পিবিআই যশোর কর্তৃক নৈশ প্রহরী মিন্টু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আলামত উদ্ধার সহ ২ জন গ্রেফতার

Uncategorized আইন ও আদালত


সুমন হোসেন (যশোর) ঃ যশোর জেলার অভয়নগর থানা এলাকায় কয়লার ডিপোর নৈশ প্রহরী মিন্টু হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন সহ আসামী গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধার করলো পিবিআই যশোর, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।

জানা গেছে, ডিসিষ্ট মিন্টু তরফদার (৫২), পিং-মৃত মুসা তরফদার, সাং-সিগনাল গেট, থানা-অভয়নগর, জেলা-যশোর সরকার গ্রুপের গোল্ডেন ঘাটে নাইট গার্ডের চাকরী করতো।
গত ১৯ আগস্ট সন্ধ্যা অনুমান ৬ টার সময় প্রতিদিনের ন্যায় ডিউটি করার জন্য নিজ বাড়ির বাইরে যায়।

পরের দিন অর্থ্যাৎ গত ২০ আগস্ট সকাল অনুমান ১০ টার সময় অভয়নগর থানাধীন তলতলাস্থ সরকার গ্রুপের গোল্ডেন ঘাটের অফিস কক্ষের ভিতর থেকে মিন্টু তরফদারের মৃতদেহ মুখে রক্ত মাখ ও গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় উদ্ধার হয়।

উপরোক্ত ঘটনা সংক্রান্তে নিহত মিন্টু তরফদার এর স্ত্রী মোছাঃ জুলেখা বেগম (৪৮) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে যশোর অভয়নগর থানার মামলা নং-১৯, তারিখ-২১/০৮/২০২২, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড আইনে মামলা দায়ের করে।

মামলাটি পিবিআই এর সিডিউলভুক্ত মামলা হওয়ায় পিবিআই, যশোর জেলা স্ব-উদ্দ্যোগে মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।

পুলিশ সুপার পিবিআই যশোর জেলা এর হওলা মতে এসআই (নিঃ) মোঃ মিজানুর রহমান-১ মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন।

পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম, অ্যাডিশনাল আইজিপি, বাংলাদেশ পুলিশ এর সঠিক তত্ত্বাধান ও দিক নির্দেশনায়, পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন, পিপিএম-সেবা এর নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) দেবাশীষ মন্ডল সঙ্গীয় এসআই (নিঃ) স্নেহাশিস দাশ, এসআই (নিঃ) ডিএম নূর জামাল, এসআই (নিঃ) মোঃ মিজানুর রহমান-১ সহ যশোর জেলার চৌকস দল খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় এবং পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) শামীম মুসা সঙ্গীয় এসআই (নিঃ) রেজোয়ান, এসআই (নিঃ) গোলাম আলী সহ যশোর জেলার অপর একটি চৌকস দল কর্তৃক মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে গত ২১ আগস্ট বেলা অনুমান সাড়ে ৩ টার সময় সন্ধেহভাজন অভিযুক্ত মোঃ রায়হান বিশ্বাস (১৯), পিতা-মোঃ ইনাজ বিশ্বাস, সাং-রুখালী, ইউপি-বিছালী, থানা-নড়াইল সদর, জেলা-নড়াইল, এ/পি-নানা মন্তাজ সরদার, সাং-বাশুয়াড়ী সুকপাড়া, থানা-অভয়নগর, জেলা-যশোর, মোঃ আশিকুর রহমান (১৯), পিতা-মোঃ মফিজুল ইসলাম, সাং-কাউনডাঙ্গা, থানা ও জেলা-সাতক্ষীরাদেরকে মেহেরপুর জেলার গাংনি থানাধীন কাজীপুর নিমস্মরন পাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামীদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক মেহেরপুর জেলা গাংনি থানাধীন বামন্দি বাজারস্থ আতাউল সুপার মার্কেটের সালাম মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার এর মালিক আব্দুস সালাম এর দখল থেকে ডিসিষ্ট মিন্টু তরফদার এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন NOKIA 105 MODEL NO RM-1134 IMEI-358902078631707 সহ XIAOMI A2 মডেলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ১৯ আগস্ট সন্ধেহভাজন অভিযুক্ত মোঃ রায়হান বিশ্বাস (১৯) এবং মোঃ আশিকুর রহমান (১৯) চাকুরীর পাওয়ার আশায় ৥ সরদার এন্টারপ্রাইজ নামক কয়লার ডিপোতে যায়, কিন্তু জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকায় তাদের উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরী হয় নাই। অভিযুক্তরা ফেরার পথে উক্ত প্রতিষ্ঠানের নৈশ প্রহরী মিন্টু তরফদারের হাতে ২ (দুই) টি মোবাইল ফোন দেখতে পায়।

