নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন ভাংনাহাটি পশ্চিমপাড়া নতুন বাজার গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পুত্রের পরিকল্পনায় পিতাকে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন সহ ঘটনার সাথে জড়িত দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর জেলা।
ভিকটিম গিয়াস উদ্দিন (৬০), পিতা-মৃত হাজী আঃ মালেক, সাং-ভাংনাহাটি পশ্চিম পাড়া (নতুন বাজার), থানা-শ্রীপুর, জেলা-গাজীপুর তার বসতবাড়ীর সামনে রাস্তার পাশে অটো রিক্সার গ্যারেজসহ অটোরিক্সা তৈরি ও ক্রয়-বিক্রয় করতো।
উক্ত গ্যারেজে বিভিন্ন অটো রিক্সার চালক অটো চার্জসহ দৈনিক গ্যারেজ ভাড়া প্রদানের ভিত্তিতে গ্যারেজে গাড়ি রাখতো। ভিকটিম গিয়াস উদ্দিন উক্ত গ্যারেজের ভিতর একপাশে কাঠের চৌকির উপর প্রতিদিন রাতে ঘুমাতো।
প্রতিদিনের ন্যায় ঘটনার দিন ১১/১২/২০২০ সে গ্যারেজে ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন ১২/১২/২০২০ তারিখ সকাল অনুমান ৬ টার সময় গ্যারেজের ভিতরে কাঠের চৌকির উপর থেকে ভিকটিম গিয়াস উদ্দিনকে মাথায় রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার ভিকটিমকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।
এ সংক্রান্তে ভিকটিমের ছেলে মোঃ অলিউল্লাহ বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা নং-২৬ তারিখ-১২/১২/২০২০ ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড আইনে মামলা দায়ের করলে শ্রীপুর থানা পুলিশ মামলাটির তদন্ত শুরু করে।
শ্রীপুর থানা পুলিশ মামলাটি প্রায় ৩ মাস তদন্ত করে রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ঢাকার নির্দেশক্রমে পিবিআই গাজীপুর জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।
পুলিশ সুপার, পিবিআই গাজীপুর জেলা এর হাওলা মতে পিবিআই, গাজীপুর জেলায় কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ হাফিজুর রহমান পিপিএম মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।
অ্যাডিশনাল আইজিপি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার. বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার, মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ হাফিজুর রহমান. পিপিএম তথ্য প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মামলার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আসামী মোঃ আলম (৩৮), পিতা-মৃত কেরামত আলী শেখ, মাতা-মোসাঃ আম্বিয়া, সাং-কোকসাইর, থানা-পাগলা, জেলা-ময়মনসিংহকে ১৮/০৭/২০২২ খ্রিঃ তারিখ রাত ১ টা ৩০ মিনিটের সময় ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানাধীন কোকসাইর এলাকা থেকে এবং আসামী মোঃ আরাফাত (২৬), পিতা-মোঃ আবু কালাম, মাতা-জরিনা, সাং-কুষ্টিয়া ২য় খন্ড, ইউ.পি-ডাকেরচর, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ, এ/পি. সাং-কেওয়া নতুন বাজার (এমদাদুল এর বাড়ীর ভাড়াটিয়া), থানা-শ্রীপুর, জেলা-গাজীপুরকে গত ১৮ জুলাই ২০২২ ভোর ৫ টায় গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন কেওয়া এলাকা হতে গ্রেফতার করে।
নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা জানায় যে, আসামীদ্বয় ভিকটিম গিয়াস উদ্দিন এর গ্যারেজে অটোরিক্সা রাখতো। ঘটনার রাতে ভিকটিমের ছেলে আবুজর (৩২), পিতা-গিয়াস উদ্দিন এবং ভাতিজা সবুজ (৩২), পিতা-মোঃ সিরাজ উভয়ের সাং-ভাংনাহাটি পশ্চিম পাড়া (নতুন বাজার), থানা-শ্রীপুর, জেলা-গাজীপুরদ্বয় ভিকটিমের সাথে ভিকটিমের পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে স্থানীয় মোঃ সাহাবুদ্দিন গংদের সাথে বিরোধ চরম পর্যায়ে থাকায় তাদেরকে ফাঁসানোর জন্য গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় সহ ঘটনায় জড়িত অপর আসামীদেরকে নিয়ে ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তারা গ্রেফতারকৃত আসামী আলমকে রাতে ফোন কল করে ডাকে।
আবুজর, সবুজ, আরাফাত ও অন্যান্যরা ঘটনাস্থলের পাশে আক্তারের দোকানে বসে চা খায়। সকলে একত্রিত হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক রাতে গ্যারেজে প্রবেশ করে ঘুমন্ত অবস্থায় ভিকটিম এর মাথায় ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনায় জড়িত আসামী মোঃ আলম ভিকটিমকে হত্যার পর তার অটোরিক্সার ব্যাটারী পুরাতন হওয়ায় ভিকটিমের গ্যারেজে রাখা অন্য একটি নতুন অটোরিক্সা হতে ৫ টি ব্যাটারী খুলে ব্যাটারীসহ তার অটোরিক্সা যোগে চলে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীদ্বয় ভিকটিম গিয়াস উদ্দিন হত্যাকান্ডে জড়িত মর্মে স্বীকার করে।
এ বিষয়ে পিবিআই এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড । মূলত ভিকটিম এর ছেলে আবুজর এবং ভাতিজা সবুজ তাদের সহযোগিদের সাথে পরিকল্পনা করে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশী প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য ঘটনার রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় ভিকটিমকে কুপিয়ে হত্যা করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় ভিকটিম গিয়াস উদ্দিন হত্যাকান্ডে জড়িত মর্মে স্বীকার করে।
এরপর গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় কে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে প্রেরণ করা হলে আসামীরা নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপরাপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে ভিকটিম গিয়াস উদ্দিন হত্যাকান্ডের বিষয়ে পরিকল্পনা এবং অন্যান্য আসামীদের কার কি ভূমিকা ছিল বিস্তারিত বর্ণনা করে আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।