পলিটিক্যাল বিশ্লেষক ঃ সৌদি আরব, বিশ্বের তেল রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে পরিচিত। কিন্তু রাশিয়ার আয়ের অন্যতম উৎস এখন সৌদি আরব। ডিসকাউন্টে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনতেছে সৌদি আরব। দেশটি আরব আমিরাতের ফুজাইরা হাব থেকে সংগ্রহ করছে এই তেল। উদ্দেশ্য, বেশি দামে সৌদির তেল রপ্তানি অর্ডার ঠিক রাখা। অন্যদিকে নিজ দেশের পাওয়ার প্লান্টগুলি ছাড়কৃত মূল্যে রাশিয়ার তেল দিয়ে চালানো।
এদিকে জো বাইডেন সৌদি সফর করে অনুরোধ করবে সৌদিকে তেল রপ্তানি বাড়াতে। আমেরিকার সিনিয়র বুশ, ক্লিনটন, জুনিয়র বুশ, ওবামা, ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে রেটিং করলে বাইডেনকে অথর্ব বলা চলে। বাইডেন যে পাগলামো আর বোকামিতে ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে যাবে সেটা হয়ত কেউ আশা করেনি।
সৌদি আরব এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আমদানি করেছে ৬.৪৭ লক্ষ টন। গত বছর এই সময়ে আমদানি করেছিল ৩.২ লক্ষ টন। ডিসকাউন্ট প্রাইস বেশ ভাল ভাবে কাজে লাগাচ্ছে সৌদি আরব।
অন্যদিকে মজার ব্যাপার হল, ব্রিকস এ যোগ দেয়ার ব্যাপারে সৌদি আরবকেও বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। যদি সেটি হয় তবে বিশ্ব নিয়ন্ত্রনে আরো এক ধাপ পিছিয়ে পড়বে আমেরিকা।
এদিকে পুতিনের ভাষ্য হল ইউক্রেন যুদ্ধ শীত পর্যন্ত টেনে নিতে। এখনি ইউরোপ জুড়ে তেল গ্যাসের অত্যাধিক মূল্য বৃদ্ধিতে অনিশ্চয়তার জীবনযাপন করছে ইউরোপবাসী। শীত রাশিয়াকে দরকষাকষির ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দিবে। কারন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করলে ইউরোপের অধিকাংশ দেশের মানুষ রুম গরম রাখার মত অবস্থায় থাকবে না।
পলিটিক্স এক জিনিস আর জনদূর্ভোগ আরেক জিনিস। শ্রীলংকায় মাহেন্দ্র রাজাপাকসে ছিল বীরের নাম যাকে সবাই সম্মানের সহিত দেখত। কারন হল, বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠি ছিল ভেলু পিল্লাই প্রভাকরনের দল এলটিটিই। তামিল টাইগার্সদের নিজস্ব বিমান ও বিমানবন্দর ছিল। শ্রীলংকায় কেউ তাদেরকে পরাজিত করতে পারেনি। মাহেন্দ্র রাজাপাকসে প্রভাকরনকে হত্যা ও বিদ্রোহ কার্যকরভাবে দমনে সক্ষম হয়। কিন্তু সেই শ্রীলংকায় যখন মানুষ তেল কিনতে পারেনি, ব্যাবসা চালাতে পারেনি, বিদ্যুৎ পায়নি সপ্তাহের পর সপ্তাহ, তখন সাধারন মানুষ আর এলটিটিই দমনের ইতিহাস মনে রাখেনি। ঘাড় ধরে টেনে নামিয়েছে রাজাপাকসে পরিবারকে। পালিয়ে যেতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টকে।
যদি শীতে ইউরোপের রুম হিটার না জ্বলে তাহলে সামাজিক শৃঙখলা আর থাকবে না। অনেক দেশের প্রধানকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। যুক্তরাজ্যের বরিস জনসন নিজে ঝুকি নিয়ে ইউক্রেন সফরে গিয়ে বাহবা কুড়িয়েছিল। কিন্তু তাকেও চলে যেতে হয়েছে। পরিস্থিতি হয়ত তখন ইউরোপে আমেরিকার ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
রুশ ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো ও আমেরিকা চাইছে গ্রীষ্মেই সমাধান করে ফেলতে। এর কারন হল তারা ভাল ভাবে জানে যে জ্বলানির নিশ্চয়তা না পেলে ইউরোপকে পাশে রাখা সম্ভব হবেনা। কোভিডের পর পশ্চিমা প্রতিটি দেশ অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের নিজেদের ক্ষতি এখনো পুষিয়ে উঠা যায়নি। এরপর উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জ্বালানির আন্তর্জাতিক মূল্য বৃদ্ধি দেশগুলির অর্থনীতিকে নক আউট পাঞ্চ করে গেছে। ইউক্রেনকে সহায়তা করতে চাইলেও সেই সহায়তা করবার ক্ষমতা অনন্ত নয়। ধুকতে থাকা নিজেদের অর্থনীতি মেরামত না করে ন্যাটো ও আমেরিকার মিত্র দেশ গুলি খুব বেশিদিন সহায়তা চালিয়ে নিতে সমর্থ হবেনা।
আজ রাশিয়ার ঘাড়ে ন্যাটোর বিস্তার করার পলিটিক্স আর ভূল সময়ে ভূল পদক্ষেপ সারাবিশ্বকে আজ ভোগাচ্ছে। যুদ্ধবাজ আর অস্ত্রের ব্যাবসায়ীদের ব্যাবসার বিরুদ্ধে এখন সারাবিশ্বকে এক হতে হবে।