নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ উন্নত ঢাকার ভিত রচনা’র তৃতীয় বাজেট ঘোষণা উপলক্ষ্যে আয়োজিত আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অর্থ ও সংস্থাপন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সম্মানিত সদস্যবর্গ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলবৃন্দ, উপস্থিত কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব ফরিদ আহাম্মদ, কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানগণ ও কর্মকর্তা/কর্মচারীবৃন্দ, আমার প্রাণ প্রিয় ঢাকাবাসী আসসালামু আলাইকুম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের সাতাশ মাস অতিক্রম করে চলেছি। আপনারা সকলেই অবগত আছেন, করোনা মহামারির প্রথম ঢেউয়ের চূড়ান্ত প্রকোপকালে আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি এবং সারাবিশ্বের ন্যায় বিগত ২ বছরের অধিকাংশ সময় বাংলাদেশও করোনা মহামারীর চরম ভীতিকর পরিস্থিতিতে নিপতিত ছিল। ঢাকাবাসীর কল্যাণে এই করোনা মহামারীর মাঝেই আমরা নতুন কর্মস্পৃহা ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আমাদের বিস্তৃত কর্মযজ্ঞ শুরু করি। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত দিনে আমরা উন্নত ঢাকা গড়ার ভিত অনেকটাই সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করার মাধ্যমে নতুন আরেকটি ধাপে উন্নীত হয়েছি। বিগত ২ বছরের অধিককালে ঢাকাবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবিক প্রতিফলন ঘটাতে শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে আমরা নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছি। প্রিয় ঢাকাবাসীর প্রতি দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে এবং ‘উন্নত ঢাকার ভিত রচনা’ এর অভিপ্রায়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা উপলক্ষ্যে আয়োজিত আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ায় আমি আপনাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আজকের এই বিশেষ দিনে গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমার প্রিয় ঢাকাবাসীকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা আয়োজনের শুরুতেই আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পরম কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা ৩০ লক্ষ বীর শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকে। বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট এর কাল রাত্রিতে ইতিহাসের নির্মম হত্যাকাণ্ডে শাহাদত বরণকারী সকল বীর শহীদকে। শ্রদ্ধবনত চিত্তে স্মরণ করছি জাতীয় চার নেতাসহ এদেশের গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শাহাদত বরণকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানগণকে।সরকার বা সংস্থা কিংবা কোনও প্রতিষ্ঠানের এক অর্থবছরের সম্ভাব্য আয় ও ব্যয়ের হিসাবকে পদ্ধতিগতভাবে ‘বাজেট’ বলে অভিহিত করা হয়। সংবিধানের আলোকে বাজটকে “বার্ষিক আর্থিক বিবৃতি — Annual Financial Statement” হিসেবে চিত্রিত করা হয়। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সম্ভাব্য আয়ব্যয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাজেট কোনও সরকার বা সংস্থার মধ্যকার সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম মানদণ্ড হিসেবে প্রতিফলিত হয়ে থাকে। তাই, বাজেট যেমন শুধু কিছু অংকের সমষ্টি নয়, তেমনি অর্থ বরাদ্দ ও রাজস্ব আদায়ের একমাত্র রূপরেখাও নয়। সামষ্টিক অর্থে বাজেট একটি সংস্থার সুব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
যেকোনো কার্যক্রম শুরু করার আগে যেমন একটি সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পরিকল্পনা দরকার হয়, আগামীদিনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বাজেট ঠিক তেমনই পথনির্দেশনা প্রদান করে থাকে। সুযোগ দেয় বিগত দিনগুলোতে সংস্থার দুর্বলতা ও শক্তিমত্তা পর্যালোচনা করার। তাই এ কথা নিশ্চয় বলা যায়, জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মেলবন্ধন ঘটাতে এবং ক্রমাগতভাবে সংস্থার ভিত মজবুত করার মাধ্যমে এগিয়ে চলার পথে সবচেয়ে অর্থবহ দাপ্তরিক দলিলের নামই বাজেট। সেজন্য ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি আপনাদের আনন্দের সাথে জানাতে চাই, শত প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘উন্নত ঢাকা গড়ার ভিত’ রচনা মজবুত করতে সক্ষম হয়েছি এবং তারই ধারাবাহিকতায় আমরা নতুন আরেকটি ধাপে পদার্পণ করতে চলেছি।আপনারা জানেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ৭০৩.৩১ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করেছে। আজ আমি আনন্দের সাথে জানাতে চাই যে, বিগত অর্থবছরে আমরা রাজস্ব আদায়ে পূর্বেকার সেই মাইলফলক অতিক্রম করে নতুন ইতিহাস গড়তে সমর্থ হয়েছি। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমরা কর্পোরেশনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৮৭৯.৬৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মনে করে, কয়েকটি কারণে এই অসাধ্য সাধন সম্ভবপর হয়েছে। প্রথমত, ঢাকাবাসী শুধু আমাদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেননি, আমাদের ওপর পরিপূর্ণ আস্থাও রেখেছেন। ঢাকাবাসী বিশ্বাস করে, ‘উন্নত ঢাকা’ গড়তে আমরা সক্ষম। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি অব্যাহত রয়েছে। বিধায় দুর্নীতি কমেছে, ফলে আয় বেড়েছে। তৃতীয়ত, সামষ্টিকভাবে উল্লেখযোগ্য হারে হয়রানি কমেছে এবং সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ঢাকাবাসীর আস্থা বেড়েছে এবং কর পরিশোধ করার আগ্রহও বেড়েছে। চতুর্থত, ব্যয়ের ক্ষেত্রে পূর্বেকার যে কোনও সময়ের চাইতে জবাবদিহিতা বেড়েছে এবং অপচয় রোধ হয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানের আজকের এই আয়োজনের মাধ্যমে আবারও স্মরণ করিয়ে চাই যে, আমি নির্বাচনকালীন কোনও কর বৃদ্ধি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে রক্ষা করেছি। আমরা কোনও কর বৃদ্ধি করিনি। বরং আয়ের খাত বৃদ্ধি, কর ফাঁকি রোধ এবং বকেয়া কর আদায়ের মাধ্যমে আমরা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। যথাযথ তদারকি এবং নতুন ২৩টি আর্থিক খাত হতে অর্থ আদায়ের ফলে রাজস্ব আদায়ে আমরা সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছি। গৃহ কর (Holding Tax) বাবদ গত অর্থবছরে আমরা ৩২৪.৪০ কোটি টাকা আয় করেছি, যা কর্পোরেশনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০২০-২১ অর্থবছরে গৃহ কর বাবদ আয় ছিল ২৫৪ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা।