পিবিআই কর্তৃক চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গৃহবধু খুনের ৭ বৎসর পর হত্যার রহস্য উদঘাটন, শশুর-শাশুড়ী গ্রেফতার

Uncategorized আইন ও আদালত


নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে শ্বশুড়-শাশুড়ীর হাতে দীর্ঘ ৭ (সাত) বৎসর পূর্বে খুন হওয়া গৃহবধু রুমি আক্তারে হত্যার রহস্য উদঘটাটন সহ ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে নিহতের শ্বশুড়-শাশুড়ী জড়িত থাকায় তাদের গ্রেফতার করে আদালতে চালান করেছে পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা।

ভিকটিমের সাথে ১নং আসামী ইয়াকুব নবীর ছেলে আব্দুল মান্নানের প্রায় ২ বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়।

ভিকটিমের স্বামী বিবাহের ২৫ দিন পর তার কর্মস্থল ওমানে চলিয়া যায়। আব্দুল মান্নান ওমানে যাওয়ার পর হইতে তাহার শ্বশুর-শাশুড়ী ভিকটিমকে বিভিন্নভাবে যন্ত্রনা দিত।

ঘটনার এক মাস পূর্বে ১নং আসামী ইয়াকুব নবী ভিকটিমকে মারধর করিলে ভিকটিমের পিতা ভিকটিমকে শ্বশুড় বাড়ী হইতে নিজ বাড়ীতে নিয়া যায়। পরবর্তীতে মারধর করিবেনা মর্মে ১নং আসামী পুনরায় ভিকটিমকে ফিরিয়া নিয়া আসে।

গত ২২ মে,২০২২তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ৭ টার সময় ভিকটিম রুমি আক্তার (২২) কে পারিবারিক কলহের জেরে ১নং আসামী ইয়াকুব নবী গলা চাপিয়া শ্বাসরোধ করিয়া হত্যা করতঃ উক্ত হত্যাকান্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য গলায় ওড়না পেঁচাইয়া আত্মহত্যার নাটক সাজায়।

এই সংক্রান্তে ভিকটিমের পিতা বাদী হয়ে বাঁশখালী থানার মামলা নং-২৬, তাং-২৪/০৫/২০১৬ ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড আইনে মামলা দায়ের করে। ঘটনার পরপর আসামীরা পলাতক হয়।

বাদীর নারাজীর প্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।

পুলিশ সুপার পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা এর হাওলা মতে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ বাবুল আকতার মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে বিশ্বস্ত গুপ্তচর নিয়োগ এবং আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন।

পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম মামলাটি সুষ্ঠুভাবে তদন্তের লক্ষ্যে সার্বিক দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ বাবুল আকতার এর নেতৃত্বে এবং পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, পিপিএম সেবা এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে গত ১৮ আগস্ট বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বর্ণিত হত্যা মামলার তদন্তে প্রকাশিত এবং হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত এজাহারনামীয় আসামী ইয়াকুব নবী (৬৭), পিতা—মৃত ফয়জার আহাম্মদ ও মোছাম্মৎ খতিজা বেগম(৫৮), স্বামী—ইয়াকুব নবী, উভয় সাং মধ্যম মানিক পাঠান, মধ্যার বাড়ী, ৬নং ওয়ার্ড, কাথারিয়া ইউনিয়ন, থানা—বাঁশখালী, জেলা—চট্টগ্রামদের, চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার চৌধুরীহাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ১৯ আগস্ট আদালতে চালান করা হয়। আসামীদের রিমান্ডের আবেদন করিলে আদালত আসামী ইয়াকুব নবীর ৪ দিন এবং খতিজা বেগমের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রিমান্ডে থাকাকালীন আসামী মোছাম্মৎ খতিজা বেগম উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িত বলে অন্যান্য আসামীদের নাম উল্লেখ করে গতকাল সোমবার ২২ আগস্ট আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। আদালতে প্রদত্ত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ঘটনার দিন শবে বরাতের দিন ছিল।

উক্ত দিন ১নং আসামী ইয়াকুব নবী বাজার হইতে গরুর মাংস, চাল, আটা নিয়ে বাড়ী আসে এবং শবে বরাত উপলক্ষ্যে রান্না করতে বলে। ভিকটিম সহ তাহার শাশুড়ী গ্রেফতারকৃত আসামী খতিজা বেগম রান্না বান্না শেষে তাহার মেয়ে ঝুমুর এর শ্বশুর বাড়ীতে নিয়া যায়।

অধিকাংশ মাংস ও রুটি মেয়ের শ্বশুর বাড়ীতে নিয়া যাওয়ায় ভিকটিম তাহার শাশুড়ীর সাথে অভিমান করিলে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি হয়।

উক্ত ঝগড়া চলাকালীন ১নং আসামী ইয়াকুব বাড়ীতে আসিয়া বউ-শাশুড়ীর ঝগড়া দেখিয়া তাহার ছেলের বউ ভিকটিম রুমা আক্তারকে গলা চাপিয়া ধরিয়া শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

হত্যাকান্ড শেষে হত্যার রহস্য ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে ভিকটিমের পরিহিত ওড়না দ্বারা গলায় পেঁচাইয়া ১নং আসামী ইয়াকুব নবী তার স্ত্রী আসামী খতিজা বেগম ও মেয়ে নিলু আক্তার মিলিয়া ভিকটিমকে বসতঘরের কাঠের বিমের সাথে ঝুলিয়ে রাখে।

আসামীগন পরস্পর যোগসাজসে শোর-চিৎকার করিয়া ভিকটিম নিজেই গলায় ফাঁস দিয়া আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে।
ঘটনার পর মামলা রুজু হওয়ায় গ্রেফতারকৃত আসামীরা দীর্ঘ ৭ (সাত) বৎসর যাবৎ হাটহাজারী এলাকায় আত্মগোপনে থাকে।

উল্লেখিত আসামীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে ভিকটিম রুমি আক্তার (২২) হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটিত হয়। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত পলাতক অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে এবং মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *