আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের টার্গেট নিয়ে ‘রোডম্যাপ’ প্রস্তুত

Uncategorized আন্তর্জাতিক

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণ মূলক করতে কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপের খসড়া তৈরি করেছে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের টার্গেট নিয়ে ‘রোডম্যাপ’ প্রস্তুত করা হয়েছে। এই খসড়া রোডম্যাপে নয়টি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।
আগামী ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর এই রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবে নির্বাচন কমিশন।

রোডম্যাপ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আগস্টের মধ্যে দল নিবন্ধনের আবেদন করতে হবে।

এ ছাড়া জনশুমারির তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এক্ষেত্রে ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের কার্যক্রম জানুয়ারির মধ্যে শুরু করার চিন্তা করছে ইসি। গত ২৬ মে ইসি নতুন দলের নিবন্ধন আহ্বান সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

২৯ আগস্ট পর্যন্ত ইসিতে দল নিবন্ধনের আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে আগামী বছর মে মাসের মধ্যে নতুন দলের নিবন্ধন সংক্রান্ত কাজ শেষ করতে চায় সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া সংসদ নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহার করার চিন্তা করছে ইসি, প্রায় ১০০ আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইভিএমে ভোটদান পদ্ধতি সহজ করা হচ্ছে। একটি বাটন চেপে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে ইভিএমে।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। এক্ষেত্রে চলতি বছরের আগস্টে রোডম্যাপ ঘোষণা হলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইসির হাতে ১৭ মাস সময় থাকবে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদা কমিশনের বিদায়ের পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন শপথ নেয়। নতুন কমিশন দায়িত্ব দেওয়ার পরে দেশের বিশিষ্টজন ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা নতুন কমিশনের কাছে নানা প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।

যা থাকছে ইসির নতুন রোডম্যাপের খসড়ায় : আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রোডম্যাপের খসড়ায় নয়টি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে- আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার; নির্বাচন প্রক্রিয়া সময়োপযোগীকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণ; সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ; নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ; বিধি-বিধান অনুসরণপূর্বক ভোট কেন্দ্র স্থাপন; নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা; সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ; নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহার; এবং পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন ও নবায়ন কার্যক্রম।

রোডম্যাপের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, রোডম্যাপের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এখন শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা হয়ে গেলে এটি চূড়ান্ত করা হবে। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নাকি আগে রোডম্যাপ তৈরি করে সংলাপে বসবেন?

জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা খসড়াটা করে ফেলেছি, এটি নিয়ে যখন উনাদের সঙ্গে বসব, আমরা উনাদের কথা শুনব। যদি তাদের মতামতের সঙ্গে মিলে যায়, তখন আমরা বলব, আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনাদের সঙ্গে মিলে গেছে।

যেটি মিলবে না, সেটির সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করে উনারা আমাদেরকে কনভিনজড করার চেষ্টা করবে। উনারা যে প্রস্তাব দেবেন সেটি যে আমরা মেনে নেব সেটি নাও হতে পারে। তখন আমরা তাদেরকে বলব, এইটা করলে এই এই সমস্যা আছে, এই এই সুবিধা আছে।

রোডম্যাপে বিশেষত্ব কী থাকছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটু পার্থক্য আছে, কারণ আগের কমিশনগুলো রোডম্যাপ তৈরি করে রাজনৈতিক দল বা সুধীজনের সঙ্গে সংলাপে বসেছেন।

আমরা কিন্তু তা করিনি। আমরা রাজনৈতিক দল বা সুধীজনের সঙ্গে প্রথমে আলোচনা করেই কিন্তু রোডম্যাপ করেছি। অর্থাৎ এতে বোঝা যায় যে, তাদের কথাবার্তার অনেক রিফ্ল্যাকশন এই রোডম্যাপে থাকবে।

আমরা রোডম্যাপটি করার জন্য উনাদের পরামর্শ নিয়েছি। এরপর যখন চূড়ান্তটা করব তখন উনাদের সঙ্গে কথা বলেই। তার মানে এই রোডম্যাপ আমাদের না। এই রোডম্যাপ রাজনৈতিক দলের।

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন গত বুধবার ১৩ মার্চ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী, ২২ মার্চ নাগরিক সমাজ, ৬ এপ্রিল প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক, ১৮ এপ্রিল ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী/প্রধান বার্তা সম্পাদক/সিনিয়র সাংবাদিক, ৯ জুন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি এবং ১২ জুন নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। এ ছাড়া প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইভিএম নিয়ে ইতোমধ্যে মতবিনিময় করেছে কমিশন।
এখন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে যন্ত্রটি প্রদর্শন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কারিগরি বিষয়ে প্রশ্নোত্তর, মতবিনিময়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ১৯, ২১ ও ২৮ জুন তিন দফায় নিবন্ধিত ৩৯টি দলকে ডেকেছিল কমিশন। সেই মতবিনিময় সভায় ২৮টি দল অংশ নেয়। বাকি ১১টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথম সংসদ অধিবেশন বসে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ প্রথম অধিবেশন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর।

সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান সংসদের মেয়াদ রয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংবিধানে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের নব্বই দিনের কথা বলা হয়েছে। সেই হিসেবে ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *