের ক্ষেত্রেও ভারতকে ট্রাম্প কার্ড হিসাবে ব্যাবহার করেছে। বিভিন্ন দেশে দেয়া চীনের ঋনের সুদের হার আর বাংলাদেশকে দেয়া ঋনের সুদের হার তুলনা করলে বিষয়টা পরিস্কার। বাংলাদেশে চাইনিজ এম্বাসির কর্মতৎপরতা পরিস্কার করে বাংলাদেশ চীনের কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে।

ব্যালান্সিং একটি আর্ট। বর্তমান বিশ্বব্যাবস্থায় এটুকু অনুধাবন করা কঠিন নয় যে হুট করে সিদ্ধান্ত নেয়া বা নির্দিষ্ট ব্লকে যাবার রাজনীতি খুব ভাল পরিনতি বয়ে আনেনি কারো জন্য। পাকিস্তান উদাহরন। ইরানের মত শক্তিশালী দেশ দীর্ঘকাল অবরোধে পড়ে আছে রাজনৈতিক চরমপন্থার জন্য। বাংলাদেশের থেকে অনেক বেশি সম্ভাবনার বার্মা পিছিয়ে আছে।

বর্তমানে সামরিক শক্তি একক ভাবে ক্ষমতার নির্দেশক নেই। যুগ বাস্তবতায় অর্থনীতি এখন সবথেকে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। টাকা আপনাকে সম্মান এনে দিতে পারে। অপদস্ত ও করতে পারে। আমাদের সতর্ক হয়ে কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে।


বিজ্ঞাপন
👁️ 5 News Views

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *