অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ঃ আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে যখন আগুন জ্বলছে তখন একপ্রকার পানির দামেই এশিয়া ও আফ্রিকার বাজারে জ্বালানি বিক্রি করার প্রস্তাব করছে বিশ্বের তৃতীয় প্রধান তেল উৎপাদক দেশ রাশিয়া।
যেমন চীন ও ভারতের মতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশ আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে প্রায় ৩৫% ছাড়ে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কিনছে।
সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে প্রতিবেশী মিয়ানমার। বাংলাদেশকেও তাঁরা ছাড় কৃত মূল্যে অপরিশোধিত তেল দিতে চায় কিন্তু রাশিয়ান গ্রেডের ক্রুড ওয়েল পরিশোধনের ক্ষমতা আমাদের ইস্টার্ণ রিফাইনারীর নেই কারণ এরাবিয়ান ক্রুড অপেক্ষাকৃত হালকা হয়।
তবে রাশিয়ার স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান রসনেফট ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে পরিশোধিত ডিজেল সরবরাহ করতে চাচ্ছে এবং তা মাত্র ৫৯ ডলারে!
মাত্র বলার কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে এই মুহূর্তে ব্রেন্ট ক্রুড ওয়েল (অপরিশোধিত তেল) বিক্রি হচ্ছে ৯৪ ডলার ব্যারেল!
সাধারণত অপরিশোধিত তেলের দামের সাথে আরো ২০/২৫ ডলার যুক্ত করে পরিশোধিত তেল পাওয়া যায়। সে হিসেবে বর্তমানে এক ব্যারেল ডিজেল এর দাম হওয়া উচিত ১১০ ডলারের এদিক সেদিক।
যদিও বিপিসি বলছে যে দামটা এখন ১৩৫ ডলার! এই একই মূল্যের তেল রাশিয়া আমাদেরকে মাত্র ৫৯ ডলারে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত সরবরাহ করতে চায়।
রাশিয়ার তেল কিনতে এখন বড় বাঁধা হলো লেনদেন কারণ ডলারে লেনদেন করলে নিষেধাজ্ঞা! এজন্য সকল দেশ কারেন্সি সোয়াপের মতো বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্য করছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কারেন্সি সোয়াপ ফিজিবল না হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক রাশিয়াকে সোভিয়েত আমলের বাটা পদ্ধতির প্রস্তাব করেছে। এ পদ্ধতিতে রাশিয়া বাংলাদেশ ব্যাংকে একটা একাউন্ট খুলবে এবং বাংলাদেশ তেল আমদানির বিপরীতে সেখানে টাকা জমা রাখবে।
এবং রাশিয়া বাংলাদেশ থেকে আমদানির বিপরীতে ওই জমাকৃত টাকা দিয়ে মূল্য পরিশোধ করবে। যদি এই পদ্ধতিতে উভয় পক্ষ সম্মতি দেয় তাহলে ডলারের ওপর থেকে বড় ধরনের চাপ কমবে।
কারণ বাংলাদেশ আমদানির বড় অংশ জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় করে থাকে এবং ডলারের এই উর্ধ্বমুখী বাজারে অতিরিক্ত ডলার ও পরিশোধ করা লাগছে। বাংলাদেশের উচিত হবে যতদ্রুত সম্ভব এই সুযোগ কাজে লাগানো।