অর্থনৈতিক বিশ্লেষক ঃ চীন বাংলাদেশকে ঋন দিচ্ছে ইউয়ানে। বাংলাদেশের রিজার্ভে ইউয়ানের অংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডলারে আস্থা হারানো গ্রিনব্যাক কে বৈশ্বিক শক্তিশালী রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে আরো দুর্বল করবে বলেছিলাম রুশ -ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকে।আমেরিকার সবথেকে বড় ভুল যদি কিছু হয়ে থাকে সেটি হল রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে ডলারকে বিতর্কিত করা। নিরপেক্ষ সুইফট নেটিওয়ার্ক কে অবরোধের অস্ত্র হিসাবে ব্যাবহার করা। যেহেতু এখন বৈশ্বিক লেনদেনের অন্যতম বৃহৎ দেশ চীন, স্বাভাবিকভাবেই ডলারের দুর্বলতা চীনের প্রতি ঝুকতে সাহায্য করবে অনেক দেশকে।
বাংলাদেশের রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে ডলার কমছে। বিজনেস স্টান্ডার্ড এর প্রকাশিত সুত্র মতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইউয়ানের পরিমাণ ২০১৭ সালের ১% এর তুলনায় চলতি বছরের আগস্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৩২%।
মার্কিন ডলারের পরিমাণ ৮১% থেকে কমে ৭৫% এ এসে ঠেকেছে। রিজার্ভে ডলারের অংশ কমেছে একি সাথে বেড়েছে অন্যান্য মুদ্রার পরিমাণ।
ইউরো মুদ্রার মজুদ ২০১৭ সালের ৩.৮৪% থেকে বেড়ে চলতি বছরের আগস্টে ৫% দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে ব্রিটিশ পাউন্ডের অংশ ৩.৪৩% থেকে বেড়ে হয়েছে ৪.৪%।
মোটকথা ডলারের অংশ কমেছে এবং প্রায় সব বিকল্প মুদ্রার অংশ বেড়েছে। ইউয়ান রিজার্ভ এখন প্রায় ৫২৮ মিলিয়ন ডলার সমপরিমান। চীনা ঋনের অধিকাংশ এখন ইউয়ানে। ছাড় ও হচ্ছে ইউয়ানে। ছাড়ের পরিমান বেড়েছে ৭ গুন। ভবিষ্যতে চাইনিজ ফান্ডিং এর অধিকাংশ ইউয়ানে হবে। এতে ডলারের প্রভাব কমবে।
যারা চাইনিজ এম্বাসেডর এর বক্তব্য গুলি ফলো করেন তারা সহজেই বুঝবেন চীন বাংলাদেশকে ইউয়ানে ট্রেডে উৎসাহিত করছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশেই ডলারের অংশ কমেছে। আমেরিকার মিত্র ইজরাইল পর্যন্ত ইউয়ানে রিজার্ভ রাখছে।
চীন ইতোমধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে মূল্য নির্ধারণ এবং লেনদেন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে উভয় দেশের স্থানীয় মুদ্রা, রেনমিনবি এবং টাকা বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পিপলস ব্যাংক অফ চায়নার মধ্যে উভয় মুদ্রা বিনিময় সংক্রান্ত চুক্তি প্রস্তাব করেছে চীন।মুদ্রা বিনিময়ের এই চুক্তি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। সেইসঙ্গে কমাবে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন খরচও।
সারা বিশ্বে রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে ডলারের অংশ ইতোমধ্যে ৬৯% থেকে কমে ৬৩% এ নেমে এসেছে। এই সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে অনেকেই বলেছিলেন সম্ভব নয়। তর্কে যাইনি। তবে মূল বিষয় হল, ডলার রিজার্ভ কারেন্সি হবার কারন ওই সময় অর্থনীতিতে আমেরিকার সমকক্ষ এবং আমেরিকার শত্রুভাবাপন্ন কোন দেশ ছিলনা। বর্তমান পরিস্থিতি ভীন্ন। ডলারের উপর আস্থা কমলে এখন বিকল্প উৎস আছে বিশ্বের প্রায় প্রতিটা দেশের কাচামালের উৎস চীন। অধিকাংশ দেশের বৃহৎ ট্রেড পার্টনার ও চীন। এমনকি আমেরিকাও বিভিন্ন ভাবে চীনের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। এখন চাইলেও ডলারকে ঢাল হিসাবে মাঠে নেমে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। যেহেতু চীনের সাথে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, সেক্ষেত্রে ইউয়ানের উপর নির্ভর করাও কিছুটা ডিপেন্ডেন্সি সৃষ্টি করবে। যদি ইউয়ানে ঋন ছাড় কম হয় সেক্ষেত্রে অন্য মুদ্রায় পরিশোধ করা লাগবে। প্রশ্ন হল, আমাদের এখন স্মার্টভাবে রিজার্ভ কারেন্সি হিসাবে পোর্টফলিওর রেশিও নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
ইকোনমিক জোন গুলিতে চাইনিজ বিনিয়োগ আরো আনা গেলে চীনের ব্যাবসা যেভাবে ভিয়েতনামে হচ্ছে সেভাবে বাংলাদেশেও করা সম্ভব। চীন ইতোমধ্যে ৯৯% পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়েছে। এই সুযোগটাই চাইনিজ ব্যাবসায়ীদের এদেশে বিনিয়োগে টানার জন্য উত্তম হাতিয়ার হতে পারে। চীনের উৎপাদন খরচ বেশি হবার কারনে চীন যেসব পণ্য আমদানি করে সেসব পণ্যের উৎপাদন কারখানা এদেশে করা যেতে পারে। এতে ইউয়ানের যোগান বৃদ্ধি পাবে। এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।