একপর্যায়ে সন্ধেহভাজন অভিযুক্ত মোঃ রায়হান বিশ্বাস(১৯) এবং মোঃ আশিকুর রহমান (১৯) মিন্টু তরফদারের মোবাইল ফোন চুরি করবে বলে পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনানুযায়ী ঐদিনই অর্থ্যাৎ গত ১৯ আগস্ট সন্ধ্যা অনুমান ৭ টার সময় অভিযুক্তরা মিন্টু তরফদারকে হত্যা করে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দুইটি চুরির উদ্দেশ্যে তার সাথে দেখা করে এবং ঐদিন রাতে তার সাথে অফিস কক্ষে থাকার প্রস্তাব দেয়।

প্রথম দিকে মিন্টু তরফদার রাজি না হলেও একপর্যায়ে অভিযুক্তদের আকুতি মিনতি শুনে রাজি হয় এবং তাদের থাকতে দেয়। অভিযুক্তরা মিন্টু তরফদার এর সাথে রাত অনুমান ৯ টার সময় অফিস কক্ষে বসে গল্প করে।

গল্পের একপর্যায়ে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক অভিযুক্তদ্বয় মিন্টু তরফদার এর গলায় গামছা পেঁচিয়ে গামছার দুই দিক থেকে দুইজনে টেনে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মিন্টু তরফদার মৃত্যু নিশ্চিত হলে তারা মিন্টু তরফদারের মোবাইল ফোন দুইটি নিয়ে পালিয়ে যায় মর্মে স্বীকার করে।

গ্রেফতারকৃতা আরো জানায়, পরদিন গত ২০ আগস্ট তারা মিন্টু মিয়ার একটি মোবাইল ফোন খুলনা সোনাডাঙ্গা নিউ মার্কেট সংলগ্ন বাইতুন নুর জামে মসজিদ মার্কেটের ৮৬ নং দোকান স্মার্ট মোবাইল শপ এর কর্মচারী আব্দুল্লাহ সানাম খান (২৮) এর নিকট ২০০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে। ঐরাতে তারা আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে মেহেরপুর জেলার গাংনী থানাধীন আসামী রায়হানের খালার বাড়ী কাজীপুর নিমস্মরন পাড়া যায়। সন্ধেহভাজন অভিযুক্তদের উল্লেখিত ঠিকানা থেকে গ্রেফতার কালে তারা জানায় ভিকটিমের ব্যবহৃত অন্য মোবাইল ফোনটি আতাউল সুপার মার্কেটে ২২০ টাকায় বিক্রয় করেছে মর্মে স্বীকার করে।

আসামীদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক মৃত মিন্টু তরফদার এর অপর মোবাইল ফোন NOKIA 105 MODEL NO RM-1134 IMEI-358902078631707 মেহেরপুর জেলা গাংনি থানাধীন বামন্দি বাজারস্থ আতাউল সুপার মার্কেটের সালাম মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার এর মালিক আব্দুস সালাম এর দখল থেকে উদ্ধার পূর্বক জব্দতালিকা মূলে জব্দ করা হয়। সন্ধেহভাজন অভিযুক্ত মোঃ রায়হান বিশ্বাস (১৯) এবং মোঃ আশিকুর রহমান (১৯)। গতকাল সোমবার ২২ আগস্ট পলাশ কুমার দালাল, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, যশোর আদালতে সোপর্দ করা হলে অভিযুক্তরা ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *