মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে এন্টিবায়োটিক, শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের শরীরেই এখন এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে জীবাণু

Uncategorized স্বাস্থ্য


নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ফলে জীবাণু এখন নিজেই প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। মানুষের মৃত্যু ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে এন্টিবায়োটিক। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের শরীরেই এখন এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে জীবাণু। স্বাস্থ্য ঝুঁকির এই বিষয়টি খুবই উদ্বেগের বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধের আইন থাকলেও তা মানছে না কেউই। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া যতদিন না ওষুধ বিক্রি বন্ধ হবে, ততদিন এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার ঠেকানো যাবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু এক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য প্রশাসন। এন্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহার অব্যাহত থাকলে তা বয়ে আনতে পারে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি। প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক বিক্রি না করার ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ক্ষেত্রে শাস্তিমূলকসহ কঠোর ব্যবস্হা না নেওয়া হয়, আগামী এক যুগের মধ্যে অসংক্রমণ ব্যাধিতে যে সংখ্যক মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে এন্টিবায়োটিকে মারা যাবে আরো কয়েক গুণ বেশি বলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগে বিভিন্ন সময়ে গবেষণা করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, বাজারজাতকৃত এন্টিবায়োটিকের মধ্যে ১১টি সর্বাধিক ব্যবহৃত। এরমধ্যে ৫টি জীবাণু কর্তৃক প্রতিরোধী-যেটাকে বলা হয় রেজিস্টেন্স। এই জীবাণু প্রতিরোধীর কারণে রোগীদের মধ্যে ৩৪ ভাগ ভালো হয় না। কোন কোন ক্ষেত্রে ৭২ ভাগ ভালো হয় না। কারণ শরীরে এন্টিবায়োটিক ওষুধের কার্যকারিতা ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ডাক্তাররা ইচ্ছামতো এন্টিবায়োটিক ওষুধ লিখছেন। অথচ কোন এন্টিবায়োটিক ওষুধটি প্রয়োজন সেটিও বিবেচনা করা হচ্ছে না। এতে জীবাণু প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। আবার রোগীরা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক সেবনও করছেন না। দুই/তিন দিন খাওয়ার পর শরীরে ভালো অনুভব করলে আর এন্টিবায়োটিক খান না। তখন শরীরে জীবাণু থেকে যায়। পরবর্তীতে আবার এন্টিবায়োটিক খেলেও জীবাণু প্রতিরোধী হয়ে উঠে। তখন আর এন্টিবায়োটিক খেলেও রোগী সুস্হ হয় না। এক শ্রেণীর রোগী এন্টিবায়োটিকের দাম বেশি বলে কিছুদিন খেয়েই কোর্স কমপ্লিট না করেই বন্ধ করে দেন।
গবেষণায় আবার দেখা গেছে, চিকিৎসক ব্যবস্হাপত্রে দিয়েছে ৫০০ এমজি এন্টিবায়োটিক। কিন্তু ওষুধে আছে ২০০ বা ১০০ এমজি। এতে জীবানু ভয়ঙ্কর প্রতিরোধী হয়ে গেছে। আবার হাঁস-মুরগি-গরুসহ বিভিন্ন পশুর খামামিরা ব্যবহার করছে মানুষের জন্য ব্যবহূত এন্টিবায়োটিক। পশুদের জন্য এনিমেল এন্টিবায়োটিক আছে। কিন্তু তা বেশিরভাগ খামারিরা ব্যবহার করেন না। তারা মানুষের জন্য ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করার কারণে এসব হাঁস-মুরগি-মাছ-গরুর মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে স্বল্প পরিসরে এন্টিবায়োটিক চলে যায়। কারণ এটা রান্নায়ও নষ্ট হয় না, পানিতে ধুলেও থেকে যায়। মানুষ যখন অসুস্থ হয় তখন মানব দেহের ওই এন্টিবায়োটিক খেলে কোন কাজ হয় না। কারণ জীবাণু আগে থেকেই সেই এন্টিবায়োটিককে চিনে গেছে। তাই কাজ হয় না। এসব কারণে জীবাণু ভয়ঙ্কর প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, একেকটি হাসপাতালে একেকটি নিজস্ব পলিসি লেভেল থাকে। যেমন কিডনি ইন্সটিটিউট নিজেরা কালচার পরীক্ষা করে দেখবে যে, রোগীকে কোন এনটিবায়োটিক দেয়া যায়। একইভাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জিক্যাল বিভাগ এই ধরনের পরীক্ষা করে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। এটা নিজস্ব পলিসিগত বিষয়। আরেকটি হলো এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথমে কম ডোজ, আস্তে আস্তে হাই ডোজে যেতে হবে। সাধারণত বেশিরভাগ এন্টিবায়োটিক দেয় মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা। সেটার একটা আইনগত দিক থাকা উচিত।
গ্রাম্য হাতুরে ডাক্তাররা ব্যাপক হারে এন্টিবায়োটিক দেয়। দোকানে প্রেসক্রিমপশন ছাড়া যেভাবে বিক্রি হচ্ছে, এটা বন্ধ করতে না পারলে এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে না। দোকানকাররা না জেনে এক ধরনের এন্টিবায়োটিক দেয়, কিন্তু সে জানে না কী ধরনের এন্টিবায়োটিক রোগীকে দিতে হবে। কী পরিমাণ দিতে হবে তাও জানে না। রোগী সমস্যা বলার সাথে সাথে এন্টিবায়োটিক দিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে রোগী ও ডাক্তারদের মধ্যে সচেতনতা নেই। অনেক রোগী এন্টিবায়োটিকের পুরো ডোজ খায় না। এদিকে মানবদেহে ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক পশু-পাখিকে খাওয়ালে ওই পশু যে পানিতে ধোয়া হবে, সেই পানি তা মিশে যায়, এরপর মানবদেহে যায়। এভাবে জীবাণু এন্টিবায়োটিকের চেয়ে বেশি প্রতিরোধী হয়ে উঠে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০ থেকে ২০ বছর পরে অসংক্রমণব্যাধীতে যে সংখ্যক মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে বেশি মারা যাবে এন্টিবায়োটিকের কারণে। সচেতনতা থাকতে হবে ডাক্তার ও রোগীদের মধ্যে। এন্টিবায়োটিক বিক্রিও নিয়মতান্ত্রিক হতে হবে । সংসদে কঠোর আইন করে পাশ করে এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, দেশে যত্রতত্র এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার হচ্ছে। এক শ্রেণীর চিকিৎসক জেনে-না জেনে কিংবা কোম্পানিকে খুশি করতে এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রিপশনে লিখছেন। আবার ব্যবসার স্বার্থে প্রেসক্রিপশন ছাড়া দেদারসে এন্টিবায়োটিক বিক্রি করছে ফার্মেসিগুলো। আবার এক শ্রেণীর মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজেরা এন্টিবায়োটিক খাচ্ছে। তিনি বলেন, কোন রোগীকে কী ধরনের এন্টিবায়োটিক দিতে হবে সেটা ভালোভাবে দেখতে হবে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *