লনিজস্ব প্রতিবেদক ঃ রাজধানী ঢাকা সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন যাবত ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ভূয়া বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে আসছিল।
এই ধরনের আকর্ষনীয় অনলাইন কেনাকাটার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটি চক্র প্রতারনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে বলে জানা যায়। তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের নামে নামী দামী গাড়ীর মূল্য হ্রাস করে অল্প দামে বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন দেয়।
পরবর্তীতে গাড়ী ক্রয়ের জন্য সমাজের বিভিন্ন পেশার আগ্রহী ব্যক্তিরা তাদের সাথে যোগাযোগ করলে গাড়ীর কাগজপত্র দেখিয়ে বিভিন্নভাবে বুকিং, শুল্ক ইত্যাদি পরিশোধের কথা বলে টাকা আদায় করে কিন্তু কোন গাড়ী ডেলিভারী করে না। তারা মূলত সমাজের মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্তদের টার্গেট করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া যায়। এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার ১৪ সেপ্টেম্বর, আনুমানিক সাড়ে ৮ টার সময় র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকা এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে, ডিএমপি ঢাকার গুলশান থানাধীন নিকেতন আবাসিক এলাকার প্লট নং-১০২, রোড নং-০২ ব্লক-এ “মুন অটোমোবাইলস” এর অফিসে অভিযান পরিচালনা করে।
উক্ত অভিযান পরিচালনা কালে প্রতারক চক্রের মূল হোতা মোঃ হারুনুর রউফ খান মজলীস @ মুন (৪২), পিতা- হাফিজ রশিদ খান মজলীস, থানা- গুলশান, ডিএমপি, ঢাকা এবং তার সহযোগী পার্থ বিশ্বাস (২৫), পিতা- স্বাধন চন্দ্র বিশ্বাস, থানা- সদর, জেলাঃ যশোর’কে গ্রেফতার করে। এসময় ধৃত অভিযুক্তদের নিকট হতে বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ভাউচার, প্যাড, সীল ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়।
ধৃত অভিযুক্ত হারুনুর রউফ খান মজলীস’কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ২০১০ সালে রাজধানীর গুলশান, নিকেতন আবাসিক এলাকায় “মুন অটোমোবাইলস্” নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে। পরবর্তীতে সে বহুল প্রচলিত অনলাইন শপ ‘বিক্রয় ডটকম’ ও ‘ফেইস বুক’ ব্যবহার করে তার ব্যবসার প্রসার ঘটায়। সে প্রথমে নামী দামী গাড়ীর মূল্য হ্রাস করে অল্প দামে বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন দেয়।
ক্রেতারা লোভনীয় বিজ্ঞাপনে তার সাথে যোগাযোগ করলে গাড়ীর কাগজপত্র দেখিয়ে গাড়ী পছন্দ করলে গাড়ীর বুকিং বাবদ দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা এবং শুল্ক পরিশোধ বাবদ এক থেকে দুই লক্ষ টাকা দাবী করে এবং বাকী টাকা গাড়ী ডেলিভারীর সময় পরিশোধের চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।
পরবর্তীতে নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ী ডেলিভারী না করায় ক্রেতারা গাড়ীর জন্য চাপ প্রয়োগ করলে ধৃত অভিযুক্ত তার পরিচিত বিভিন্ন গাড়ীর শোরুমে নিয়ে গিয়ে গাড়ী দেখিয়ে আরও সময় ক্ষেপন করে। ক্রেতারা যখন ঐসব শোরুমে গাড়ীর জন্য পুনরায় যোগাযোগ করে তখন শোরুম কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে গাড়ী বিক্রয়ের ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে জানায়। পরবর্তীতে অভিযুক্তকে ফোন দিলে টাকা ফেরত দিতে ২/৩ দিনের সময় নিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দিতে থাকে এবং পরবর্তীতে পুনঃ পুনঃ বাসস্থান ও অফিস পরিবর্তনসহ মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ক্রেতার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ধৃত অভিযুক্ত হারুনুর রউফ খান মজলীস সম্পর্কে আরও জানা যায়, সে মূলত গাড়ী বিক্রির নামে গাড়ীর প্রকৃত মূল্য না দিয়ে কম মূল্যে বিক্রয় ডটকমে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন মানুষের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই তার পেশা। সে দীর্ঘদিন যাবত সাধারন মানুষকে বিভিন্ন লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারনাপূর্বক কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মর্মে স্বীকার করে।
উক্ত ধৃত অভিযুক্ত হারুনুর রউফ খান মজলীস প্রতারণার সাথে জড়িত আছে মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।